Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
National news

‘মহাভারতের জতুগৃহ আর সুড়ঙ্গ’ খুঁজতে নামল এএসআই

অনেকেই মনে করেন, গ্রামের ‘বারনাওয়া’ নামটা আসলে ‘বারনাবত’-এর অপভ্রংশ, মহাভারতের কাহিনি অনুযায়ী যে বারনাবতে স-কুন্তি পাণ্ডবদের পাঠানো হয়েছিল জতুগৃহে পুড়িয়ে মারার জন্য।

বারনাওয়া গ্রামে খোঁজ পাওয়া সেই সুড়ঙ্গ।

বারনাওয়া গ্রামে খোঁজ পাওয়া সেই সুড়ঙ্গ।

সংবাদ সংস্থা
লখনউ শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ১১:৩৬
Share: Save:

পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বাগপত জেলার বারনাওয়া গ্রামে সত্যিই কি মহাভারত যুগের সুড়ঙ্গ আর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে? স্থানীয় বাসিন্দারা অন্তত তেমনটাই বিশ্বাস করেন। শুধু লোকবিশ্বাস কেন, ইতিহাসের কোনও কোনও শিক্ষক, অধ্যাপকের মতও তাই। এই বিশ্বাসের বড় ভিত্তি ওই গ্রামের এক সুড়ঙ্গ এবং একটি ঢিবি। সেই সুড়ঙ্গ এবং ঢিবির রহস্য উন্মোচনে এ বার এগিয়ে এল ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই)।

অনেকেই মনে করেন, গ্রামের ‘বারনাওয়া’ নামটা আসলে ‘বারনাবত’-এর অপভ্রংশ, মহাভারতের কাহিনি অনুযায়ী যে বারনাবতে স-কুন্তি পাণ্ডবদের পাঠানো হয়েছিল জতুগৃহে পুড়িয়ে মারার জন্য। স্থানীয় বাসিন্দা এবং ইতিহাসবিদদের একাংশের দাবি, ওই গ্রামে যে সুড়ঙ্গ মিলেছে, কৌরবদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সেটি দিয়েই পালিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন পাণ্ডবরা! শুধু তাই নয়, সুড়ঙ্গমুখের কাছে রয়েছে একটা বিশাল ঢিবি-ও। এই ঢিবিটাই নাকি সেই পুড়ে যাওয়া ‘লাক্ষাগৃহ’র ধ্বংসাবশেষ।

এএসআই-এর দুটি কেন্দ্র এখন বারনাওয়া গ্রামে কাজে নেমেছে। দিল্লির দ্য ইনস্টিটিউট অব আর্কিওলজি এবং এএসআই-এর খননকার্য শাখা। একটি দল ইতিমধ্যেই বারনাওয়া গ্রামে পৌঁছে কাজ শুরু করে দিয়েছে। বাগপতের আশপাশে এর আগেও বহু প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসপত্র খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু বারনাওয়া গ্রামে খননকার্যের ব্যাপারে তারা যে অত্যন্ত সাবধানে পদক্ষেপ করতে চলেছে সে বিষয়ে স্পষ্ট জানিয়েছে এএসআই। ইনস্টিটিউট অব আর্কিওলজি-র ডিরেক্টর এস কে মঞ্জুল বলেন, “সবে কাজ শুরু হয়েছে। এখনই স্থানটির গুরুত্ব সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না।”

আরও পড়ুন: দিল্লি বিধানসভায় টিপুর ছবি, বিতর্ক

আরও পড়ুন: হানাদার কারা

যদিও মোদীনগরের মুলতানি মাল পিজি কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কৃষ্ণকান্ত শর্মার দাবি, “বারনাওয়াতে যে ঢিবি পাওয়া গিয়েছে সেটিই কৌরবদের তৈরি ‘লাক্ষাগৃহ’। তাঁরা পাণ্ডবদের থাকার জন্য এটি তৈরি করেছিলেন। এখানেই পাণ্ডবদের হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন তাঁরা। খননকাজ হলে সবটাই উদ্ধার হবে।”

রামায়ণের মতো মহাভারতের কাহিনিধারাও কোনও ঐতিহাসিক ঘটনাবলী হিসেবে স্বীকৃত নয়। এর কোনও প্রামাণ্য নিদর্শন নেই। যদিও ইতিহাসবিদরা মনে করেন, দুই মহাকাব্যেই রয়েছে তত্কালীন সমাজ, রাজনীতি, ধর্মবোধের উপাদান। লোককাহিনি, চারণকথা, মহাকাব্যকে ইতিহাস বলে ধরে নেওয়া না গেলেও, এর ঐতিহাসিক গুরুত্বকে অস্বীকার করেন না কেউ। এমনকী বাস্তব ঘটনাবলীর ছায়াও অঙ্গীভূত হয়ে থাকে এ সবে।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কি সত্যিই হয়েছিল? কৌরবে-পাণ্ডবে সিংহাসন দখলের লড়াই কি ঘটেছিল? ঘটলে তার সঙ্গে মহাভারতের কাহিনির মিল কতটা। এ নিয়ে ইতিহাসবিদদের কাছে কোনও স্পষ্ট উত্তর নেই। অনেকে মনে করেন, বাস্তবে স্থানীয় স্তরের কোনও এক রাজপরিবারের অন্তর্দ্বন্দ্বের কাহিনিই লোকমুখে এবং চারণ কবিদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল নানা জায়গায়। তার পর মহাকবির হাত ধরে তা বিশাল এবং মহাকাব্যিক আকার পেয়েছে।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের যে সময়কাল ইতিহাসবিদরা ধারণা করেছেন, তার মধ্যেও বিস্তর ফারাক। কারও মতে সেটি ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কিছু আগে। অনেকের মত, ১২০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে এটি ঘটেছিল। অন্যান্য মতও রয়েছে।

উত্তরপ্রদেশের বারনাওয়া গ্রামের সুড়ঙ্গ এবং ঢিবি খুঁজে ঐতিহাসিক উপাদান মিলতেই পারে। তাতে ইতিহাস সমৃদ্ধ হবে সন্দেহ নেই, বারনাওয়া গ্রাম মহাভারতের বারনাবত হোক বা না-ই হোক।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE