Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

সূর্যোদয়ের শহরে

মাউন্ট আবুর হোটেল থেকে বেরিয়েছি সেই কোন সকালে। পথ টেনে নিয়ে চলেছে রাজপুতানার এক ঐতিহাসিক শহরে। সে শহরের ধুলোয় মিশে আছে রাজপুতদের বীরগাথা আর কত অব্যক্ত প্রেমকাহিনি। রুক্ষ পাথরের বুক চিরে পথ এগিয়ে চলেছে পাহাড়ি সাপের মত এঁকেবেঁকে। আমি দেখি দু’চোখ ভ’রে – এই কঠিন পাথুরে বালুময় দেশ, কিন্তু কি অপরূপ এ রাজ্যের মানুষের শিল্পবোধ! মেয়েদের পোশাকে কত রঙের বাহার!

পারমিতা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

মাউন্ট আবুর হোটেল থেকে বেরিয়েছি সেই কোন সকালে। পথ টেনে নিয়ে চলেছে রাজপুতানার এক ঐতিহাসিক শহরে। সে শহরের ধুলোয় মিশে আছে রাজপুতদের বীরগাথা আর কত অব্যক্ত প্রেমকাহিনি। রুক্ষ পাথরের বুক চিরে পথ এগিয়ে চলেছে পাহাড়ি সাপের মত এঁকেবেঁকে। আমি দেখি দু’চোখ ভ’রে – এই কঠিন পাথুরে বালুময় দেশ, কিন্তু কি অপরূপ এ রাজ্যের মানুষের শিল্পবোধ! মেয়েদের পোশাকে কত রঙের বাহার! ঘাগরার রঙের বিচিত্রতা যেন তপ্ত বালুকণা থেকে বিন্দু বিন্দু ক’রে ছেনে আনা জলের মতই মহার্ঘ। অবাক হয়ে ভাবি রাজপুতানার এই রুক্ষ ধূসর মরু-পাহাড়ের দেশে মানুষের পোশাকে এত রঙ আসে কোথা থেকে? না কি, প্রকৃতির কৃপণতা তারা পুষিয়ে নেয় নিজেদের নানা রঙে রাঙিয়ে! চোখের একঘেয়েমি, মনের একঘেয়েমি কাটানোর এও কি এক উপায়?

-তুমি যেমন মনের একঘেয়েমি কাটাতে আমাকে ডাকো!

কে? চমকে উঠি আমি!

-আমি কি তোমার মনে রঙের নেশা জাগিয়ে তুলি না?

আমি অবাক হই আর সেইসঙ্গে প্রচণ্ড এক ভাললাগায় আচ্ছন্ন হয়ে ওঠে মন। আমি জানতাম তুমি আসবে। কতদিন, কতদিন পর তোমার সঙ্গে আবার...

-আমিও তো অপেক্ষা করে থাকি, কবে তুমি তোমার চারপাশের ঘর গেরস্থালি, অশন-বসন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে ছেড়ে একলা হবে – সেই নিভৃত ক্ষণটিতে আমি আসব তোমাকে সঙ্গ দিতে!

একলা হওয়া! সবকিছুর থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজের মনের আয়নায় যখন চোখ রাখি, তখনই তো তোমাকে দেখতে পাই। রাজ আমার রাজ, তুমিই কেবল আমার সেই একান্ত নিজস্ব গোপন মনের ঘরের চাবি খুলতে পারো। শুধু তোমারই জন্য বোধহয় এই মনটা আজও বেঁচে আছে। তা না হলে কবেই ঐ ঘর-গেরস্থালির সোনার খাঁচায় মাথা খুঁড়ে মরতাম! অবশেষে রাজ এল। আমার চলার পথের আউল-বাউল সাথী; যার টানে মন কেবলই সংসারের বাঁধন ছিঁড়ে কোন অকূল দরিয়ায় নাও ভাসাতে চায়! সে কি বাউল না ফকির না দরবেশ – মুরশেদের নামে তার শুধুই পথচলা!

রাজ, চলেছি কোথায় তা তো তোমার কাছে অজানা নেই।

রাজ হেসে বলে, ওগো, পথের কি শেষ আছে? জীবনটাই তো এক চলার পথ, যতক্ষণ আছো এই পৃথিবীতে, চলো, চলো – চরৈবেতি। এ পথচলায় তোমার নিয়ম তো খাটবে না। যাঁর অমোঘ টানে ছুটে চলেছো এ পথ, সে যে তোমার মনে। সে যে তুমি হয়েই তোমাতে বসত করছেন গো। তাই তুমিই তোমার রাজা!

এবার বুঝলুম রাজ, আমি, তুমি আর ভিন্ন নেই গো। তুমিই আমি আবার আমিই তুমি! এক মন, এক আত্মা! কথা কইতে কইতে আমরা কখন ঢুকে পড়েছি উদয়পুর শহরে, সে খেয়াল নেই আমাদের! রাজের চোখে চাই আমি – কি সুন্দর ভাবের ঘোর তার চোখে! ওর চোখ আমাকে পাগল করে! মনে হয় যেন, কত জন্ম ধ’রে আমায় বেঁধে রেখেছে এ চোখ জাদুর টানে...। স-ব তাই ভুল হয়ে যায়; সমাজ, সংসার, পারিপার্শ্বিক...! নিশিতে পাওয়া মানুষের মত দিগবিদিগ্ শূন্য হয়ে ছুটে চলি।

আমি প্রশ্ন করি, হ্যাঁ গো, এই উদয়পুর যেন কবেকার ইতিহাসের একটা ছেঁড়া পাতা উড়িয়ে নিয়ে এসে ফেলল আমার সামনে?

রাজ বলে ওঠে, ‘দ্বিধা কিসের? চিনতে পারছ না? ঐ ছিন্ন পাতাখানায় কি কোন ছবি দেখতে পাচ্ছো না? ঐ তো উদয়পুরের পিছোলা হ্রদ, আরাবল্লী পাহাড় দিয়ে ঘেরা – সেই পাহাড়ে জঙ্গলে দেখতে পাচ্ছো না, দুটি ছোট ভিল ছেলেমেয়ে খেলে বেড়াচ্ছে। ঐ পাহাড় জঙ্গলের আদিম অধিবাসী ওরা...’ আমি রাজের সাথে চোখ রাখি পিছিয়ে যাওয়া সময়ের দীর্ঘ সরণীতে। ঐ ছোট ছেলেমেয়ে দুটি যেন বহুকালের চেনা – যেন রাজ আর আমি বহু জন্ম ধ’রে খেলা করে চলেছি ঐ ভিল ছেলেমেয়ে দুটির রূপ ধ’রে।

কত ছবি চলমান চিত্রের মত চোখের ওপর দিয়ে চলে যায়! ওই যে দূরে দেখা যায়, অশ্বারোহীর দল। কারা যেন জঙ্গলাকীর্ণ আরাবল্লী পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে আসছে টগবগ, টগবগ, টগবগ...। ঘোড়ার খুরের আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হতে থাকে গিরিকন্দরে। ভিল ছেলেমেয়েদুটির চোখে কৌতূহল! কারা আসছে ঘোড়ায় চড়ে?

আসছেন মেবারের রানা উদয় সিং। বেরিয়েছেন নতুন রাজধানী স্থাপনের আশায়। মেবারের রাজধানী চিতোর আর নিরাপদ নয়। বারবার শত্রুর আক্রমণে বিপর্যস্ত। উদয় সিং খোঁজ পেয়েছেন একটি জায়গার। আরাবল্লীর ঢালে চমৎকার আয়নার মত হ্রদ পিছোলা – সেই হ্রদের পাড়ে স্থাপন করবেন তিনি নতুন রাজধানী। পাহাড়ে ঘেরা এই মনোরম উপত্যকাটির আবহাওয়াও রাজপুতানার মরু-আবহাওয়ার তুলনায় মনোরম। আরাবল্লী পাহাড়ের এই অঞ্চলে পর্যাপ্ত জলের জন্য রয়েছে ঘন জঙ্গল, তাই খাদ্য বা শিকারের অসুবিধে নেই। পানীয় জলের অভাবও দূর করবে ঐ হ্রদ। ওই অঞ্চলের এক সাধু মহাত্মার আশীর্বাদ নিয়ে উদয় সিং স্থাপন করলেন নতুন রাজধানী উদয়পুর। ১৫৫৯ সালে পিছোলা হ্রদের ধারে স্থাপিত হল উদয়পুর প্রাসাদের ভিত্তিপ্রস্তর। এরপর ঐ প্রাসাদের বৈভব, আকার, আয়তন ধীরে ধীরে বেড়েছে পরবর্তী বাইশ জন মহারানাদের মাধ্যমে। উদয়পুরকে সূর্যোদয়ের শহর নামে অভিহিত করা হয়। এখানে উল্লেখ্য মেবারের মহারানারা ছিলেন সূর্যবংশীয়।

......এতক্ষণ রাজের সাথে ইতিহাসের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। সংবিৎ ফিরতেই দেখি দাঁড়িয়ে আছি পিছোলা লেকের সামনে। লেকের পাড়ে বিরাট সিটি প্যালেস। লেকের মধ্যে দেখা যাচ্ছে লেক প্যালেস বা জগ নিবাস। এটি তৈরি হয়েছিল মহারানা প্রথম জগৎ সিংহের আমলে ১৬২৮ থেকে ১৬৫২ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে। পরবর্তীকালে ১৯৬৩ সালে এটি লেক প্যালেস হোটেল হিসেবে খুলে দেওয়া হয়। পিছোলা লেকের আর একটি দ্বীপ প্রাসাদ হল জগমন্দির। ১৬২০ খ্রীষ্টাব্দে পিছোলা লেকের সংস্কারের সময় এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন মহারানা করণ সিং। কথিত আছে, এই প্রাসাদে জাহাঙ্গীরের পুত্র খুররম তাঁর পিতার বিরূদ্ধে বিদ্রোহ করার সময় কিছুদিন আশ্রিত ছিলেন। এই খুররমই পরবর্তীকালে শাহজাহান নামে দিল্লীর মসনদে আসীন হন।

উদয়পুর সিটি প্যালেসের প্রতিটি কক্ষে, বারান্দায়, অলিন্দে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসের অসংখ্য টুকরো টুকরো কথা ও কাহিনি। রাজপুত শৈলীর অনুপম চোখজুড়ানো কারুকার্যে খচিত এই প্রাসাদ। ভাবলে অবাক লাগে এই মরুর দেশ অকৃপণ ভাবে আমাদের উপহার দিয়েছে এমন নিপুণ শিল্পীদের, যাঁরা তাঁদের অনবদ্য শিল্পশৈলীকে চিরন্তন করে রেখে গিয়েছেন এখানে। এই প্রাসাদে সবথেকে বেশী যেটি চোখে পড়ল তা হল মহারানা প্রতাপের বীরগাথা। প্রাসাদের চিত্রে, অলংকরণে মহারানা প্রতাপ, যিনি কোনদিন মুঘলদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন নি – সেই বীরশ্রেষ্ঠের জয়গান। রাজপুতদের গর্ব মহারানা প্রতাপ। কি অসীম শক্তি আর মনোবলের অধিকারী ছিলেন তিনি। প্রাসাদে একটি চিত্রে দেখলাম – তরবারি দিয়ে বিপক্ষের অশ্বারোহী যোদ্ধাকে এক আঘাতে লম্বালম্বি ঘোড়াসুদ্ধ কেটে ফেলার ক্ষমতা রাখতেন তিনি। মনে পড়ে ১৫৭৬ সালের হলদীঘাটির যুদ্ধের কথা? সম্রাট আকবরের আদেশে রাজা মানসিংহের নেতৃত্বে বিশাল মুঘলবাহিনী তাদের হস্তীযূথ নিয়ে নামল লড়াইয়ের ময়দানে। এই লড়াইয়ে কিন্তু রাজপুতরাই এগিয়ে ছিল, যদিও রাজপুত সেনা সংখ্যায় ছিল অনেক কম। মরুপাহাড়ের তপ্ততা মুঘল সেনাদের কাহিল করে দিয়েছিল। তার ওপর ঐ পাহাড়ি অঞ্চলে হাতি নিয়ে লড়াই করাও খুব সহজসাধ্য ছিল না। যুদ্ধে হাতিদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য রাজপুতরা আবার ঘোড়ার মুখে একটি নকল শুঁড় ঝুলিয়ে দিত। এই লড়াই ছিল রাজপুতদের দেশপ্রেমের লড়াই। কিন্তু একটি ঘটনা যুদ্ধের গতি ঘুরিয়ে দিল মুঘলদের অনুকূলে। রানা প্রতাপকে আক্রমণ করলেন রাজা মান সিং স্বয়ং। এই আক্রমণে রানা প্রতাপের ঘোড়া চেতক মারাত্মক আহত হল এবং রানা প্রতাপও আহত হয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়লেন ওই হস্তীবাহিনীর আঘাতে। রাজপুত সৈন্যরা বীরের মত যুদ্ধ করছিল কিন্তু তাদের রানার আহত হওয়ার সংবাদে তারা মনোবল কিছুটা হারিয়ে ফেলল। এই সময় রানা প্রতাপকে মুঘলদের হাতে বন্দী হওয়া থেকে বাঁচাল তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি মান সিং ঝালা। সে তার আর প্রতাপের বর্ম বদলাবদলি করে প্রতাপকে চেতকের পিঠে চাপিয়ে দিল। প্রভুভক্ত চেতক তার বিধ্বস্ত পা নিয়েও প্রাণপণে ছুটে রানা প্রতাপকে নিয়ে গেল শ্ত্রুদের থেকে অনেকটা দূরে। হলদিঘাটির বিখ্যাত গিরিপথ সে এমন বিশাল লাফ দিয়ে পার হয়েছিল যে, তা আজও মানুষ মনে রেখেছে। প্রভুকে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিয়ে চেতক – মহারানা প্রতাপের বিশ্বস্ত ঘোড়া ঢলে পড়েছিল মৃত্যুর কোলে। রানা প্রতাপ প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলেন চেতকের মৃত্যুতে। কিন্তু তখন শোক করারও সময় নেই। মুঘলদের হাতে ধরা দেওয়া মানে মেবারকে স্বাধীন করার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দেওয়া। তাই ভাই শক্তি সিং এর ঘোড়া নিয়ে প্রতাপ আবার পথ চললেন – পিছনে তাড়া করে আসা মুঘল সৈন্যদের দৃষ্টি এড়িয়ে ছুটে চললেন আরাবল্লীর গভীর অন্দরে। পরবর্তীকালে ভিলদের সাহায্যে গেরিলা যুদ্ধ করে তিনি রাজপুতানার কিছু অংশ উদ্ধার করতে পেরেছিলেন মুঘলদের হাত থেকে কিন্তু চিতোর অধিকার করতে পারেন নি। তিনি তাঁর নতুন রাজধানী স্থাপন করেছিলেন অধুনা দুঙ্গারপুরের কাছে চাওয়ান্ধে। শেষমেষ গোগুণ্ডা, কুম্ভলগড়, রণথম্ভোর এবং উদয়পুর দখলে আনতে সমর্থ হয়েছিলেন। রানা প্রতাপের মৃত্যু হয় ১৫৯৭ খ্রীষ্টাব্দে এবং তাঁর মৃত্যুর পর উদয়পুর বা সূর্যোদয়ের শহর মেবারের রানাদের নতুন রাজধানী হয়ে ওঠে।

উদয়পুর সিটি প্যালেসে প্রবেশ করতেই এক বয়স্ক মানুষ এগিয়ে এলেন। প্রাসাদের সবচাইতে প্রবীণ গাইড তিনি। গাইড ছাড়া এই বিশাল প্রাসাদ ঘুরে দেখা সহজ নয়। তাই ওঁর সাথে সাথেই পা মেলালাম এবং ক্রমশঃ হারিয়ে যেতে লাগলাম ইতিহাসের অজস্র কাহিনির মধ্যে। প্রাসাদে দেখার জিনিস অজস্র – রাজস্থানী চিত্র, অস্ত্রশস্ত্র, বর্ম, তৈজসপত্র, রাজাদের দরবারকক্ষ, শয়নকক্ষ, জেনানা মহল, শিসমহল আরো কত কি! আর প্রতিটি জিনিসের পশ্চাতে রয়েছে কাহিনির উপসংহার। রাজস্থান যে শিল্পের আকর তা এই প্রাসাদ দেখলেই ধারণা করা যায়। বৃদ্ধ গাইডের পিছু পিছু হাঁটতে থাকি – এই সিঁড়ি, ঐ সিঁড়ি, এ ঘর, ও ঘর – পা কনকন করে। মনে মনে ভাবি এই বৃদ্ধ মানুষটি এখনও এই বয়সে জীবিকার তাগিদে এই প্রাসাদের অলিতে গলিতে নিয়ে চলেছেন দর্শনার্থীদের! প্রাসাদ দর্শন শেষ হয় এক সময়। শেষ হয় চার পাঁচশো বছরের অতীতকে দেখা। কত সমৃদ্ধ, কত চেতনাময় সে অতীত।

-কি, এবার মনে হচ্ছে কি না, কতদিনের যেন চেনা এই শহর! হয়তো কোন জন্ম আমরা অতিবাহিত করেছিলাম এই শহরের প্রাণকেন্দ্রে।

আমি মনে মনে ভাবি, রাজই বোধহয় ঠিক, এক জীবনে মানুষ কি কখনো তৃপ্ত হয়। কত জন্ম, কত জীবন সে পার করে দেয় এই মাটির পৃথিবীতে – বারে বারে ফিরে আসতে চায় অধরা মাধুরীকে ধরতে ছন্দের বন্ধনে! হয়তো ছিলাম কোনদিন – রাজ আর আমি – সাথী হয়ে...কবে সে আর মনে পড়ে না...জন্মান্তরের অন্তরালে হয়তো ঢাকা পড়ে গেছে...।

পিছোলা লেকের উত্তরে ফতে সাগর লেক। পিছোলা লেকের সঙ্গে একটি ক্যানাল দিয়ে যুক্ত এই লেকটি। ফতে সাগর লেক তৈরি করেছিলেন মহারানা জয় সিং। পরে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে এই লেকের পাড় ভেঙে গেলে এটি পুনর্নির্মাণ করেন মহারানা ফতে সিং। এই লেকের মধ্যে একটি ছোট্ট দ্বীপ আছে, যেখানে রাজস্থান সরকারের পক্ষ থেকে গড়ে তোলা হয়েছে একটি পার্ক – নেহরু গার্ডেন।

ফতে সাগরের কাছে একটি সুন্দর উদ্যান রয়েছে, যার নাম সহেলিয়োঁ কি বারি। রাজকন্যারা তাদের বান্ধবীদের নিয়ে এখানে খেলতে আসত। এখানে একটি বাঁধানো জলাশয়ে চমৎকার ফোয়ারা রয়েছে। আশেপাশের বাগানে অজস্র গাছ আর ফুলের মেলা। বিকেলবেলা ঘাসের গালিচায় বসে থাকতে বেশ ভালো লাগে।

উদয়পুরে রোপওয়েও আছে। দুধ তালাইতে দীন দয়াল পার্ক থেকে পাহাড়ের ওপর কারনীমাতা মন্দির পর্যন্ত রোপওয়ের ব্যবস্থা। এই রোপওয়ে থেকে উদয়পুর শহরের চমৎকার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।

উদয়পুর ঘুরতে ঘুরতে কখন সূর্য ঢলে যায় পশ্চিমে। উদয়পুরে রাত্রিবাসের পরিকল্পনা নেই, এবার মাউন্ট আবু ফেরার পালা। রাতের রাস্তা নিরাপদ নয়। তাই বিকেল বিকেল রওনা হই – চলো মুসাফির। গাড়ির রেডিওতে চড়া সুরে বাজতে থাকে রাজস্থানী লোকগানের সুর। বিদায় রাজ, আবার কখনো কোন এক দিন তোমার সঙ্গে হয়তো দেখা হবে। মনে রেখো আমায়। রাজের গলার স্বর ভেসে আসে হাওয়ায়...তোমাকে কি ভোলা যায় কখনো...আমার চিরপথের সঙ্গী...তোমার একলা মনের বিজন ঘরে আমি সদা রই গো...তুমি একলা হলে আমি আবার আসবো সোনা...আজ আসি...।

অন্য বিষয়গুলি:

Mount Abu Hotel Paromita Mukhopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE