বিলকিস মামলায় দোষীদের মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গুজরাতের বিজেপি সরকার। সুপ্রিম কোর্ট তা অনুমোদন করেছিল। ফাইল চিত্র।
বিলকিস বানোর আর্জি মেনে ১১ জন ধর্ষক ও খুনির সাজার মেয়াদ শেষের আগেই মুক্তির পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখতে নতুন বেঞ্চ গড়ল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন এই বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা। প্রধান বিচারপতি বুধবার এই ঘোষণা করে বলেন, ‘‘নতুন বেঞ্চ গড়া হয়েছে। আজ বিকেলেই মামলার শুনানি শুরু হবে।’’
বিলকিসের পক্ষে মামলার শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন আইনজীবী শোভা গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘শীর্ষ আদালত ১১ অপরাধীর মুক্তির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার শুনানিতে সম্মতি দেওয়ায় আমরা খুশি।’’ প্রসঙ্গত, গত ১৭ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দেবগড় বারিয়া মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনের মেয়াদ শেষের আগে মুক্তি পুনর্বিবেচনার দাবি খারিজ করে দিয়েছিল। এর পর ওই অপরাধীদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, সিপিএম নেত্রী সুহাসিনী আলি, সাংবাদিক রেবতী লউল, লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য রূপরেখা বর্মারা।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ অগস্ট ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে বিলকিসকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত সরকার। তার আগে, মুক্তির জন্য শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন ওই ধর্ষণের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীরা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে গুজরাত সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল আদালত। বিজেপি শাসিত গুজরাত সরকার ১১ অপরাধীর মুক্তির পক্ষে সওয়াল করে। এর পরই ১১ জনকে ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় শীর্ষ আদলত। মুক্তির পর স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব ওই অপরাধীদের সংবর্ধনা দিয়েছিল বলে অভিযোগ।
এর পর বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় দেশ জুড়ে। কেন মেয়াদ শেষের আগে ১১ জন ধর্ষক ও খুনিকে ছাড়া হল, এ নিয়ে বিতর্ক বাধে। বিতর্কের মধ্যেই গুজরাত সরকার জানায় যে, জেলে ওই ১১ জন ধর্ষক ও খুনি ‘ভাল আচরণ’ করেছেন, সে কারণেই তাঁদের সাজার মেয়াদ কমানো হয়েছে। যদিও প্রতিপক্ষ দাবি করে, ওই ১১ জন বিভিন্ন সময় প্যারোলে মুক্তি পেয়ে যখন জেলের বাইরে ছিলেন, তখনও তাঁদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছিল।
২০০২ সালে গোধরাকাণ্ডের পর গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসা চলাকালীন ৩ মে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে হামলা চালানো হয়। গ্রামের বাসিন্দা ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে মারে হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। তাঁর পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত। মামলা চলাকালীন এক জনের মৃত্যু হয়। গত ১৫ অগস্ট ওই ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়।
গুজরাত সরকার ১১ জন ধর্ষকের জেলের ভিতরে ‘ভাল আচরণের’ দাবি করলেও সরকারি তথ্য ‘অন্য কথা’ বলছে বলে অভিযোগ। ওই ১১ জন যখন বিভিন্ন সময় প্যারোলে জেলের বাইরে ছিল, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। দু’জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। দু’জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জমা পড়েছে। ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই বিভিন্ন সময়ে প্যারোলের নিয়মভঙ্গ করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy