ফেসবুক-তথ্য ফাঁস কাণ্ডে প্রবল রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়ে গেল বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে। —ফাইল চিত্র।
ফেসবুক থেকে তথ্য ফাঁসের অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তাল ভারতের রাজনীতি। ব্রিটিশ সংস্থা কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা-কে বিপুল সংখ্যক ইউজারের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়েছে ফেসবুক। অভিযোগ তেমনই। সেই কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে কংগ্রেস, দাবি কেন্দ্রীয় আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের। কংগ্রেসের পাল্টা দাবি, বিজেপি এবং তার শরিক দলই ‘চোরাই তথ্য’ কাজে লাগিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল, কংগ্রেস নয়।
ভারতের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাইরে থেকে প্রভাবিত করার কোনও চেষ্টা সরকার বরদাস্ত করবে না। বুধবার আইন মন্ত্রী এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। প্রয়োজনে ফেসবুক সিইও মার্ক জুকেরবার্গকে তলব করা হতে পারে ভারতে, এমন মন্তব্যও করেছেন রবিশঙ্কর প্রসাদ।
প্রায় ৫ কোটি ফেসবুক ইউজারের ব্যক্তিগত তথ্য কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার হাতে পৌঁছেছে বলে বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে সেই সব তথ্যকে কাজে লাগিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত আমেরিকা। কিন্তু তথ্য ফাঁসের আঁচ শুধু আমেরিকায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। ভারতেও একই রকম উত্তাপ টের পাওয়া যাচ্ছে। কারণ ভারতের একটি রাজনৈতিক দল কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে কাজ করেছে বলে মার্কিন মিডিয়া সূত্রের খবর।
এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই হইচই শুরু হয় দেশের রাজনৈতিক শিবিরে। আইন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ সাংবাদিক বৈঠক করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেন। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছ থেকে তথ্য নিয়েছে কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: ‘এমন ঘটনা দেশ আগে দেখেনি’, বিশৃঙ্খলায় বিরক্ত স্পিকার
আইন মন্ত্রীর অভিযোগের জবাব দিতে দ্রুত আসরে নামে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেন, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও যোগ নেই। ২০১০ সালে বিজেপি এবং জেডি(ইউ) ওই সংস্থার কাছ থেকে তথ্য নিয়েছিল বলে সুরজেওয়ালা অভিযোগ করেন।
বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর চরমে পৌঁছেছে। ভারত সরকারের তরফে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অত্যন্ত কঠোর সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইউজারদের তথ্য বেহাতের অভিযোগ, ঘোর বিপাকে ফেসবুক
‘‘খুব স্পষ্ট করে জেনে নিন, মত প্রকাশের, কথা বলার এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে আমরা সম্পূর্ণ রূপে সমর্থন করি। সোশ্যাল মিডিয়ায় মতামতের স্বাধীন আদান-প্রদানকেও আমরা সমর্থন করি। কিন্তু ফেসবুক বা অন্য কোনও কোনও সোশ্যাল মিডিয়ার তরফে ভারতের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অনাকাঙ্খিত উপায়ে প্রভাবিত করার কোনও গোপন বা প্রকাশ্য চেষ্টাকে ভাল চোখে দেখা হবে না, বরদাস্তও করা হবে না।’’ আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী এমন কড়া বয়ানই দিয়েছেন এ দিন। প্রয়োজন পড়লে ফেসবুকের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ফেসবুক সিইও মার্ক জুকেরবার্গের প্রতি রবিশঙ্কর প্রসাদের সতর্কবার্তা, ‘‘মার্ক জুকেরবার্গ, যদি আপনি বুঝে নিতে পারেন যে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী কী বলছেন, তা হলেই ভাল। আমরা ফেসবুককে স্বাগতই জানাই, কিন্তু ফেসবুক সংক্রান্ত যোগসাজসের জেরে যদি ভারতীয়দের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি যায়, তা হলে আমরা সহ্য করব না। আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি আইন অত্যন্ত কঠোর, আমরা তা প্রয়োগ করব, এমনকী আপনাকে ভারতে তলবও করা হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy