মায়াবতী।— ফাইল চিত্র।
ধুরন্ধর অজিত জোগী প্রথমেই বলে দিয়েছেন, ‘‘২০১৯-এ অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি জোটই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। আমার বিশ্বাস, প্রথম দলিত, মহিলা, উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিক, চার বারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মায়াবতীই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য।’’
মায়াবতী যে মনে মনে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, অজিত জোগীর তা জানা। ছত্তীসগঢ়ে মায়াবতীর সঙ্গে জোট করে বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রীর সেই গোপনে লালিত স্বপ্নই উসকে দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু মায়াবতী ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে তুলে ধরতে পারবেন কি না, তার পরীক্ষা অনেকটাই হবে ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা ভোটে। তাঁর গুরু প্রয়াত কাঁসিরামের প্রথম কর্মভূমিতে।
বহুজন সমাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কাঁসিরাম ছত্তীসগঢ়ের জাঞ্জগীর লোকসভা কেন্দ্র থেকেই প্রথম ভোটের ময়দানে নামেন। নির্দল প্রার্থী হিসেবে। তখন অবশ্য পৃথক ছত্তীসগঢ় তৈরি হয়নি। ভরাডুবি হয়েছিল কাঁসিরামের। মাত্র ৮.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন কাঁসিরাম। কংগ্রেসের প্রভাত কুমার মিশ্র পেয়েছিলেন ৫৮ শতাংশের বেশি ভোট।
কাঁসিরামের সেই যুদ্ধক্ষেত্রেই এ বার নতুন লড়াই মায়াবতীর। লোকসভা ভোটে কংগ্রেস না বিজেপি, মায়াবতী কোন দিকে যাবেন, তা নিয়ে এখনও তিনি রহস্য জিইয়ে রেখেছেন। জাতীয় স্তরে বিজেপির বিরুদ্ধে জোটে রাহুল গাঁধীর কংগ্রেসের নেতৃত্ব তিনি মানবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনাতেও দাঁড়ি টানার ইচ্ছে মায়াবতীর নেই। ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা ভোটে তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেননি। অজিত জোগীর নতুন তৈরি দল জনতা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেছেন। ভোটের পরেও তাঁর কংগ্রেস বা বিজেপির সঙ্গে জোটের ইচ্ছে নেই বলেও দাবি করেছেন।
এখানেই চ্যালেঞ্জ মায়াবতীর। এখন লোকসভায় মায়াবতীর আসন সংখ্যা শূন্য। ২০১৯-এর আগে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে তুলে ধরতে হলে ছত্তীসগঢ় ও অন্যান্য রাজ্যের বিধানসভা ভোটে প্রমাণ করতে হবে, এখনও দলিত-আদিবাসী ভোট টানার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের বাইরে তিনি তৃতীয় বিকল্প হতে পারেন, তা-ও দেখাতে হবে। ছত্তীসগঢ়ের ভোটে আসন সমঝোতার আলোচনায় মায়াবতী এত বেশি আসনের দাবি করেছিলেন যে কংগ্রেস নেতারা তা মেনে নেননি। মায়াবতী তাই কংগ্রেসের ভোট কেটে তাঁদের শিক্ষা দিতে চান।
পরীক্ষা অবশ্য বেশ কঠিন। ১৮ বছর আগে পৃথক ছত্তীসগঢ় গঠনের পরেও প্রতিটি ভোটে প্রার্থী নামিয়েছেন তিনি। কিন্তু কোনওবারই মায়াবতীর ভোট ৫ শতাংশের গণ্ডি পার হয়নি। কখনও ২টি আসন, কখনও ১টি আসন জুটেছে। এখন বিধানসভায় বিএসপি-র বিধায়ক মাত্র এক জন। মায়াবতীর মতো জোগীও নিজেকে দলিত, আদিবাসী সমাজের ত্রাতা হিসেবে তুলে ধরেন। তাই তাঁর সঙ্গে জোট করেছেন তিনি। ছত্তীসগঢ়ের ৯০টির মধ্যে ৩৫টি আসনে লড়ছে বিএসপি। দলের প্রচার দেখভালের জন্য রাজ্যসভার সাংসদ অশোক সিদ্ধার্থ, অম্বিকা চৌধুরী, লালজি বর্মা, অজয় ভারতী, ভীম রাজভড়ের মতো পোড়খাওয়া নেতাদের ছত্তীসগঢ়ে বসিয়ে রেখেছেন তিনি। ছত্তীসগঢ়ে ৯০টি আসনের মধ্যে ১০টি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। ২৯টি আসন সংরক্ষিত তফসিলি জনজাতির জন্য। এর বাইরেও ৪০টি আসনে দলিত ভোটের হার ১৬ শতাংশের বেশি। সেই ভোট এককাট্টা করে ঝুলিতে টেনে আনাই মায়াবতীর লক্ষ্য। তা সত্ত্বেও মেরেকেটে তিনটির বেশি আসনে জেতার সম্ভাবনা দেখছেন না বিএসপি-নেতারা।
কংগ্রেস নেতারা বলছেন, নিজের নাক কেটে মায়াবতী কংগ্রেসের যাত্রাভঙ্গ করতে এবং বিজেপির সুবিধা করে দিতে চান। সেই যাত্রাভঙ্গের ক্ষমতা তাঁর রয়েছে কি না, তা প্রমাণ করাই মায়াবতীর পরীক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy