বেলজিয়ামের বিচার মন্ত্রক নিশ্চিত করেছে, ঋণখেলাপি মামলায় অভিযুক্ত এবং ভারত থেকে পলাতক হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসীকে তারাই গ্রেফতার করেছে। ভারতের তরফে প্রত্যর্পণের আবেদনও পেয়েছে তারা। তবে এর আগেও ‘গীতাঞ্জলি’-র কর্ণধার চোকসী গ্রেফতার হয়েছিলেন। সেটা ছিল ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে অবৈধ ভাবে প্রবেশের জন্য। তখন ১৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা ঋণখেলাপিতে অভিযুক্ত অভিযোগ করেন, ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র অ্যান্টিগা ও বারবুডা ছাড়তে তাঁকে বাধ্য করেছিলেন ভারতের তদন্তকারীরা। তাঁর উপর অত্যাচার হয়েছিল। তাঁকে অপহরণ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে। আর সেই মামলায় উঠে আসে এক ‘রহস্যময়ী’র নাম। চোকসী বলে থাকেন, তাঁকে ফাঁদে ফেলেছেন ওই মহিলা। আর সেই ‘রহস্যময়ী’র দাবি, তিনি আসলে চোকসীর বান্ধবী।
২০২১ সালে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে গ্রেফতার হন চোকসী। তাঁর দাবি ছিল, তাঁকে অ্যান্টিগায় অপহরণ করা হয়। সেখানে শারীরিক অত্যাচার করা হয়। তার পরে একটি নৌকা করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে। ওই ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন এক হাঙ্গেরীয় যুবতী। চোকসী মধুচক্রের ফাঁদে পড়ে গ্রেফতার হন। বস্তুত, ২০১৮ সালে ভারত থেকে পালিয়ে অ্যান্টিগা যান চোকসী। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নাগরিকত্বের আবেদন করেন। তার তিন বছর পর ২০২১ সালে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে অনুপ্রবেশের অভিযোগে পাকড়াও হন। তাঁর অপহরণ এবং অত্যাচারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে যে যুবতীর কথা উঠে আসে, তাঁর নাম বারবারা জাবারিকা। হাঙ্গেরির ওই যুবতীর বিরুদ্ধে মধুচক্রের ফাঁদ তৈরির অভিযোগ ওঠে। যদিও সেই যুবতী অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জানান, তিনি চোকসীর বিশেষ বান্ধবী ছিলেন। সংবাদমাধ্যমকে বারবারা বলেন, ‘‘আমার নিজের কোম্পানি রয়েছে। নিজস্ব ব্যবসা এবং আয় আছে। আমার এ সব করে অর্থ রোজগারের প্রয়োজন নেই। ওঁর (চোকসী) কাছ থেকে ব্যবসায়িক বা আর্থিক সাহায্য, সমর্থনের প্রত্যাশা করিনি।’’
যদিও চোকসীর ‘বান্ধবী’ হিরে ব্যবসায়ীকে চিনতেন রাজ নামে। তাঁর দাবি, ২০২০ সালে তাঁর সঙ্গে যেচে আলাপ করেন রাজ (মেহুল চোকসী)। তাঁর মোবাইল নম্বর চান। বন্ধুত্ব দাবি করেন। এর পর তাঁদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। বারবারার দাবি অনুযায়ী, তাঁকে একবার কিউবায় দেখা করতে বলেছিলেন চোকসী। হিরে ব্যবসায়ী জানিয়েছিলেন, পাকাপাকি ভাবে কিউবাতেই থাকবেন তিনি।
আরও পড়ুন:
চোকসী ওই দাবি উড়িয়ে পাল্টা জানিয়েছিলেন, বারবারা তাঁরা বান্ধবী নন। বরং বারবারারর ব্যবহারে নাকি তিনি পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারেন যে, তাঁকে একটি অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনার অংশ করা হয়েছে। এবং ওই হাঙ্গেরীয় যুবতী সেই পরিকল্পনামাফিক কাজ করেছেন। চোকসীর পাশে দাঁড়ান তাঁর স্ত্রী প্রীতি। তাঁর দাবি, স্বামীর কোনও বিশেষ বান্ধবী ছিলেন না। তাঁকে গ্রেফতার করতে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল।
সে বার ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে ৫১ দিন জেল খেটেছিলেন পিএনবি-র ঋণখেলাপি মামলার অভিযুক্ত চোকসী। ছাড়া পেয়ে ফিরে যান অ্যান্টিগায়। ২০২৩ সালের মার্চে ইন্টারপোল তাঁর বিরুদ্ধে রেড নোটিসের কথা জানতে পারে। রেড নোটিস হল সারা বিশ্বের তদন্তকারী সংস্থার কাছে প্রত্যর্পণ বা আত্মসমর্পণের অপেক্ষায় থাকা কোনও ব্যক্তিকে খুঁজে বার করে সাময়িক ভাবে গ্রেফতার করার অনুরোধ। সিবিআই জানিয়েছিল, চোকসী নানা কাল্পনিক গল্প বলে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘটনাক্রমে গত বছর সিবিআই জানতে পারে চোকসীর বর্তমান ঠিকানা বেলজিয়াম। হিরে ব্যবসায়ীকে ধরতে তারা আবার সক্রিয় হয়। এর পর শনিবার বেলজিয়ামের পুলিশ চোকসীকে গ্রেফতার করেছে। জানা যাচ্ছে, বেলজিয়াম থেকে সুইৎজারল্যান্ড পালানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তাঁর আইনজীবীদের অবশ্য দাবি, ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে সুইৎজ়ারল্যান্ড যাচ্ছিলেন চোকসী।