Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ফসল বিমায় দুর্নীতি! মোদীর বিরুদ্ধে নতুন তোপ দাগলেন রাহুল

রাহুল গাঁধী বলছেন, ‘‘ফসল বিমার টাকা ঢুকেছে মোদীর বন্ধুদের পকেটে!’’

রাজস্থানের চিতোরগড়ের প্রচারে গিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করলেন রাহুল গাঁধী।

রাজস্থানের চিতোরগড়ের প্রচারে গিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করলেন রাহুল গাঁধী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০৫
Share: Save:

রাহুল গাঁধী বলছেন, ‘‘ফসল বিমার টাকা ঢুকেছে মোদীর বন্ধুদের পকেটে!’’

একই সুরে অরবিন্দ কেজরীবালের অভিযোগ, ‘‘ওটা ফসল বিমা যোজনা নয়। বিজেপির চাষি লুটের যোজনা!’’

রাফাল-এর পর এ বার নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে নতুন দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায় চাষিদের পকেট ও সরকারি কোষাগার থেকে টাকা দিয়ে মোদী-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের বিমা সংস্থাকে বিপুল মুনাফা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রাফালের মতোই অভিযোগের শুরুটা করেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। এ বার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ অন্য বিরোধী নেতাও সরব হলেন। এখানেও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের মুনাফা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যুক্তি, ওই শিল্পপতিরাই বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলির মালিক। লোকসভা ভোটের আগে এ নিয়ে দেশ জুড়ে প্রচারে নামবে কংগ্রেস।

২০১৬-য় নতুন ধাঁচে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা চালু করে মোদী বলেছিলেন, খরা, অনাবৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ পাবেন চাষিরা। বিমা মূল্যের দেড় থেকে দুই শতাংশ প্রিমিয়াম দিতে হবে চাষিদের। কেন্দ্র ও রাজ্য দেবে ৮ শতাংশ করে। কংগ্রেসের অভিযোগ, গত দু’বছরে বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলি যত টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে, তার অনেক বেশি প্রিমিয়াম আয় করেছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী সরকার বিমা সংস্থাগুলির মধ্যে গোটা দেশের জেলাগুলিকে ভাগ করে দিয়েছে। যার অর্থ, কোনও জেলার চাষিরা একটিই মাত্র সংস্থার কাছে বিমা করাতে পারবে। কেজরীবালের দাবি, ‘‘বিমা সংস্থাগুলো জায়গির পেয়েছে! কিন্তু ক্ষতিপূরণের শর্ত হল, গোটা গ্রামের ৭০ শতাংশ ফসল নষ্ট না হলে কোনও চাষিই ক্ষতিপূরণ পাবেন না। ক্ষতিপূরণ না মিললেও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে আপনা-আপনি প্রিমিয়াম কেটে যাচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: দুষ্টু লোককে ভোট নয়, ডাক মুকুল-গলিতে

কৃষি বিশেষজ্ঞ তথা সাংবাদিক পি সাইনাথের ব্যাখ্যা, চাষিরা যখনই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিচ্ছেন, তখনই তাঁদের বিমার ফর্মে সই করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ঋণের কিস্তি থেকে প্রিমিয়াম কেটে যাচ্ছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ আদায়ের প্রক্রিয়া এত জটিল যে, সিংহভাগ চাষি ক্ষতিপূরণ চাইতেই যাচ্ছেন না। মহারাষ্ট্রের পরভণী জেলার উদাহরণ দিয়ে সাইনাথের ব্যাখ্যা, ওই জেলায় প্রায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার সোয়াবিন চাষির থেকে একটি বেসরকারি বিমা সংস্থা ১৯ কোটি টাকার বেশি প্রিমিয়াম আদায় করেছিল। কেন্দ্র ও রাজ্য ৭৭ কোটি টাকা করে বিমা সংস্থাটিকে দিয়েছে। অর্থাৎ, বিমা সংস্থাটি এক বছরে একটি জেলা থেকে ১৭৩ কোটি টাকা তুলেছে। কিন্তু তারা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে মাত্র ৩০ কোটি টাকা। যার অর্থ, একটি জেলা থেকেই ১৪৩ কোটি টাকা লাভ। সাইনাথের হিসেবে, এই বিমা যোজনা চালু হওয়ার পর তিন বছরে চাষিদের প্রিমিয়াম, কেন্দ্র ও রাজ্যের বরাদ্দ মিলে বিমা সংস্থাগুলির ঘরে ৬৬ থেকে ৬৮ হাজার কোটি টাকা ঢুকেছে। বিরোধীদের দাবি, এটা রাফালের চেয়েও বড় কেলেঙ্কারি।

ক্ষতিপূরণ নেই, অথচ প্রিমিয়াম দিতে হচ্ছে— এই অবস্থায় প্রতি বছর চাষিরা বিমা যোজনা ছেড়ে দিচ্ছেন। তথ্যের অধিকার আইনে পাওয়া সরকারি তথ্যও বলছে, প্রথম বছরের পরেই মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশ— চার বিজেপি শাসিত রাজ্যের ৬৮ লক্ষ চাষি ফসল বিমা যোজনা ছেড়ে দিয়েছেন। চাষির সংখ্যা কমায় বাকিদের প্রিমিয়াম বেড়েছে।

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘চাষিদের টাকা লুট করে বিমা সংস্থাগুলির মুনাফা বাড়ছে। ২০১৬-’১৭-য় বিমা সংস্থাগুলি ৬,৪৬০ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। ২০১৭-’১৮-য় তা বেড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছবে।’’

অভিযোগ উড়িয়ে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহ বলেন, ‘‘এই বিমা যোজনার লাভ সরাসরি কৃষকেরা পাচ্ছেন। আগে অর্ধেক ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ মিলত। এখন ৩৩ শতাংশ ফসল নষ্ট হলেই মিলছে। ক্ষতিপূরণও বেড়েছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE