Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
বিধানসভা নির্বাচন রাজস্থান

সাম্প্রদায়িক প্রচার এখন বহু গুণ বেড়েছে ‘মোদীর ভারত’-এ! বলছেন অলওয়ারের ইমরান

এসেছি গোরক্ষক তাণ্ডবের কেন্দ্র মেওয়াট অঞ্চলের অলওয়ার জেলায়। সামনে ইমরান। তিন বছর আগে লন্ডনে কয়েক হাজার প্রবাসীর ভিড়ে ঠাসা অনুষ্ঠানে যাঁর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, “অলওয়ারের ইমরান খান তাঁর তৈরি ৫০টি শিক্ষা-অ্যাপ দেশকে দান করেছেন। তাঁর মধ্যেই আমার ভারত বসত করে।”

ইমরান খান

ইমরান খান

অগ্নি রায় 
অলওয়ার শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২৯
Share: Save:

চেপে বসা ভয়টা তো রয়েছেই। তবে সাধারণ ভাবে অলওয়ারের ইমরান খানের মনে হয়, সাম্প্রদায়িক প্রচার বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে এখন। রাজনৈতিক কারণে কাজে লাগানো হচ্ছে ধর্মকে।

এসেছি গোরক্ষক তাণ্ডবের কেন্দ্র মেওয়াট অঞ্চলের অলওয়ার জেলায়। সামনে ইমরান। তিন বছর আগে লন্ডনে কয়েক হাজার প্রবাসীর ভিড়ে ঠাসা অনুষ্ঠানে যাঁর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, “অলওয়ারের ইমরান খান তাঁর তৈরি ৫০টি শিক্ষা-অ্যাপ দেশকে দান করেছেন। তাঁর মধ্যেই আমার ভারত বসত করে।” সেই ভারত অথবা আরও নির্দিষ্ট করে বললে, সেই অলওয়ারের পরিস্থিতি নিয়ে আজ যথেষ্টই মনমরা মোদীর ইমরান। বলছেন, “কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর যে মদত রয়েছে, তা সবাই জানে।”

প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের কাজে আসবে, হিন্দিতে এমন সব মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন রাজস্থান সরকারের শিক্ষা দফতরের কর্মী হিসেবে তৈরি করেন ইমরান। এখনও পর্যন্ত বানিয়েছেন ৮০টির মতো অ্যাপ। দেড় লক্ষ ছাত্রছাত্রী তা ব্যবহার করেছেন। ২০১৫ সালে দিল্লিতে শিক্ষা সংক্রান্ত এক কর্মসূচিতে চোখে পড়েন তৎকালীন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির। সেই সূত্রে তাঁর নাম পৌঁছয় মোদীর কাছে। যদিও চর্চা— বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে এক সংখ্যালঘুর সঙ্গে ভারতের আত্মাকে জোড়াটাই ছিল মোদীর কৌশল।

আরও পড়ুন: বেওয়ারিশ ‘গোমাতা’দের দাপটে ঘুম ছুটেছে রাজস্থানের চাষিদের

সেই সংখ্যালঘুর ঠিকানা হরিয়ানা-সীমান্তবর্তী এই অলওয়ার। দু’বছর ধরে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে ‘কুখ্যাত’ এক জায়গা। কারণ, গত বছরের এপ্রিলে পহলু খান এবং চলতি বছরের জুলাইয়ে রাকবার খানকে এখানে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল শুধু এই সন্দেহে যে, তাঁরা গরু পাচার করছিলেন হরিয়ানায়।

সরকারি চাকুরে, তাই অনেক বিষয়ে বিশদে মুখ খুলতে চাইছেন না ইমরান। তবু বলছেন, “প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা দেখা করতে পারলে অবশ্যই জানাব পরিস্থিতি কী। শিক্ষা এবং উন্নয়ন যে বেহাল, তা-ও বলতে চাই।” আগে দু’বার মোদীর সঙ্গে দেখা হয়েছে তাঁর। জাতীয় শিক্ষক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ‘হাই টি’-তে। হেসে বলছেন, “দেখা হলেই মোদীজি প্রশ্ন করেছেন, আর ক’টা অ্যাপ বানালাম!” ফের দেখা হলে কি ধর্মের রাজনীতি, শিক্ষা, উন্নয়ন নিয়ে এত কথা বলার সুযোগ পাবেন? নিশ্চিত নন ইমরান।

বক্তৃতার তুবড়ি ছুটছে বিধানসভা ভোটের আগে। অলওয়ারে এসেছিলেন রাহুল গাঁধী। কালো টাকা থেকে রাফাল— সব বিষয় নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছেন। তবু স্থানীয়দের অভিযোগ, শাসক-বিরোধী সব পক্ষই এখানকার সাম্প্রদায়িকতার সমস্যাটি নিয়ে নীরব।

অলওয়ারের পৌনে তিন লক্ষ ভোটারের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ মুসলমান ‘মেয়ো’ সম্প্রদায়ভুক্ত। হিন্দু ভোট হারানোর চিন্তাতেই কি কেউ নামোচ্চারণ করছেন না পহলু অথবা রাকবার খানের? স্পষ্ট জবাব নেই। এই অঞ্চলে সংখ্যাগুরু জাঠেরা। কংগ্রেস-বিজেপি জাঠ প্রার্থীই দাঁড় করিয়েছে। গোরক্ষক-হিংসা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য পরিচিত, কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা জ্ঞানদেব আহুজাকে এ বার টিকিট দেয়নি বিজেপি। স্থানীয় সংখ্যালঘুরা অবশ্য বলছেন, এটা দায় ঝেড়ে ফেলার প্রয়াস। কারণ, ওই দুই হত্যাকাণ্ডের সময়ে আহুজাই ছিলেন এলাকার বিধায়ক।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE