জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকে (এনআরসি) ঘিরে আইন অমান্য আন্দোলনের জোর তত্পরতা শুরু হয়েছে বরাক উপত্যকায়। গ্রামেগঞ্জে পথসভা করছেন নাগরিকত্ব সুরক্ষা সংগ্রাম কমিটির কর্মকর্তারা। শহরে চলছে দিন-রাত প্রচার।
পাঁচদফা দাবিতে করিমগঞ্জে ২১ মে, শিলচরে ২২ মে এবং হাইলাকান্দিতে ২৫ মে আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সংগ্রাম কমিটি।
নাগরিকত্ব সুরক্ষা সংগ্রাম কমিটির দুই আহ্বায়ক শশাঙ্কশেখর পাল ও প্রদীপকুমার দেব বলেন, শিলচরে ১৬ মে এই কর্মসূচি পালনের কথা ছিল। বাবুল গোয়ালা নামে এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যুর পরবর্তী পরিস্থিতিতে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। এখন হবে ২২মে।
এনআরসি ইস্যুতে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন।
প্রথমত, সারা দেশের সঙ্গে একযোগে অসমে এনআরসি-র কাজ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, এনআরসি তৈরির আগে ডি-ভোটার বা ডাউটফুল ভোটার সমস্যার সমাধান করা করতে হবে।
তৃতীয়ত, নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য যে কোনও সরকারি নথি বা দলিল গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থত, আইনশাস্ত্রে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ (সারকামস্টেনশিয়াল অভিডেন্স) বলে যে বিধান রয়েছে, এ ক্ষেত্রেও তাও গণ্য করতে হবে।
পঞ্চমত, এনআরসি নবীকরণের আগে শরণার্থী সমস্যার সমাধান করতে হবে।
তাঁদের কথায়, ডি-ভোটার শব্দের অর্থই হল, এঁরা বিদেশি কিনা সরকার সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। তাই তাঁদের বাদ দিয়ে এনআরসি তৈরি হলে বহু প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক বাদ পড়ে যাবে। এ ছাড়া কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি বলাবলি করছে, ১৯৭১-র পর বাংলাদেশ থেকে এলেও হিন্দু বাঙালিদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নেরও আশ্বাস দিচ্ছেন তাঁরা।
প্রদীপবাবুদের বক্তব্য, তাই যদি হয়, তবে শরণার্থী সমস্যার সমাধান করেই এনআরসি-র কাজ শুরু হোক। নইলে অনেকের কাগজপত্র নিয়ে দৌড়ঝাঁপ অহেতুক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। সরকারও তাদের কাগজপত্র পরীক্ষার নামে অপ্রয়োজনে সময় ও শ্রম ব্যয় করবে।
বিজেপি সরকার শেষ পর্যন্ত এই ধরনের আইন প্রণয়ন করে কিনা, সংগ্রাম কমিটির কর্মকর্তারা অবশ্য সে নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।
তাঁদের আশঙ্কা, ভোটসর্বস্ব দলগুলি ভোট ব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে। এমন আশঙ্কার কারণ হিসেবে তাঁরা উল্লেখ করেন, ২০০১ সালের বিধানসভা নিবার্চনের আগে তখনকার প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী একই কথা বলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত কিছুই করা হয়নি।
এখন বিমলাংশু রায় ফাউন্ডেশন এবং স্বজন নামে দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট চার বার কেন্দ্রের অবস্থান জানতে চেয়েছে। কিন্তু তারা এখনও হলফনামা জমা দিচ্ছে না।
এনআরসি নবীকরণের নামে অসমে নাগরিকত্বের অধিকার খর্ব করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন প্রদীপবাবু। তিনি বলেন, ভারতের নাগরিত্ব আইনে জন্মসূত্রে ও বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্বের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এনআরসি নবীকরণের শর্ত হিসেবে বিবাহিতাদের বাপ-ঠাকুর্দার কাগজ দেখাতে বলা হয়েছে।
একই ভাবে ১৯৭১ সালের আগের কাগজপত্র নেই, কিন্তু পরবর্তী সময়ে যাঁরা ভারতে জন্ম নিয়েছেন, তাঁদের নাগরিকত্বের কথাও এনআরসি-র নিয়মনীতিতে উল্লেখ নেই।
সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ও ১৯৬১-র ভাষাসংগ্রামের প্রধান পরিতোষ পালচৌধুরী, অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা নির্মলকুমার দাস, ইয়ুথ এগেনস্ট ইভিল-এর প্রধান সঞ্জীব রায়ও সংগ্রাম কমিটির আইন অমান্য আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy