—ফাইল চিত্র।
সরযূর তীর দিনভর মুখিয়ে ছিল দিল্লির দিকে। দুপুর গড়াতেই রায় এল শীর্ষ আদালতের। অযোধ্যায় আওয়াজ উঠল, ‘অব মন্দির বনেঙ্গে’।
হনুমানগড়ির মহন্ত রাজুদাসের পাশেই দাঁড়িয়ে বাবরি পক্ষের ইকবাল আনসারি। বছরের পর বছর অপেক্ষায় দুই পক্ষই। মহন্ত বললেন, ‘‘৭০ বছর ধরে লড়াই চলছে। আজ এই মামলা সাংবিধানিক বেঞ্চে গেলে আরও ১০-২০ বছর পিছোত। হিন্দু জনমানস চায়, ২০১৯ সালের আগেই রামমন্দির হোক। না হলে ভোটে মোদীকে জবাব দেবে হিন্দুরা।’’
একটু হতাশ আনসারি। কিন্তু বলছেন, ‘‘আসল মামলায় কোনও ফারাক পড়বে না।’’ তবে তার পাশেই বাবলু খান বলছেন, ‘‘আমরাও চাই দ্রুত শুনানি শেষ হোক।’’
অপেক্ষা করে করে অযোধ্যা ক্লান্ত। কিন্তু রামমন্দির নিয়ে ফের হাওয়া তাতিয়ে তুলছে গেরুয়া শিবির। সুব্রহ্মণ্যম স্বামী কালই সুপ্রিম কোর্টে দ্রুত শুনানির আর্জি নিয়ে যাচ্ছেন। বলছেন, ২৯ অক্টোবর থেকে রোজ শুনানি শুরু হলে দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। বিজেপি আজ অন্য নেতাদের না নামিয়ে সামনে এনেছে গেরুয়া-পরিহিত নেতা-নেত্রীদের। যোগী আদিত্যনাথ, উমা ভারতী সকলেরই মুখে এক রা— ‘‘সব বাধা দূর হল। এ বারে দ্রুত রামমন্দিরের সুরাহা হবে।’’
রায়কে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি এল আরএসএসের। বিশ্ব হিন্দু পরিষদও নেমে পড়ল হইহই করে। ৫ অক্টোবর সন্তদের বৈঠক। সেখানে রামমন্দির নিয়ে বড় ঘোষণা হবে। গোটা গেরুয়া শিবির ধরেই নিয়েছে— মসজিদ ইসলামের অপরিহার্য অংশ কি না, তাই নিয়ে পুরনো রায় বহাল থাকা মানেই হল, অযোধ্যায় বিতর্কিত জমির তিন ভাগের এক ভাগ যে সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ করেছিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট, সেখানে তাঁদের দাবি আর থাকবে না। অর্থাৎ, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির ধারণা, অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের রাস্তা সাফ। বছরের শেষেই এসে যাবে চূড়ান্ত রায়। উমা যেমন বলছেন, ‘‘মুসলিমদের যেমন মক্কা, হিন্দুদের অযোধ্যা। সেখানে মন্দির হবেই।’’
গেরুয়া শিবিরের লম্ফঝম্প দেখে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা বুঝতেই পারছে, ২০১৯-এর আগে রামমন্দির নিয়েই তুরুপের তাসটি খেলতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বললেন, ‘‘একটি পুরনো অবস্থান বজায় রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। এত লাফালাফি, রাজনীতি কেন?’’ দলের নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীর কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় শিরোধার্য, এটাই আমাদের অবস্থান। কিন্তু বিজেপির মুখে রাম, মনে নাথুরাম। ভোট মিটলে রামকে বনবাসে পাঠায়, ভোট এলে ফের রামনাম শুরু হয়।’’
রাহুল নিজে আজ চিত্রকূটে কামতানাথ মন্দিরে পুজো দেন। এই চিত্রকূটেই বনবাসের সময় সীতা ও লক্ষ্ণণকে নিয়ে রাম থেকেছিলেন বলে পুরাণের দাবি। উমার কটাক্ষ, ‘‘বাধ্য হয়ে রাহুলের মুখে ভগবানের নাম!’’
রাজধানীর অলিন্দে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আজ থেকে কি তাহলে হিন্দুত্বের লড়াই শুরু হয়ে গেল? কে বড় হিন্দু এটাই কি ভোটের মন্ত্র হবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy