৩২৫-এর পাল্টা ২৩৫! নাকি চাপের নতুন কৌশল?
মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবকে না জানিয়ে উত্তরপ্রদেশের ৪০৩টি আসনের মধ্যে ৩২৫টির প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছিলেন বাবা মুলায়ম সিংহ যাদব ও কাকা শিবপাল যাদব। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পেরোতেই অখিলেশের অনুগামীরা দলের পাল্টা প্রার্থী তালিকা সামনে নিয়ে এলেন। কারও স্বাক্ষর ছাড়া ২৩৫ জনের এই তালিকা মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা তালিকা বলে দাবি করতে থাকেন সমর্থকরা। তবে এই খবর লেখার সময় পর্যন্ত অখিলেশ নিজে তালিকাটির সত্যতা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে আজ দুপুরে মুলায়মের সঙ্গে দেখা করে অখিলেশ পাল্টা প্রার্থী দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসার কারণেই রাতের তালিকা নিয়ে সমাজবাদী পার্টির অন্দরে তুমুল টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এটা অখিলেশ শিবিরের পাল্টা চাপের কৌশল।
গত কাল সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ ছিলেন বুন্দেলখণ্ডে। তিনি লখনউয়ের বাইরে থাকার সময়েই তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন শিবপাল। তালিকায় বাদ পড়েছিলেন অখিলেশ ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী-বিধায়করা। এদের সংখ্যাটা প্রায় ৪২। এই নেতারা আজ সকালেই ভিড় জমিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ৫ নম্বর কালিদাস মার্গের বাসভবনে। তাঁদের ক্ষোভের কথা শোনেন অখিলেশ। তার পর ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী হেস্তনেস্ত করতে পৌঁছন মুলায়মের কাছে। ওই বৈঠকে হাজির হন শিবপাল। অখিলেশ তাঁদের জানিয়ে দেন, যদি তালিকা প্রত্যাহার করা না হয়, তা হলে তিনি ২০০ জনের পাল্টা তালিকা ঘোষণা করে দেবেন। প্রয়োজনে এই প্রার্থীরা নির্দল হিসেবে লড়বেন কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে। দুপুরের বৈঠকে বরফ গলেনি। রাতে সামনে এল পাল্টা তালিকা।
ভোটের আগে উত্তরপ্রদেশে যাদব পরিবারের মহাভারত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল অনেক। মুলায়ম পরিবারের ঘনিষ্ঠরা জানেন, এ সবের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে পরিবারের ভিতরের রসায়ন। এক দিকে পিতৃভক্তি অন্য দিকে বিমাতার কোপ! আর এই দ্বন্দ্বের নেপথ্যে বিতর্কিত চরিত্র অমর সিংহ। মুখ্যমন্ত্রী বুঝছেন, গত কাল একতরফা তালিকা ঘোষণার পিছনেও ‘খলনায়ক’ হলেন অমর সিংহ। তিনি সঙ্গে নিয়েছেন মুলায়মের দ্বিতীয় স্ত্রী সাধনা আর তাঁর কুস্তিগীর পুত্র প্রতীককে। অখিলেশের সঙ্গে চিরকালই দুরত্ব রয়েছে এঁদের। তিনি একা একা আলাদা বাড়িতে থেকেছেন স্ত্রী ডিম্পলকে নিয়ে। প্রতীক কিন্তু বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকেন। অখিলেশ-ঘনিষ্ঠ বিধায়ক জগদীশ যাদব বলেন, ‘‘বাবা ছেলের সম্পর্ক খারাপ নয়। কিন্তু টিপু কোনও দিনই ছোটমাকে মেনে নিতে পারেননি। সহ্য করতে পারেননি সৎভাই প্রতীককে।’’ অখিলেশের মা বেঁচে নেই। কিন্তু প্রতীকের মা সাধনা, ছেলে ও তাঁর বাহিনীকে টিকিট দিতে মরিয়া। এই কাজটি শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়েছে অমর সিংহের জন্য। পরিবারের লড়াই লখনউকে যখন উত্তাল করে দিয়েছে, তখন অমর সিংহ কোথায়? তিনি রয়েছেন পর্দার আড়ালে। তিনি যেন এক অদৃশ্য শক্তি।
যা পরিস্থিতি, তাতে লখনউয়ে রাজনীতির মূল লড়াইটা সমাজবাদী পার্টির মধ্যেই। প্রশ্ন উঠেছে, অখিলেশ কি তাঁর অনুগতদের নির্দল হিসেবে লড়তে বলবেন? নাকি চাপ আরও বাড়িয়ে যাবেন? কংগ্রেসও ১০০-র কমে জোট করবে না বলছে। তারা পাল্টা চাপ বাড়াচ্ছে। মুলায়ম জানিয়েছিলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হবে না। কিন্তু প্রার্থী তালিকাতে ৭৮টি আসন খালি রেখেছেন তিনি। এটাও এক রহস্য। এই আসনগুলি নিয়ে মুলায়ম কোন পথে এগোন, সেটাও দেখার। অখিলেশ বলছেন, ৪০৩ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর একটি তালিকা তিনি মুলায়মকে দিয়েছিলেন। কলঙ্কিত নন, এমন নেতাদের টিকিট দিতে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করিয়েছিলেন। তবে শিবপাল পাল্টা বলেছেন, তিনিও সমীক্ষা করে যারা জিতবেন এমন নেতাদেরই টিকিট দিয়েছেন।
মুলায়ম পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর প্রার্থী হিসেবে অখিলেশের নাম ঘোষণা করেননি। অখিলেশ আজ বলেছেন, এ ব্যাপারে তিনি চিন্তিত নন। বিজেপির মোকাবিলায় একজোট হওয়াটাই জরুরি। অখিলেশ শিবির মনে করছে, অমর বিজেপি-র হয়েই কাজ করেছেন। এখন স্নাযুযুদ্ধে মুলায়ম শেষ পর্যন্ত স্ত্রী ও পুত্র প্রতীকের পক্ষ নিয়ে অমরের রাজনীতির প্রতিই সমর্থন রাখবেন নাকি টিপুকেই সমর্থন করবেন— সেটাই দেখার।
অখিলেশ ঘনিষ্ঠ এক বিধায়ক বলেন, কুস্তিগির মুলায়ম জীবনে ডিগবাজি অনেক দেখিয়েছেন। এই নেতাদের অভিযোগ, লোহিয়াপন্থী নেতাজি এক নেতার পাল্লায় পড়ে বিপথগামী হয়েছিলেন। এখন নেতাজির গোপন সিডি রেখে তাঁকে কেউ কেউ ব্ল্যাকমেল করতে চাইছেন। এই নেতাদের মতে, সে জন্যই শুরুতে ‘গটবন্ধনে’ রাজি হয়েও মুলায়ম এখন জোট গঠনে ‘না’ বলে দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy