দেশবাসী রায় দিয়েছে পাঁচ বছরের জন্য। কিন্তু তার মধ্যেই অন্তত দশ বছর ক্ষমতায় থাকার পথ পাকা করে নিতে হবে। কী ভাবে পূরণ হবে সেই লক্ষ্য, দল এবং আরএসএস নেতৃত্ব আজ সেই পথ বাতলে দিলেন বিজেপির নবাগত সাংসদদের। তারই সূত্রে এ দিন নরেন্দ্র মোদীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। কিন্তু সেই প্রশংসার মধ্যেও বিঁধে রইল পরীক্ষার কাঁটা। এক সময়ের ঘোষিত মোদী-বিরোধী এই বর্ষীয়ান নেতা আজ প্রধানমন্ত্রীর সামনে রাখলেন নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ।
দিল্লির উপকণ্ঠে সুরজকুণ্ডে বিজেপির দু’দিনের কর্মশালা। বেনজির ভাবে তাতে সামিল করা হয়েছিল আরএসএসকেও। গত কাল এই কর্মশালায় নবাগত সাংসদদের পাঠ পড়িয়েছেন প্রথম বারের সাংসদ প্রধানমন্ত্রী। আজ ছিল আরএসএস এবং দলের অন্য নেতাদের পালা। মোদী কাল যে সুরটি বেঁধে দিয়েছিলেন, আজ সেই সুরেই কথা বলেন তাঁরা। তবে এক ধাপ এগিয়ে আরএসএস নেতা সুরেশ সোনি ১৬ মে-র তুলনা করেন দেশ স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে। বলেন, “ব্রিটিশরা দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় যে অনুভূতি হয়েছিল, বিজেপির জয়েরও দিনটিও ছিল সে রকম। এ বারে যেটি প্রয়োজন, তা হল সঙ্ঘের বিচারধারার সঙ্গে কোনও আপস না করেই মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করা।”
সমাপ্তি বক্তৃতায় মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে আডবাণী বলেন, “প্রথম থেকেই দলকে বুঝতে হবে, অন্তত দশ বছর ক্ষমতায় থাকতে হবে। প্রত্যেক সাংসদকে আবার জিতে আসতে হবে। ২০০৪-এ হেরে যাওয়ার পর থেকে বিজেপিকে ক্ষমতায় ফেরানোর স্বপ্ন ছিল আমার। নরেন্দ্র মোদী আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। ক্রিকেটের টেস্ট ম্যাচে শুরুতেই অনেক ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি, ডবল সেঞ্চুরি করেন। কিন্তু প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হয়েই নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে এনডিএ-কে নিয়ে ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, তার জন্য তাঁকে অভিনন্দন।”
কিন্তু এর পরেই মোদীর সামনে লক্ষ্য বেঁধে দেন আডবাণী। তাঁর পরামর্শ, শুধুই বড় বড় ক্ষেত্রে নয়, পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থা, সেচ, কন্যা-শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশের মতো যে সব বিষয়ের সঙ্গে গরিব মানুষের স্বার্থ জড়িত সেই সব ক্ষেত্রেও উন্নয়ন ঘটাতে হবে এই সরকারকে। আডবাণী মনে করিয়ে দেন, অতীতে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের কর্মসূচি তৈরি হত না বলেই তা সফল হয়নি। সেই দিক থেকে উন্নয়নকে গণআন্দোলনে পরিণত করার কথা বলে প্রধানমন্ত্রী মোদী ঠিক কাজই করেছেন। কিন্তু আগামী ৫-১০ বছরে বিভিন্ন মাপকাঠিতে বড় সাফল্য অর্জন করতে হবে। আডবাণীর কথায়, “আমি চাইব স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকে ভারতের মান আরও উঁচুতে তুলে আনবেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে ভারত রয়েছে ১৩৪ নম্বরে। সেটাকে ৫০-এর কম করা উচিত। দলের নতুন সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নিয়ে এই বিষয়টি সুনিশ্চিত করা দরকার।”
আরএসএস এবং বিজেপির অন্য নেতারা কেউ এ ভাবে লক্ষ্য বেঁধে দেওয়ার পথে হাঁটেননি। তবে আম দেশবাসীর স্বার্থে নতুন সাংসদদের কী করতে হবে, সেই প্রসঙ্গে তাঁদের পরামর্শ, এখন আর কথায়-কথায় কংগ্রেসের বিরোধিতা করে কাজ নেই। ভোটে কংগ্রেস এতই ধরাশায়ী হয়েছে যে, তারা বিরোধী নেতাও দিতে পারছে না। এ কে অ্যান্টনির মতো নেতাও এখন বলছেন, কংগ্রেসের সংখ্যালঘু তোষণের নীতি ভুল। মানুষও তাদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েই বিজেপিকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। এই অবস্থায় সরকারের কাজকে জনতার আরও কাছে পৌঁছে দেওয়াই লক্ষ্য হওয়া উচিত বিজেপির প্রত্যেক সাংসদের। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে প্রধানমন্ত্রীকে যদি কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তা হলে তার প্রয়োজনীয়তাও বোঝাতে হবে মানুষকে। কোনও অবস্থাতেই সাধারণ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া চলবে না। শুধু নিজের কেন্দ্র নয়, নিজ-রাজ্যের সমস্যাও সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে হবে সাংসদদের। বিজেপির কাছে সাধারণ মানুষের যে প্রত্যাশা রয়েছে, তা পূরণ করার দায় প্রতিটি সাংসদের। আর সেই প্রত্যাশা পূরণ হলেই মানুষ আবার ভোটে জিতিয়ে সংসদে পাঠাবেন। দলের সব সাংসদ যদি ফের জিতে আসেন, তবেই পূরণ হবে দশক জুড়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার লক্ষ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy