আগামী ১৯ মে ভাষা শহিদ দিবস পালনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে বরাক উপত্যকায়। উধারবন্দে ১৬ মে উদ্বোধন হবে ভাশা-শহিদ স্মারকসৌধের। ১৭ মে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের ডাকে ‘উনিশের পথ চলা’। পরে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের নানা অনুষ্ঠান। ১৮ মে-র মূল অনুষ্ঠান ‘ভাষাশহিদ স্টেশন ভাষাশহিদ স্মরণ সমিতি’র আয়োজনে। ‘উনিশের ডাক’ নামে একটি সিডি প্রকাশ করা হবে সে দিন।
১৯৬১ সালের ১৯ মে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় বরাকের ১১ জন তরুণ-তরুণী প্রাণ দিলেও বরাক উপত্যকার বাইরের বাঙালিদের কাছে সেই ইতিহাস আজও ঠিক ভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়নি। সেই আক্ষেপ থেকেই বিভিন্ন অঞ্চলের বাঙালিদের নিয়ে একটি অডিও সিডি প্রকাশ করছে ভাষাশহিদ স্টেশন ভাষাশহিদ স্মরণ সমিতি। সঙ্গে দোহার। এই অডিও সিডি-তে গান-কবিতা-গদ্য পরিবেশন করেছেন শঙ্খ ঘোষ, জয় গোস্বামী, রণজিত্ দাশ, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, শ্রীকান্ত আচার্য, গোলাম ফকির, শ্রাবণী সেন, লোপামুদ্রা মিত্র, গৌতম ঘোষ, দেবশংকর হালদার, শুভপ্রসাদ নন্দীমজুমদার, অনিন্দিতা কাজি, হাসান আরিফ ও আনন্দময়ী ভট্টাচার্য। পরিকল্পনা ও পরিচালনায় কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য।
স্মরণ সমিতির সভাপতি বাবুল হোড় এবং সাধারণ সম্পাদক রাজীব কর জানিয়েছেন, ১৪ মে থেকে স্থানে স্থানে এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হবে। প্রথম অনুষ্ঠান কলকাতায়। ১৪ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ‘উনিশের ডাক’-এর প্রকাশ করা হবে। কালিকাপ্রসাদ আশা করছেন, সিডি-তে যারা অংশ নিয়েছেন তাঁরা সবাই সে সন্ধ্যায় উপস্থিত থাকবেন।
১৮ মে সন্ধ্যা ৫টা ১৫ মিনিটে শিলচরে ভাষাশহিদ স্টেশন ভাষাশহিদ স্মরণ সমিতির মঞ্চে সিডি-র আবরণ উন্মোচন করবেন লোক-গবেষক অমলেন্দু ভট্টাচার্য। থাকবেন ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ’-এর সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, শিলচর সঙ্গীত বিদ্যালয়ের প্রধান আনন্দময়ী ভট্টাচার্য ও পরিমল দে। দুই জায়গাতেই কালিকাপ্রসাদ নিজে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন। মাটির গান শোনাবেন তাঁর দোহারের শিল্পীরা। ১৯ মে ভাষাশহিদ দিবসে দিল্লি এবং ঢাকাতে সিডি উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বাবুল-রাজীবের বিশ্বাস, সিডি-তে যাঁদের গান-কবিতা-গদ্য রয়েছে, তাঁদের মধ্যে দিয়েই এ বার উনিশের ডাক ছড়িয়ে পড়বে। শ্রোতারা জানবেন বরাকের উনিশকে।
‘ভাষাশহিদ স্টেশন ভাষাশহিদ স্মরণ সমিতি’ প্রতি বছর উনিশে মে থেকে তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ বারও প্রথম দিনেই সিডি প্রকাশের অনুষ্ঠান। সঙ্গে মাতৃভাষা, রাষ্ট্রভাষা এবং রাষ্ট্র বিষয়ে আলোচনা। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১৯ মে শহিদ স্মারকে মাল্যদান শুরু হবে সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে। সকাল ১১টায় মাতৃভাষা উত্সব। উদ্বোধক গোপাল সিংহ। ১৯৬১-তে গুলিচালনার প্রতিবাদে বিধানসভার সদস্য পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন তাঁর বাবা নন্দকিশোর সিংহ। বাঙালি ছাড়াও ডিমাসা, নেপালি, বিষ্ণুপ্রিয়া, মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া, হিন্দি, মার, সাঁওতালি, নাগা, রিয়াং এবং অসমিয়া শিল্পীরা মাতৃভাষায় নিজেদের গান-বাজনা পরিবেশন করবেন। সন্ধ্যায় শহিদ বেদীতে প্রদীপ জ্বালবেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমনাথ দাশগুপ্ত। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবেন ভারত এবং বাংলাদেশের শিল্পীরা। ২০ মে দুপুরের অনুষ্ঠান পরিচালনায় রয়েছে আর্য সংস্কৃতি বোধনী সমিতি। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা কমিটির সম্পাদক পরিতোষ দে জানান, ১৭ মে সন্ধ্যা ছ’টায় বঙ্গভবনে ‘উনিশের আবাহন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে বক্তব্য রাখবেন ত্রিপুরার ভাষাগবেষক আশিসকুমার বৈদ্য। সেই অনুষ্ঠানে দুই ভাষা-সেনানী আলো পালচৌধুরী ও ছায়ারানি দেবকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। পরে ‘শিকড়ের সন্ধানে’ নামে নাটক পরিবেশন করবে দশরূপক নাট্য সংস্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy