Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Rajasthan Assembly Election 2018

রাজস্থানে সিপিএমের কৃষক আন্দোলনের ফসল ঘরে তোলার আশায় কংগ্রেস

গোটা রাজস্থান জুড়েই এই কৃষক অসন্তোষের চোরা স্রোত যে কিছু ক্ষেত্রে জাত-পাতের সমীকরণকেও ছাপিয়ে গিয়েছে তা টের পাওয়া যায়। এ রাজ্যের প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষের জীবিকা কৃষি এবং কৃষি পণ্যের উপর নির্ভর।

সিজার মণ্ডল
দান্তারামগড় (রাজস্থান) শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:৩৪
Share: Save:

বিড়িতে একটা লম্বা টান দিয়ে বারান্দার উপর গুছিয়ে বসলেন অমরা রাম। কলকাতা থেকে শুনেই আক্ষেপের স্বরে বলে উঠলেন, “আপনাদের দিদি ভুল করছেন। আমরা কখনও ভাবতেও পারি না বাঙলায় বিজেপি জমি শক্ত করছে!” এর পরের ক’মিনিট আমাকে কোনও প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে বাঙলা নিয়ে এক গুচ্ছ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন বছর তেষট্টির ওই প্রৌঢ়।

সাদা-ঢোলা পাজামার উপর সাদা পাঞ্জাবি আার কালো জহর কোট। পায়ে সস্তার চটি। চারপাশে ভিড় করে থাকা চাষিদের ভিড়ে আলাদা করে চেনা মুশকিল। আর এই ‘জৌলুসহীন’ লোকটাই নাকি বারে বারে বিপদে ফেলেছেন রাজ্যের দোর্দণ্ডপ্রতাপ ‘রানি’ বসুন্ধরা রাজেকে!

হদিশটা দিয়েছিলেন জয়পুরের এক সাংবাদিক বন্ধু। তিনি বলেছিলেন, “কলকাতা থেকে এসেছো। এখানকার সিপিএম-ও দেখে যাও।” আপাত নিরীহ মানুষটা যে অনেকের ঘুম কেড়েছে, তা খানিকটা বুঝেছিলাম কংগ্রেস নেতা বীরেন্দ্র সিংহের কথায়। শিকর জেলার দান্তারামগড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী বীরেন্দ্র। বাবা নারায়ণ সিংহ ছিলেন ওই এলাকার টানা সাত বারের বিধায়ক।

তিনি বলেন, “গত তিন বছরে বার বার কৃষকদের কাছে হার মানতে হয়েছে বসুন্ধরাকে। একের পর এক কৃষক আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে জয়পুরে রানির মহাল পর্যন্ত। তাই এ বারের নির্বাচনে কৃষকরা নির্ণায়ক ভূমিকায় রয়েছেন।”

আর সেই লাগাতার কৃষক আন্দোলনের ‘পোস্টারবয়’ এই অমরা রাম। নিখিল ভারত কৃষক সভা (এআইকেএস)-র নেতা অমরা রাম এ বার সিপিএম প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন দান্তারামগড় থেকেই। এর আগে ২০০৮ সালে ‘অপারাজেয়’ নারায়ণ সিংহকে হারিয়েই বিধানসভায় গিয়েছিলেন এই কৃষক নেতা।

নিজেদের অধিকার আদায় করতে লড়াইতেই ভরসা কৃষকদের।

রাজস্থানের কৃষকদের অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করতেই উত্তেজিত স্বরে বলেন, “এখানে কৃষকদের দেখার কেউ নেই। না কংগ্রেস না বিজেপি। সবাই সমান।” তিনি বলেন, “স্বাধীনতার আগে থেকে এখানে সামন্তপ্রভু রাজপুতদের সঙ্গে লড়ে নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছে কৃষকদের। এখনও তাই। হঠাৎ করে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেওয়া, কৃষিপণ্য পরিবহণে টোল বসানো, সবটাই তো কৃষকদের পেটে লাথি মারা।” তাঁর অভিযোগ, “সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও এক বস্তাও বাজরা কেনেনি। কোনও ফসলেই সহায়ক মূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা। প্রতি দিন তাঁরা ঋণের জালে জড়িয়ে যাচ্ছেন।” তাঁর দাবি, গোটা রাজ্যে একশ’র বেশি চাষি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ফসলের দাম না পেয়ে, ঋণের দায়ে। নিজেকে সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনের মুখ হিসাবে মানতে না চাইলেও জানাতে ভোলেননি যে, ওই আন্দোলনের সামনে পিছু হটতে বাধ্য হয় বসুন্ধরা সরকার। বিদ্যুতের বর্ধিত রেট বাতিল করা হয়।

আরও পড়ুন: রাহুলকে ‘পাপ্পু’ বলায় ঝগড়া লেগে গেল দুই জনপ্রতিনিধির!

গোটা রাজস্থান জুড়েই এই কৃষক অসন্তোষের চোরা স্রোত যে কিছু ক্ষেত্রে জাত-পাতের সমীকরণকেও ছাপিয়ে গিয়েছে তা টের পাওয়া যায়। এ রাজ্যের প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষের জীবিকা কৃষি এবং কৃষি পণ্যের উপর নির্ভর। আর সেই অসন্তোষকেই অভিমুখ দেওয়ার চেষ্টায় এই কৃষক নেতা। রাজ্যের তিন জেলা শিকর, চুরু এবং ঝুনঝুনিতে ২১ আসনের মধ্যে ১০টিতে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম।

নির্বাচনী জনসভায় বাম প্রার্থী অমরা রাম। নিজস্ব চিত্র।

শিউকুমার কুমায়ত, শিকরের কংগ্রেস কর্মী। তিনিও স্বীকার করেন, এ বার গোটা শেখাওটির চার-পাঁচটি আসনে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে সিপিএমের। আর বাকি জায়গায় কংগ্রেসের জাঠ ভোটেই ভাগ বসাবে সিপিএম। তাই শচিন পায়লট এই শেখাওটি এলাকায় অনেকটা সময় বেশি দিচ্ছেন। তবে রাজ্যের বাকি অংশে সিপিএমের এই আন্দোলন থেকেই ফসল তোলার আশায় কংগ্রেস।

আরও পড়ুন: মোদী-অমিত জমানায় গুজরাতে ‘ভুয়ো’ সংঘর্ষ ফের সিঁদুরে মেঘ!

রাজস্থানে বাম প্রার্থীর নির্বাচনী জনসভায় কৃষকদের উপস্থিতি বিশেষ ভাবে লক্ষ্যণীয়।

নিম কা থানা বিধানসভা ক্ষেত্রে কংগ্রেস প্রার্থী সুরেশ মোদী বলেন, “শেখাওটির বাইরে কোথাও প্রার্থী দেয়নি সিপিএম। কিন্তু গোটা রাজ্যের কৃষকই সাম্প্রতিক আন্দোলনে সামিল হয়েছিল। সেখানে কৃষকদের বিজেপি বিরোধী ভোট কংগ্রেসেই আসবে।” কৃষক অসন্তোষ এবং আন্দোলন যে এই ভোটে নির্ণায়ক, সেটা বুঝেই কয়েক দিন আগে রাহুল গাঁধী ঘোষণা করেন— কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ১০ দিনের মধ্যে চাষিদের ঋণ মুকুব করা হবে। তা হলে সিপিএমের কাস্তে দিয়েই কংগ্রেস পদ্ম ফুল কাটছে? প্রশ্নটা শুনেই হেসে সম্মতির ঢংয়ে ঘাড় কাত করলেন অমরা রাম। ঘড়ি দেখে বুঝলাম প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুরছি এই কৃষক নেতার সঙ্গে। এর মধ্যেই খান পাঁচেক পাড়া বৈঠক হয়ে গিয়েছে। অমরারামের নির্বাচনী এজেন্ট তরুণ বললেন, “এই চড়কি পাক খাওয়া চলবে রাত ন’টা পর্যন্ত।” ফেরার আগে শেষ প্রশ্নটা করলাম, বাঙলায় আপনাদের দলের এই বেহাল দশা কেন? সরাসরি উত্তরটা এড়িয়ে গিয়ে এক গাল হেসে অমরারাম বলেন, “ওখানে হান্নান মোল্লার মত অনেক বড় বড় কৃষক নেতা আছেন। কমিউনিস্ট আন্দোলনের আঁতুড় ঘর বাঙলা। তবে পার্টি যদি ডাকে বাঙলায় কাজ করার জন্য তা হলে অবশ্যই যাব। সেখানে কাজ করা তো আমার স্বপ্ন।”

ছবি: সিজার মণ্ডল

(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদেরদেশবিভাগে ক্লিক করুন।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE