Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বাঁচিয়েছেন দেবী, রানি দেখছেন কই

মুড়ি-মুড়কির মতো গোলা পড়েছিল। ঢুকে এসেছিল রাইফেল হাতে পাক সেনা। কিন্তু ‘তাঁর’ চত্বরে বর্ষিত প্রায় ৩ হাজার গোলার একটিও ফাটেনি! একটি পাথরেও দাগ পড়েনি।

চিহ্ন: তানোটের মন্দিরে ১৯৬৫ সালের পাক গোলা। নিজস্ব চিত্র

চিহ্ন: তানোটের মন্দিরে ১৯৬৫ সালের পাক গোলা। নিজস্ব চিত্র

অগ্নি রায়
তানোট শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৪৯
Share: Save:

মুড়ি-মুড়কির মতো গোলা পড়েছিল। ঢুকে এসেছিল রাইফেল হাতে পাক সেনা। কিন্তু ‘তাঁর’ চত্বরে বর্ষিত প্রায় ৩ হাজার গোলার একটিও ফাটেনি! একটি পাথরেও দাগ পড়েনি। যে শত্রুসেনারা এসেছিল গয়না খুলে নিতে, বিষাক্ত গ্যাসে তারা নাকি অন্ধ হয়ে যায়। শোনা যায়, বিপক্ষের এক জন সেনাও এই মন্দির চত্বর থেকে বেঁচে ফেরেনি।

“বর্ডার ছবিটায় এই মন্দির নিয়ে যা যা বলা হয়েছিল, হুবহু তা-ই ঘটেছিল এখানে, ’৬৫ সালের ভারত-পাক যুদ্ধে। অনেক জওয়ান এখনও আছেন, যাঁরা এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী।” আরতির পরে চিঁড়ে-সাবু দিয়ে প্রসাদ মাখছেন মন্দিরের পুরোহিত যোগিন্দর শর্মা। যিনি বিএসএফ জওয়ানও বটে! এমন আরও জওয়ান রয়েছেন, যাঁরা সময় মতো দেবীর সেবা করে যান।

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের শেষ প্রান্তে ধুধু মরুভূমির মধ্যে তানোট দেবীর মন্দিরে দাঁড়িয়ে রয়েছি। দুর্গার অবতারের নামে গ্রামের নামও তানোট। লাগোয়া আরও বেশ কিছু গাঁয়ে ভারত-পাক যুদ্ধের সেই ঘটনা আজ লোককথায় পরিণত। সরকারি তত্ত্বাবধানে মন্দিরেই রাখা রয়েছে না-ফাটা পাকিস্তানি শেলগুলো।

“দেবী তো বহিঃশত্রুর থেকে বাঁচিয়েছিলেন। রানি কী করছেন? আমরা তো সেই অন্ধকারেই!” খেয়াল করিনি, পিছনে দু’চার জন বেশ কিছু ক্ষণ থেকে লক্ষ্য করছেন ভিন্ রাজ্যের পত্রকারকে। তিক্ত কণ্ঠস্বরের মালিককে বেশি প্রশ্ন করতে হল না। শোনা গেল তানোটের আশপাশের গ্রামগুলোর কথা। দেখেও আসা গেল। নুঙ্গেওয়ালা বা গামনেওয়ালা গ্রামে পশুপালনই মূল জীবিকা। এবং আজও তারা বিদ্যুৎহীন। “তানোটকে আলো দেন জওয়ানরা। কিন্তু আমরা অন্ধকারেই,” বলছেন পুনম সিংহ, উমেশ সিংহেরা। “অপেক্ষাকৃত বর্ধিষ্ণু রামগড়ে থাকত বাপ-দাদারা। বাহুবলীরা জোর করে জমি খরিদ করে ধাক্কা মেরেছে। তিরিশ বছর এই অন্ধকূপে পড়ে আছি ভেড়া-বকরি নিয়ে। এদেরও বাঁচানো দায়।”

এপ্রিলেই নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন, একটি গ্রামও বিদ্যুৎহীন থাকবে না। প্রচারমাধ্যমে ঝালাপালা ‘নির্মল ভারত’ নিয়ে। ছাগল কোলে দাঁড়ানো রাজস্থানি বালককে ব্যাপারটা বলতেই সে হেসে কুটিপাটি! ভাবখানা, ‘প্রাতঃকৃত্য করতে আর কোথায় যাব? গোটা মরুভূমিটাই তো পড়ে রয়েছে!’

সামনেই ওএনজিসি-র বিশাল গ্যাস প্লান্ট। তাদের নিজস্ব বিদ্যুতের ব্যবস্থা। শহর থেকে ১৫০ কিলোমিটার সড়ক (যার দু’পাশে গ্রাম) বানিয়ে রেখেছে সেনা। সেখানেও বিদ্যুতের লাইন। এলাকার বাবু সিংহ বললেন, “ওএনজিসি-র কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি বিজেপি বিধায়ককে ধরে, যদি বিজলি পাওয়া যায়। ওঁরা আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই।”

বিজলি নেই, কিন্তু একতলা ইট বার করা (গ্রামের একমাত্র পাকা বাড়ি) সরকারি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। মাস্টারজি একজনই। ছাত্র-ছাত্রী জনা পঞ্চাশেক। বেতন তুলতে সদরে যান মাসে এক বার। সতর্ক গলায় বললেন মাস্টার প্রতাপসিংহ সোলাঙ্কি, “ভোট নিয়ে কিন্তু কিছু বলব না।” তা, বেশ। গ্রীষ্মে পঞ্চাশ ডিগ্রির রাজস্থানে এই টিনের চালে বাচ্চারা পড়ে কী করে?

“আমাদের সবই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে!” হাই তুললেন মাস্টারজি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE