ছ’দিন আগে সদস্য সংখ্যা ছাপিয়ে গিয়েছিল ৮ কোটি। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ দলের কর্মীদের একপ্রস্ত অভিনন্দন জানিয়েছিলেন সে দিন। সদস্য সংখ্যার হিসেবে তখনও চিনের কমিউনিস্ট পার্টির থেকে কিছুটা পিছিয়ে ছিল বিজেপি। দলের তরফে বলা হয়েছিল, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল এখন তারাই।
এক সপ্তাহও পার হয়নি। এ বার বিজেপি সূত্রে দাবি, চিনের কমিউনিস্ট পার্টিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে তারা। সব কিছু ঠিক থাকলে এই সপ্তাহেই বিজেপি ঘোষণা করতে পারে, সদস্য সংখ্যার নিরিখে তারাই এখন বিশ্বের সবথেকে বড় দল। সদস্য সংখ্যা ছুঁয়েছে ৮ কোটি ৮০ লক্ষের কাছাকাছি। দেশ থেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় দফতরে এই সংখ্যাই এসেছে। এত দিন সদস্য সংখ্যার হিসেবে বিশ্বের বৃহত্তম দল হিসেবে পরিচিত ছিল চিনের কমিউনিস্ট পার্টি। তাদের সদস্য ৮ কোটি ৬৭ লক্ষ।
গত নভেম্বরে নরেন্দ্র মোদীকে দলের প্রথম সদস্য করিয়ে যে অভিযান শুরু হয়, তা শেষ হতে এখনও দু’দিন বাকি। বিজেপি সূত্রের মতে, তার পরেই এই সংখ্যা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করতে পারে দল। এই সপ্তাহের শেষে বেঙ্গালুরুতে দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে এটি ঘোষণা করবেন সভাপতি অমিত শাহ। তবে নিজেদের বৃহত্তম দল হিসেবে ঘোষণার আগে বিজেপি নেতারা সতর্ক থাকতে চাইছেন। কারণ, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সদস্য সংগ্রহ নিয়ে অভিযোগ আসছে। গত নভেম্বরে অভিযান শুরুর সময়ে একটি টোল-ফ্রি নম্বর দেওয়া হয়। যেখানে মিসড কল দিলেই মোবাইলের ইনবক্সে বিজেপির প্রাথমিক সদস্যের ক্রমিক সংখ্যা চলে আসবে। নিয়ম ছিল, সেই ব্যক্তিকে তাঁর নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ভোটার পরিচয়পত্রের নম্বর লিখে পাঠাতে হবে। তার ভিত্তিতে স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের পাঠানো হবে সেই ব্যক্তির বাড়ি। যাচাই করা হবে, আদৌ তিনি বিজেপির সদস্য হতে আগ্রহী কি না। কিন্তু বিজেপি নেতারা কবুল করছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই যাচাইয়ের কাজটি হয়নি। উল্টে জোর করে সদস্য বানিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এসেছে নানা প্রান্ত থেকে। কারও কারও দাবি, অচেনা নম্বর থেকে আসা একটি ফোন ধরার পরেই ‘আপনি বিজেপির সদস্য হলেন’ বলে এসএমএস পেয়েছেন তাঁরা। তাই এ মাসের ৩১শে অভিযান শেষ হওয়ার পরে যাবতীয় বিষয় যাচাই করে দল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করতে চাইছে। পাছে এমন না হয়, এখন যে সংখ্যা ঘোষণা হল, পরে সেটি কমে না যায়।
এর আগে লোকসভা নির্বাচনের সময় থ্রি-ডি প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ও সশরীরে প্রায় ১৮০০ জনসভা করে রেকর্ড গড়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। জনধন প্রকল্পে মাত্র পাঁচ মাসে সাড়ে এগারো কোটি মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেও তৈরি হয়েছে রেকর্ড। এ বারে দলের সদস্য সংখ্যাতেও বাজিমাত করতে চান মোদী-শাহ জুটি। এই রেকর্ড গড়ার পিছনে মোদীর লক্ষ্য ছিল, সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছনো। সেই লক্ষ্যেই সদস্য বাড়াতে বিশেষ জোর দিয়েছেন অমিত শাহ। এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে উত্তরপ্রদেশে সব থেকে বেশি সদস্য হয়েছেন, অন্তত দেড় কোটি।
দলের সূত্রের বক্তব্য, সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরুর প্রথম ষোলো দিনে ৪ কোটি সদস্য হয়েছিল। পরের ১ কোটি বাড়তে আরও আঠারো দিন লেগে যায়। মোট ৬ কোটি হতে আরও ২১ দিন। কিন্তু শেষ দিকে এই হার আরও বেড়েছে। পনেরো দিনে আরও ১ কোটি হয়। ৮ কোটি ছুঁতে লেগেছে আর মাত্র আট দিন। সদস্য সংগ্রহ অভিযানের আগে বিজেপির সদস্য সংখ্যা ছিল সাড়ে তিন কোটির মতো। ৩১ মার্চের মধ্যে তা বাড়িয়ে ১০ কোটি ছোঁয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়। কিন্তু সেটি ন’কোটির আশপাশেই থেমে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। গত লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সদস্য ছিলেন ১ লক্ষ ২৫ হাজারের মতো। আজকের হিসেবে সেটি ৩৬ লক্ষ পার হয়েছে।
বিভিন্ন রাজ্যে বিরোধীরা অবশ্য সদস্য সংখ্যা নিয়ে বিজেপির দাবি নস্যাৎ করছে। তাদের বক্তব্য, বিজেপি-শাসিত গোয়াতেই সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির যত জন সদস্য হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে, তার সিকিভাগ ভোটই পায়নি দল। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপির দাবি যে মিথ্যা, সেটি প্রমাণ হতে শুরু করেছে। কিন্তু বিজেপির সাংসদ কীর্তি আজাদ বলেন, “আমরা যখন সব নাম সামনে নিয়ে আসব, তখন যাবতীয় অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণ হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy