কাকপক্ষীও টের পায়নি। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও জেনেছেন অনুপ চেটিয়া ভারতে চলে যাওয়ার পরে।
ঢাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা জানাচ্ছেন, কাল গভীর রাতে কালো কাচে ঢাকা টয়োটার একটি এসইউভি গাড়ি ঢোকে কাশিমপুর কারাগারে। মিনিট কুড়ি পরে বেরিয়ে এসে সেটি দ্রুত গতিতে পৌঁছে যায় ভারতীয় হাই কমিশনের দফতরে। সেখানে নামেন অনুপ চেটিয়া ও আরও দুই আলফা নেতা— যাঁরা এত দিন তাঁর সঙ্গেই কারাগারে ছিলেন। গাড়িটি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। তিন আলফা নেতাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে কথা বলেন হাই কমিশনের এক পদাধিকারী। আবার তিন জনকে তোলা হয় এসইউভি-তে। রাত সাড়ে তিনটের সময়ে সেটি দৌড় দেয় বেনাপোল সীমান্তের দিকে। আড়িচাঘাটে তৈরিই ছিল বিশেষ ফেরি। পদ্মা পেরিয়ে মাগুরা, যশোর হয়ে আজ সকাল সাড়ে ন’টায় বেনাপোল সীমান্ত পেরোয় সেই গাড়ি। সেখানে অপেক্ষা করছিল সিবিআইয়ের একটি বিশেষ দল। অনুপদের নিজেদের গাড়িতে তুলে সিবিআই অফিসারেরা পৌঁছে যান দমদম বিমানবন্দরে। সেখান থেকে বিশেষ বিমানে সোজা দিল্লি। বেলা আড়াইটে নাগাদ দিল্লি পৌঁছন অনুপ।
গোয়েন্দাদের অন্য একটি সূত্র অবশ্য বলছে— বেনাপোল নয়, সিলেটের ডাউকি দিয়ে ভারতে ফেরানো হয়েছে অনুপকে। তবে বেনাপোলেও বন্দোবস্ত ছিল। অসম থেকে বিশেষ বিমানে অনুপকে দিল্লি নিয়ে গিয়েছে সিবিআই।
বাংলাদেশ পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে ঢাকায় প্রায়ই দেখা যেত রোগা পাতলা চেহারার এক তরুণকে। দু-এক জন বামপন্থী ছাত্র নেতার সঙ্গে হাজির হতেন জাতীয় প্রেস ক্লাবে। তিনি যে অসম থেকে আসছেন, অসমকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, সে সব কথা আড্ডার ছলে অক্লেশে বলে যেতেন। ঢাকার সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, তাঁদের নানা বইপত্র দিতেন। অনেকে তাঁর কথা শুনে অবাক হতেন, কেউ বা বাতুলতা বলে উড়িয়ে দিতেন। কিন্তু ঠান্ডা মাথার ছেলেটি তাঁর সংগঠন ‘উলফা’-র (তিনি এই নামই বলতেন) অগাধ ক্ষমতার কথা বলেই যেতেন। তিনিই অনুপ চেটিয়া।
বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৯৭-এ তাঁকে গ্রেফতার করার পর থেকে বাংলাদেশের নানা জেল তাঁর স্থায়ী বাসস্থান হয়ে ওঠে। ভারত সরকার ১৮ বছর ধরে বার বার ঢাকার কাছে দাবি করে এসেছে— আলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর করা হোক। অসমে তাঁর বিরুদ্ধে খুন, গণহত্যা, তোলাবাজির অজস্র মামলা রয়েছে। ভারতের আদালতে সেগুলির বিচার হোক। কিন্তু সাত বছর কারাবাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও বাংলাদেশ সরকার তাঁকে নিরাপদ হেফাজতে ঢাকার কাশিমবাজার জেলেই রেখে দেয়। আদালত অনেক বার জানতে চেয়েছে, তিনি কি দেশে ফিরতে চান? অনুপের উত্তর ছিল— না।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মে মাসে ঢাকায় এসে চেটিয়াকে ফেরানোর বিষয়ে শেখ হাসিনাকে রাজি করিয়ে যান। এর আগে দিল্লির সুনির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে আলফার সব ঘাঁটি উচ্ছেদ করেছে হাসিনা সরকার। অরবিন্দ রাজখোয়া-সহ আলফার অন্তত সাত জন বড় নেতাকে আটক করে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। ভারতে গিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করেছেন আলফা নেতারা। পরেশ বরুয়া আলাদা দল গড়েছেন। এখন অনুপও আলোচনাপন্থী। মাস তিনেক আগে লিখিত ভাবেই বাংলাদেশ সরকারকে জানান, তিনি দেশে ফিরতেই চান।
অবশেষে ফিরলেন চেটিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy