আরও নিরাপদ হচ্ছে আকাশ।
মাঝ আকাশে কোনও কারণে দু’টি বিমান কাছাকাছি চলে এলে এ বার মাটিতে বসেই সঙ্কেত পাবেন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-র অফিসারেরা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা সতর্ক করে দিতে পারবেন পাইলটদের। বদলে দিতে পারবেন বিমানের উচ্চতাও।
প্রতিটি আধুনিক বিমানে এই বিপদ-সঙ্কেত পাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। আকাশে দু’টি বিমান কাছাকাছি চলে এলে দুই বিমানের ককপিটেই বিপদ-সঙ্কেত বাজতে থাকে। তবে সেই সঙ্কেত দুর্ঘটনার মাত্র ৩৫ সেকেন্ড আগে পাইলটের কাছে আসে। ওইটুকু সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্য উচ্চতায় গিয়ে এড়াতে হয় দুর্ঘটনা। তা ছাড়া যে বিমানটি তাঁর কাছাকাছি চলে এসেছে, তার সঠিক অবস্থান বুঝতে পারেন না পাইলট।
কিন্তু এ বার দু’মিনিট আগেই এটিসি-তে চলে আসবে এই বিপদ-সঙ্কেত। যে দু’টি বিমান কাছাকাছি চলে আসছে, তাদের সঠিক অবস্থানও দেখা যাবে এটিসি-র মনিটরে। ফলে, একটি বিমানের উচ্চতা বদল করে সহজেই এড়ানো যাবে দুর্ঘটনা। মাঝ আকাশে দু’টি যাত্রী বিমানের কাছাকাছি চলে আসার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এটিসি অফিসারদের বক্তব্য, ক্রমাগত পাইলটদের সঙ্গে বার্তা আদানপ্রদানের সময়ে কোন দু’টি বিমান কাছাকাছি চলে আসছে, তা ঠাহর করা সম্ভব হত না। কিন্তু এ বার মনিটরে সঙ্কেত ফুটে উঠবে। সতর্ক হয়ে যাবেন অফিসার।
অগস্ট মাস থেকে নতুন এই ‘অটোমেশন’ ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে কলকাতা বিমানবন্দরে। কলকাতায় এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট-এর জেনারেল ম্যানেজার চন্দন সেন জানিয়েছেন, পুরনো যে ব্যবস্থা এখন চলছে, তার সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে নতুন ব্যবস্থা শুরু হবে। দু’টোই কাজ করবে। আস্তে আস্তে পুরনো ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে। জানা গিয়েছে, এত দিন কলকাতায় এটিসি-তে মাত্র দু’টি রেডারের (কলকাতা ও ব্রহ্মপুরের) ছবি পাওয়া যেত। নতুন ব্যবস্থায় ৯টি রেডারের ছবি ফুটে উঠবে কলকাতা বিমানবন্দরের মনিটরে। তার সঙ্গে থাকবে ৮টি অটোমেটিক ডিপেন্ডেন্স সার্ভিলেন্স ব্রডকাস্টার (এডিএসবি)-এরও ছবি। এডিএসবিও কিছুটা রেডারের মতোই বিমানের অবস্থান জানাতে সাহায্য করে।
ফলে অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে আকাশসীমা। এত দিন কলকাতাকে কেন্দ্র করে ২৮০ কিলোমিটার আকাশসীমার ছবি ফুটে উঠত মনিটরে। এ বার দিল্লির রুটে এক হাজার কিলোমিটার, মুম্বইয়ের পথে ১১০০ কিলোমিটার দেখা যাবে মনিটরে। কাঠমান্ডুর বন্দরে বিমানের ওঠানামা দেখা যাবে কলকাতায় বসেই।
আরও সুবিধা পাওয়া যাবে নতুন ব্যবস্থায়। কলকাতা থেকে অন্য শহর পর্যন্ত সরাসরি সরলরেখা টানলে যে রুট হবে, সেই রুটে উড়ে যেতে পারবে বিমান। চন্দনবাবুর কথায়, “এর ফলে জ্বালানির খরচ যেমন কমবে, তেমনই সময়ও বাঁচবে। দুই বিমানের মাঝের দূরত্বও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।” উদাহরণ দিয়ে এক অফিসার বলেন, এখন কলকাতা থেকে মুম্বই যাওয়ার সময়ে একটু ঘুরপথে নাগপুরের আকাশ ছুঁয়ে যেতে হয় বিমানকে। কারণ, কিছুটা পথ কলকাতা থেকে নজরদারি করা হয়। তার পরে নজরদারির কাজ শুরু করে নাগপুর। তখন কলকাতার মনিটর থেকে উধাও হয়ে যায় সেই বিমান। রুট ঠিক করা থাকে ওই শহরের হিসেবে। এ বার সরাসরি মুম্বই যেতে পারবে বিমান। তা ছাড়াও এত দিন দু’টি শহরের মধ্যে যাওয়া এবং আসা, দু’টি ক্ষেত্রেই বিমান একই রুট ব্যবহার করত। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় যাওয়া ও আসার জন্য পাশাপাশি আলাদা রুট থাকবে। একই রুটে বিমানের ভিড় আর থাকবে না।
অভিযোগ উঠেছে, যাত্রী বোঝাই বিমান নিয়ে এখন মাঝেমধ্যেই আকাশে ওভারটেক করে থাকেন পাইলটেরা! তবে সাধারণ ভাবে ওভারটেক বলতে যা বোঝায়, রাস্তায় চলন্ত বাসের ক্ষেত্রে যেমন হয়, বিমানের ক্ষেত্রে ঠিক তেমনটা নয়। আকাশে এক বিমানের পাইলটের সঙ্গে এটিসি-র কথাবার্তা শুনতে পান অন্য বিমানের পাইলট। এক শহর থেকে আসা পাইলট বুঝতে পারেন, তাঁর পৌঁছনোর একটু আগে অন্য শহর থেকে আসা বিমান পৌঁছে যাবে কলকাতায়। তাই আচমকাই গতি বাড়িয়ে কেউ কেউ সময়ের আগেই পৌঁছে যাচ্ছেন শহরের আকাশে।
এ কথা স্বীকার করে নিয়ে এক পাইলট বলেন, “অন্য বিমানের পরে পৌঁছলে আকাশে অপেক্ষা করতে গিয়ে জ্বালানি ও সময় নষ্ট হয়।” কিন্তু এর ফলে আকাশে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন এক এটিসি অফিসার। এ ভাবে আচমকা গতি বাড়িয়ে চলে আসাটা নিয়ম-বিরুদ্ধ বুঝেও এত দিন চুপ করেই থাকতে হয়েছে এটিসি অফিসারদের। কিন্তু নতুন এই ব্যবস্থায় ককপিটের যাবতীয় তথ্যও পেয়ে যাবেন এটিসি অফিসার। কলকাতার কাছাকাছি এসে কোনও বিমানের গতি বেড়ে যাচ্ছে কি না, তা-ও বোঝা যাবে। ওভারটেক করলে তথ্য দিয়ে অভিযোগ জানানো যাবে।
দিল্লি-মুম্বইয়ে এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে কমে গিয়েছে আকাশে ওভারটেকিং!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy