Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ভতুর্কি কমানোর কমিশনে মাথা বিমল জালান

নরেন্দ্র মোদী জমানার প্রথম বাজেট পেশ হওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছিল, কেন আরও শক্ত হাতে ভর্তুকি কমানোর সাহস দেখাল না নতুন সরকার। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তখন জানান, সরকারের বিপুল ব্যয়ের বোঝা এবং জ্বালানি, খাদ্য ও সারের ভর্তুকি কী ভাবে কমানো যায়, খতিয়ে দেখতে বিশেষ কমিশন তৈরি হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৫১
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদী জমানার প্রথম বাজেট পেশ হওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছিল, কেন আরও শক্ত হাতে ভর্তুকি কমানোর সাহস দেখাল না নতুন সরকার। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তখন জানান, সরকারের বিপুল ব্যয়ের বোঝা এবং জ্বালানি, খাদ্য ও সারের ভর্তুকি কী ভাবে কমানো যায়, খতিয়ে দেখতে বিশেষ কমিশন তৈরি হবে।

সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আজ বিমল জালানের নেতৃত্বে ‘ব্যয় সঙ্কোচ কমিশন’ তৈরির কথা ঘোষণা করেছে অর্থ মন্ত্রক। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গর্ভনর জালান ছাড়াও কমিশনের অন্য দুই সদস্য হলেন প্রাক্তন অর্থসচিব সুমিত বসু এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর সুবীর গোকর্ণ। অর্থ মন্ত্রকের ব্যয় দফতরের অতিরিক্ত সচিবও কমিশনের সদস্য। আগামী বছরের বাজেটের আগে কমিশন অন্তর্বর্তী রিপোর্ট দেবে বলে আশা অর্থমন্ত্রকের। ২০১৬-’১৭ সালের বাজেটের আগে কমিশনকে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কমিশনকে ঠিক কোন দিক খতিয়ে দেখতে বলা হবে, তা ক’দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে বলে অর্থমন্ত্রকের বক্তব্য।

ভর্তুকির বহর কমানোর পাকাপাকি ব্যবস্থা হিসেবে আধার কার্ড ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নগদ ভর্তুকি দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করে মনমোহন-সরকারও। যাতে শুধু মাত্র যাঁদের প্রয়োজন, তাঁদের কাছেই ভর্তুকি পৌঁছয় ও তার অপচয় না হয়। মনমোহন জমানার সেই ব্যবস্থা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন সরকার। কিন্তু বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতে আসা মোদী সরকার বাজেটে ভর্তুকি কমিয়ে অর্থনীতির প্রয়োজনে তেতো দাওয়াই দেবেন বলে আশা তৈরি হলেও তা পূরণ হয়নি। ফলে শিল্পমহলেও হতাশা তৈরি হয়েছিল।

শিল্পমহল ও অর্থনীতিবিদদের আর একটি আশা ছিল, সরকারি ব্যয় কমাতে মোদী কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের সংখ্যা কমাবেন। ‘মিনিমাম গভর্নমেন্ট, ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স’-এর সূত্র মেনে একই ধরনের মন্ত্রকগুলিকে মিশিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, মোদী একই মন্ত্রীর ঘাড়ে একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্ব চাপিয়েছেন। মন্ত্রকগুলি মিশিয়ে দিয়ে সরকারি ব্যয় ছাঁটাইয়ের রাস্তা খোঁজা হয়নি।

অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন, ব্যয় সঙ্কোচ কমিশনকে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি এই দিকটিও খতিয়ে দেখতে বলা হবে। ভর্তুকি দেওয়ার ক্ষেত্রে কী ভাবে আরও উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো যায়, কী ভাবে তা শুধু মাত্র গরিব মানুষের হাতে তুলে দেওয়া যায়, তা-ও খতিয়ে দেখতে বলা হবে জালানকে।

চলতি অর্থবর্ষে খাদ্য, জ্বালানি ও সারের জন্য ভর্তুকি বাবদ ২ লক্ষ ৫১ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে অনুমান। যার মধ্যে সারের ভর্তুকি বাবদই খরচ হবে ৭২ হাজার ৯৭০ কোটি। খাদ্যে ভর্তুকি বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি। জেটলি বাজেটে জানান, নতুন ‘ইউরিয়া’ নীতি তৈরি হবে। গরিব, প্রান্তিক এবং তফসিলি জাতি-উপজাতির মানুষের কাছে ভর্তুকি পৌঁছনোর ব্যবস্থা হবে। বিমল জালানের নেতৃত্বাধীন কমিশন এই সব বিষয় দেখে ব্যয় কমানোর দীর্ঘমেয়াদি পথ দেখাবে।

এর আগে অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় তৈরি ব্যয় সঙ্কোচ কমিশনের প্রধান ছিলেন প্রাক্তন অর্থসচিব কে পি গীতিকাকৃষ্ণন। ওই কমিশনও কেন্দ্রের প্রশাসনিক মেদ কমাতে কিছু সরকারি মন্ত্রক ও দফতর তুলে দেওয়া বা অন্য দফতরের সঙ্গে মেশানোর সুপারিশ করেছিল। কিছু সুপারিশ কার্যকরও হলেও অধিকাংশই হিমঘরে চলে যায়।

মনমোহন জমানাতেও ঘাটতি কমানোর রাস্তা খুঁজতে তৈরি হয় বিজয় কেলকার কমিটি। ওই কমিটিই ধাপে ধাপে অল্প পরিমাণে ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করে। তা মেনেই প্রতি মাসে অল্প করে ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। যাতে একটা সময়ের পরে ভর্তুকির পরিমাণ শূন্যে নেমে আসে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE