Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

সন্তান ভুলিয়েছে যন্ত্রণা, লক্ষ্মীর মুখে তৃপ্তির হাসি

দ্বিগুণ বয়সের এক ব্যক্তির প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়েছিলেন তিনি। প্রত্যাখ্যানের ফল হিসেবে মুখে আছড়ে পড়েছিল অ্যাসিডের বোতল।

মেয়েকে বুকে জড়িয়ে। ছবি: পিটিআই।

মেয়েকে বুকে জড়িয়ে। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৯
Share: Save:

দ্বিগুণ বয়সের এক ব্যক্তির প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়েছিলেন তিনি। প্রত্যাখ্যানের ফল হিসেবে মুখে আছড়ে পড়েছিল অ্যাসিডের বোতল।

মাঝে কেটেছে দশটা বছর। সে দিনের ষোড়শী আজ তরুণী। এবং সেই সঙ্গে মা-ও। মাস কয়েক আগে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন লক্ষ্মী। এ দেশে অ্যাসিড হানার শিকার হওয়া মেয়েদের মুখ তিনিই।

ঘটনা ২০০৫ সালের। নয়াদিল্লির বাসিন্দা লক্ষ্মীর তখন বছর ষোলো বয়স। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েটি তখন নবম শ্রেণির ছাত্রী। কয়েক দিন ধরেই তাঁকে উত্যক্ত করছিল এক ব্যক্তি। তার প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় সে-ই লক্ষ্মীকে অ্যাসিড ছুড়ে মারে। তীব্র জ্বালা-যন্ত্রণা কাটিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন লক্ষ্মী।

কিন্তু তত দিনে শুধু লক্ষ্মীর মুখই নয়, বদলে গিয়েছে গোটা জীবনটাও।

এর মধ্যে লক্ষ্মীর সঙ্গে আলাপ হয় আলোক দীক্ষিতের। বছর আঠাশের আলোক অ্যাসিড হানার শিকার হওয়া মেয়েদের নিয়ে কাজ করেন। এই সংক্রান্ত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত তিনি। একই জায়গায় কাজ করতেন লক্ষ্মীও। কাজের সূত্রেই আলাপ দু’জনের। তার পর প্রেম। শেষ কয়েক বছর ধরে লক্ষ্মী আর আলোক লিভ-ইন করছেন। কিন্তু একে অপরকে বিয়ে না করার সিদ্ধান্তই নিয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যে লক্ষ্মী পেয়েছেন বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। খোদ মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার হাত থেকে সাহসিকতার পুরস্কার নিয়েছেন তিনি। অংশ নিয়েছেন ফ্যাশন শোয়েও। অ্যাসিড হানা বিরোধী নানা প্রচারে এখন হামেশাই দেখা যায় লক্ষ্মীর মুখ।

মাস সাতেক আগে জন্মেছে লক্ষ্মী-আলোকের মেয়ে পিহু। লক্ষ্মী চান, তাঁর মতো মেয়েরও পদবি থাকবে না। আলোক জানিয়েছেন, জন্মের শংসাপত্র তৈরির সময় সমস্যা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন সব ঠিকই আছে।

কিন্তু এত দিন পরে সন্তানের জন্মের খবর সংবাদমাধ্যমে জানালেন কেন? আলোকের বক্তব্য, ‘‘সম্প্রতি লক্ষ্মীর বাবা আর এক ছোট ভাই মারা গিয়েছেন। তাই হইচই করতে চাইনি। নিজেদের কাজ নিয়েও আমরা খুব ব্যস্ত থাকি। মেয়ে জন্মানোর পর থেকেই প্রচারের আলোয় থাকুক, তা-ও আমরা চাইনি। তবে এখন মনে হল, সময় এসেছে সবাইকে সুখবরটা জানানোর।’’ পিহুর জন্মানোর পরে যে তাঁদের সম্পর্কটা বদলাবে না স্পষ্ট জানান আলোক। একসঙ্গে থাকার জন্য বিয়ে নয়, দু’জনের মধ্যে ভালবাসাটাই দরকার বলে মনে করেন তাঁরা। আলোক বলেন, ‘‘আমার পরিবার খুব রক্ষণশীল। সম্পর্কটা মানতে বাবা-মায়ের খুব অসুবিধে হয়েছিল। পরে অবশ্য ভালবাসারই জয় হয়েছে।’’

আজ সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মা হওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন লক্ষ্মী। বলেছেন ‘‘অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় খুব দুর্বল ছিলাম। ক্ষত সারাতে অস্ত্রোপচার করতে হয়। চিকিৎসকরা বলেছিলেন নিজের আর সন্তানের খুব যত্ন নিতে।’’ মা হওয়ার পর পর একটা আতঙ্ক তাঁকে কুড়েকুড়ে খেত। ‘‘পিহু আমার পুড়ে যাওয়া মুখটা দেখে ভয় পাবে না তো? প্রশ্ন করতাম আলোককে। ও অবশ্য ভরসা
জোগাত সব সময়,’’ মুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে বললেন লক্ষ্মী।

অন্য বিষয়গুলি:

laxmi acid attack survivor baby
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE