ভক্তবৃন্দ: খুলল শবরীমালা মন্দির। ঋতুযোগ্য মহিলারা এখনও ব্রাত্যই। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
বিক্ষোভের স্লোগান আর দেবতার মন্ত্র প্রায় এক।
শুক্রবার বিকেলে কোচি বিমানবন্দর থেকে বাইরে আসতেই টিভি ক্যামেরার ভিড়। গেটের সামনে কাতারে কাতারে লোকের স্লোগান। ‘শরণং আয়াপ্পা’ গোছের আধা-মলয়ালম, আধা-সংস্কৃত ভাষায় কী বলছেন, বোঝাও যাচ্ছে না। তবে উত্তেজিত জনতার ভাবভঙ্গি বুঝতে এই ভারতে অসুবিধে হয় না।
শোনা গেল, ভিতরের লাউঞ্জে সকাল থেকে বসে আছেন ত্রুপ্তি দেশাই। মহারাষ্ট্রের শনি শিগনাপুর মন্দির থেকে হাজি আলির দরগা, সর্বত্র মেয়েদের ঢুকতে দেওয়ার দাবিতে তিনি আন্দোলন করেন, মামলায় জিতে মেয়েদের প্রবেশাধিকারও এনে দেন। মুম্বই থেকে এখানে এসে তিনি আজ সকাল থেকে বিমানবন্দরে বসে। দিন তিনেক আগেই কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, মন্দির খুললেই তিনি শবরীমালা দর্শনে যাবেন। ভরসা ছিল, সরকার তাঁকে নিরাপত্তা দেবে।
আরও পড়ুন: যে ভাবে হোক শবরীমালায় যাবই, খুনের হুমকি পেয়েও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই মহিলা
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টাই ছিল মন্দির খোলার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ‘মকর ভিলুক্কু’ বা মকর উৎসব উৎসব উপলক্ষে আজ থেকে আগামী ২০ জানুয়ারি অবধি মন্দির খোলা। এই সময়েই শবরীমালার পাহাড় ছেড়ে বালক দেবতা আয়াপ্পন স্বর্গে চলে গিয়েছিলেন। এটি অধুনা-বিতর্কিত মন্দিরের সব চেয়ে বড় উৎসব।
বিমানবন্দরের গেট থেকে বেরোতে বেরোতে লোককে জিজ্ঞেস করে স্লোগানের মর্মোদ্ধার করা গেল। ‘স্বামীয়ে শরণং আয়াপ্পা’। যে মন্ত্র বলে মানুষ মন্দিরে যায়, সেই মন্ত্র উচ্চারণ করেই বিমানবন্দরে বিক্ষোভ দেখায়।
ঘটনাচক্রে, বিমানবন্দরের পাশেই কোচি গ্রামীণ থানা। সেখানে ঢুকে শবরীমালার রাস্তায় গোলমাল আছে কি না, জিজ্ঞেস করতেই ওসি-র সটান উত্তর, ‘‘কিচ্ছু নেই।’’ তা হলে যে ত্রুপ্তি দেশাইকে যেতে দিচ্ছে না? ওসি তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে জানালেন, ‘‘যাচ্ছেন তো, গেলেই দেখবেন, অনেক মহিলা যাচ্ছেন। তবে ওই দশ থেকে পঞ্চাশ বছরের মধ্যে কেউ নেই। প্রথাটা তো মানতে হবে।’’
কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তো এই প্রথার বিরুদ্ধেই রায় দিয়েছে। ‘‘সে তো জানি। কিন্তু মানুষ তার বিশ্বাস থেকে ক্ষোভ দেখালে আমরা কী করব?’’ পাল্টা প্রশ্ন করলেন ওসি। এর পরে আর কিছু বলার থাকতে পারে না। কথাতেই তো আছে, ‘‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু।’’
অতএব সাংবাদিকি তর্ক ছেড়ে বেরোনো গেল এরুমেলির দিকে। কোচি থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে এক ছোট্ট শহর। পশ্চিমঘাটের ছোট ছোট পাহাড়, জঙ্গল, রাবার ও এলাচের খেত পিছনে ফেলে যখন শহরে ঢুকছি, সন্ধ্যা নেমেছে। ঢাকের বাদ্যি, কালো ধুতি পরে উদোম গায়ে, খালি পায়ে সকলের উল্লাসনৃত্য। শুরু হয়ে গিয়েছে ‘পিট্টুথালাই’।
যুদ্ধজয়ের এই উল্লাসনৃত্যই শবরীমালার অন্যতম বৈশিষ্ট। বালক দেবতা আয়াপ্পন যখন ‘মহিষী’ নামে এক দানবীকে যুদ্ধে হারিয়ে স্বর্গ ও মর্তে স্বস্তি এনে দিয়েছিলেন, সকলে নাকি এ ভাবেই আনন্দ করেছিল।
অন্য দেবতাদের পুরাণকথায় দানবের বিরুদ্ধে লড়াই, আয়াপ্পনের লড়াই দানবীর বিরুদ্ধে।
এই জনসংস্কৃতিতে ত্রুপ্তিদের আরও বেগ পেতে হবে। আজ তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে কেরল ভারতীয় জনতা যুব মোর্চা। প্রায় আড়াইশো বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশও।
বিমানবন্দরে ১২ ঘণ্টা আটকে থাকার পরে পুণে ফিরে গিয়েছেন ত্রুপ্তি। বলেছেন, ‘‘ফিরে আসব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy