Arun Jaitley established himself as the troubleshooter dgtl
Arun Jaitley
ভোটের ময়দানে সাফল্যের হার প্রায় শূন্য, কিন্তু মুশকিল আসান সেই জেটলিই
ভোজনরসিক হিসেবেও সুবিদিত ছিলেন তিনি। ভালবাসতেন খেতে এবং খাওয়াতে। পছন্দ ছিল দামি শাল, কলম ও ঘড়ি। সুমধুর ব্যবহারের জন্য বিরোধী মহলেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল অবিসংবাদী। উপকার করার সময় রাজনীতির রং দেখতেন না।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৯ ১৩:৪৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি বজায় থাকত শত সঙ্কটেও। নিজে রাজা না হলেও কিংমেকার ছিলেন বরাবর। ভারতীয় রাজনীতিতে সৌজন্য ও আভিজাত্যের ঘরানার প্রতীক ছিলেন অরুণ জেটলি।
০২১৯
জন্ম ১৯৫২-র ২৮ ডিসেম্বর, দিল্লিতে। বাবা মহারাজ কিশন জেটলি ছিলেন আইনজীবী। মা, রতনপ্রভা ছিলেন গৃহবধূ। দেশভাগের পরে লাহৌর থেকে অমৃতসরে চলে এসেছিল এই পঞ্জাবি ব্রাহ্মণ পরিবার।
০৩১৯
মেধাবী ছাত্র জেটলি দিল্লির সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের পরে ভর্তি হন শ্রী রাম কলেজ অব কমার্সে। বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পরে এলএলবি ডিগ্রি লাভ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সাতের দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দি থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের ছাত্রনেতা থেকে রাজনীতিক জয়প্রকাশ নারায়ণের ঘনিষ্ঠ।
০৪১৯
১৯৮২ সালের ২৪ মে বিবাহ। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী গিরিধারী লাল ডোগরার মেয়ে সঙ্গীতাকে। তাঁদের দুই সন্তান, রোহন ও সোনালি। দু’জনেই পেশায় আইনজীবী।
০৫১৯
১৯৭৫-৭৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থার সময়ে তিনি দেড় বছর কারাবাস ভোগ করেন। রাজনীতিক হওয়ার ভিত্তিপ্রস্তর মজবুত হয়েছিল কারাজীবনেই। মুক্তির পরে তিনি যোগ দেন জনসঙ্ঘে। এবিভিপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদকও হয়েছিলেন তিনি।
০৬১৯
রাজনীতির পাশাপাশি চলতে থাকে আইনচর্চাও। ১৯৮৭ থেকেই তিনি সুপ্রিম কোর্ট এবং দেশের বেশ কয়েকটি হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করতেন। ১৯৮৯ সালে তাঁকে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল নিযুক্ত করে ভি পি সিংহ-র সরকার।
০৭১৯
বফর্স কেলেঙ্কারির তদন্তের পেপারওয়ার্ক তিনিই করেছিলেন। ১৯৯৮-এর জুনে রাষ্ট্রপুঞ্জের জেনারেল অ্যাসেম্বলি সেশনে তিনি ছিলেন ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি।
০৮১৯
পেপসিকো এবং কোকাকোলার মতো বহুজাতিক সংস্থার হয়েও মামলা লড়েছেন তিনি। মানালি থেকে রোটাং যাওয়ার পথে পাহাড়ের গায়ে ভঙ্গুর পাথরের গায়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার দায়ে ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্ট পেপসি-সহ মোট আটটি সংস্থাকে জরিমানা ধার্য করে। সেই মামলায় পেপসি-র হয়ে সওয়াল করেন জেটলি।
০৯১৯
২০০৪ সালে তিনি রাজস্থান হাইকোর্টে কোকাকোলার আইনজীবী হয়ে মামলা লড়েছিলেন। ২০০৯ সালে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস করা বন্ধ করে দেন তিনি।
১০১৯
দিল্লির ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ১৯৭৪ সালে জয়লাভই ছিল তাঁর শেষ নির্বাচন জয়। এরপর চল্লিশ বছর তিনি বিজেপির নির্বাচনী ও প্রচারকৌশল স্থির করলেও নিজে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি।
১১১৯
২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে প্রবল মোদী হাওয়াতেও তিনি পরাজিত হন অমৃতসর থেকে। তাতে অবশ্য দলে বা সরকারে তাঁর গুরুত্ব কমেনি।
১২১৯
তাঁর রাজনীতিক-জীবনে চোখ রাখলে দেখা যায়, তিনি ১৯৯১ থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির ন্যাশনাল এগজিকিউটিভ-এর সদস্য। ১৯৯৯ লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে তিনিই ছিলেন দলের মুখপাত্র।
১৩১৯
বাজপেয়ীর নেতৃত্বে এনডিএ সরকারে জেটলি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক ও আইন মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। মনমোহন সরকারের শেষ পাঁচ বছরে আক্রমণাত্মক বিরোধী দলনেতা হিসেবে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য।
১৪১৯
উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাত থেকে দীর্ঘ দিন রাজ্যসভার সাংসদ থেকেছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৪ ছিলেন রাজ্যসভার প্রধান বিরোধী নেতা। পরের পাঁচ বছর ছিলেন রাজ্যসভার নেতা।
১৫১৯
মোদীর সরকারে প্রথম পাঁচ বছর জেটলি ছিলেন ‘ট্রাবলশুটার’। যখনই সমস্যায় পড়েছেন, মোদী এগিয়ে দিয়েছেন জেটলিকেই। দলের ত্রাতা হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবেও জেটলির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
১৬১৯
দুঁদে আইনজীবী, অভিজ্ঞ রাজনীতিকের পাশাপাশি আদ্যন্ত ক্রিকেটপ্রেমীও ছিলেন তিনি। ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে এক দশকেরও বেশি সময় ছিলেন দিল্লি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।
১৭১৯
অন্য দলের নেতানেত্রী, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, আইনজীবী ও সাংবাদিক মহলে তাঁর বন্ধু অসংখ্য। ঘনিষ্ঠ মহলে দরবারি আড্ডায় ‘জেটলি স্পিন’ ছিল বহুচর্চিত। জেটলির এই নেটওয়ার্ক-ই ছিল দলের তথা কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পদ।
১৮১৯
ভোজনরসিক হিসেবেও সুবিদিত ছিলেন তিনি। ভালবাসতেন খেতে এবং খাওয়াতে। পছন্দ ছিল দামি শাল, কলম ও ঘড়ি। সুমধুর ব্যবহারের জন্য বিরোধী মহলেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল অবিসংবাদী। উপকার করার সময় রাজনীতির রং দেখতেন না।
১৯১৯
জটিল অসুখে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন সক্রিয় রাজনীতি থেকে। কিন্তু রোগযন্ত্রণাতেও মুখ থেকে মিলিয়ে যায়নি আভিজাত্যপূর্ণ স্মিত হাসি। চলে গেলেন সেই সুমধুর ভাবমূর্তি নিয়েই। জনমানসে রয়ে গেল ব্রিফকেস হাতে তাঁর বাজেট ঘোষণা করতে যাওয়ার ছবি এবং দিল্লির নর্থ ব্লকের বাতাসে হালুয়ার সুবাস।