জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) ছাত্র সংসদ এ বারও দখলে রাখল ‘অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ বা আইসা।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল ফলের পরে জেএনইউ-এর ছাত্র নির্বাচনে সভাপতি, সহ-সভাপতি-সহ চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদে জিতলেন আইসা-র প্রতিনিধিরা। নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ভাবে ভাল করেছে বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি (অখিল ভারত বিদ্যার্থী পরিষদ)। প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে ছাত্র সংসদের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তারা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, দু’বছরের খরা কাটিয়ে এই নির্বাচনে জেএনইউ-এ ফের মাথা তুলল এসএফআই। ছাত্র সংসদের সভাপতি পদে ৮৯০ ভোট পেয়েছে এসএফআই। গত বার যেখানে তাদের ভোট ছিল তিনশোর কিছু বেশি মাত্র। সাধারণ সম্পাদক পদেও এ বার তাদের প্রাপ্ত ভোট ৭৫৮। এই দুই পদেই দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে তারা। জেএনইউ-এ ভাল ফল খানিকটা নিশ্চিন্ত করেছে বিজেপি শিবিরকেও। এসএফআই-এর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এই জয়কে ঘুরে দাঁড়ানো বলেই ব্যাখ্যা করেছেন।
নন্দীগ্রামের সময় থেকে দেশের এই খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল এসএফআই। সিপিএমের প্রাক্তন নেতা প্রসেনজিৎ বসুর অনুগামীদের সংগঠন থেকে বহিষ্কারের পরে গত দু’বছরে তাদের হাল হয়েছিল আরও শোচনীয়। সেই জেএনইউ-তেই কিছুটা ঘুরে দাঁড়াল এসএফআই। এ বারের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ২০টি কাউন্সিলর পদের ছ’টিতে জিতেছে সিপিএমের এই ছাত্র সংগঠন। তাদের চেয়ে মাত্র এক জন কাউন্সিলর বেশি পেয়ে এক নম্বর জায়গা দখল করেছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের ছাত্র সংগঠন আইসা। দেশ জুড়ে লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বামেরা যখন একেবারেই কোণঠাসা, সেই সময় জেএনএইউয়ে এসএফআই-এর ফল কিছুটা অক্সিজেন দেবে সিপিএমকে।
সীতারাম ইয়েচুরির মতো নেতাদের এক কালে জেএনএউ থেকেই আবিষ্কার করেছিল সিপিএম। ইদানীং সেই প্রতিষ্ঠানেই অবশ্য প্রবল মন্দায় ভুগছে তাদের ছাত্র সংগঠন। দু’বছর আগে প্রসেনজিতদের সঙ্গে বিবাদের জেরে সেখানকার এসএফআই ইউনিট ভেঙে দেওয়ার পরে তাদের ফিরে আসা আরও কঠিন হয়েছিল। সেখানেই এ বার জয়ের বার্তা নিয়ে এসেছেন সুদীপ কুমার, কে জে নিসাম আসফ, দীপ্সিতা ধর, এস বালুর মতো ৬ কাউন্সিলর। এসএফআইয়ের জেএনইউ শাখাটিই ভেঙে যাওয়ার সময় থেকেই বিকল্প শক্তিশালী দল হিসেবে উত্থান আইসা-র। নির্ভয়া-কাণ্ডের প্রতিবাদের মতো বেশ কিছু ঘটনায় আইসা-র ভূমিকা, ক্যাম্পাস রাজনীতিকে মুখ্য করে পড়ুয়াদের পাশে থাকায় দ্রুত জনপ্রিয়ও হয় তারা। গত বছরেও জেএনইউ-এর ছাত্র সংসদ দখল করেছিল আইসা।
আইসা-র তরফে জানানো হয়েছে, জেএনইউ-এর পড়ুয়াদের কাছে আইসা-র পরিচিতি থাকলেও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও জনভিত্তি ছিল না তাদের। তবুও সেখানে ভাল ফল হয়েছে। দলের নেতাদের মতে, এ থেকে থেকে স্পষ্ট যে ছাত্রছাত্রীরা বিকল্প রাজনীতির দিকে ঝুঁকছে। দলের দিল্লি শাখার সচিব সানি কুমার বলেন, “দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৩ হাজার ছাত্র-ছাত্রী অর্থ ও বাহু বল নির্ভর রাজনীতি ছেড়ে আইসার পাশে দাঁড়িয়েছেন। বহু নতুন কলেজে আমাদের প্রার্থীরা ভাল ফল করেছে। আশা করছি, অদূর ভবিষ্যতে ওই কলেজগুলিতেও আইসা-র প্রসার হবে।” বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে থেকে দু’বছরের মধ্যে যে ভাবে সাংগঠনিক ইউনিটকে সাজিয়ে তুলতে পেরেছেন এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সভাপতি ভি শিবদাসন, তার জন্য তাঁকেই যাবতীয় কৃতিত্ব দিচ্ছেন ঋতব্রত থেকে সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতারাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy