Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

বজরঙ্গি ভাইজানকে পাশে চায় রাঙাউটির শাহিদাও

বলিউডি ব্লকবাস্টারের ছোট্ট শাহিদার সঙ্গে হাইলাকান্দির প্রত্যন্ত রাঙাউটির মেয়েটির অনেক মিল। শুধু নামই এক নয়, মূক-বধির তারা দু’জনই। আর সব বাধা পেরিয়ে তারা শেষে ছুঁয়েছে নিজেদের লক্ষ্যটাকেই।

শাহিদা বড়ভুঁইঞা। ছবি: অমিত দাস।

শাহিদা বড়ভুঁইঞা। ছবি: অমিত দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাইলাকান্দি শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৬ ০৩:৪৫
Share: Save:

বলিউডি ব্লকবাস্টারের ছোট্ট শাহিদার সঙ্গে হাইলাকান্দির প্রত্যন্ত রাঙাউটির মেয়েটির অনেক মিল। শুধু নামই এক নয়, মূক-বধির তারা দু’জনই। আর সব বাধা পেরিয়ে তারা শেষে ছুঁয়েছে নিজেদের লক্ষ্যটাকেই।

বজরঙ্গি ভাইজান-এর শাহিদাকে বাড়িতে ফিরিয়েছেন পবন ‘সলমন’ চতুর্বেদী। আর রাঙাউটির শাহিদা নিজের স্বপ্নপূরণে পাশে পেয়েছে তার বাবা বাহারুল ইসলাম বড়ভুঁইঞাকে।

জন্মের পর থেকেই জীবনযুদ্ধ শুরু হয়েছিল শাহিদার। বাহারুল কাজ করেন হাইলাকান্দির একটি দর্জির দোকানে। তাঁর সামান্য রোজগারেই স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলের সংসার চলে। ‘নুন আনতে ফুরোয় পান্তা’।

টাকার অভাবে দমতে রাজি ছিল না শাহিদা। মাধ্যমিকের নম্বরে তা বুঝিয়ে দিল সে, তার বোনও। অনটনের সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনার ‘প্রথম রাউন্ডে’ এগিয়ে গেল মূক-বধির ওই কিশোরী। শারিরীক, আর্থিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে ছিনিয়ে নিল দ্বিতীয় বিভাগে পাসের মার্কশিট।

হাইলাকান্দি শহর লাগোয়া রাঙাউটি গ্রামে শাহিদাদের বাড়ি। আজ দুপুরে তার বাড়িতে দেখা মিলল দুই বোনেরই। বাড়ি বলতে বাঁশ, পুরনো টিনে ঢাকা মাথা গোঁজার একচিলতে আশ্রয়। শতছিদ্র টিনের ফাঁক গলে ঘরেও রোদের আলো। একই ভাবে ঢোকে বৃষ্টিও।

শাহিদার মা মমতা বেগম ডেকে নিলেন ছোট মেয়ে জেরিনাকেও। তিনি জানালেন, মাধ্যমিকে ৫১ শতাংশ নম্বর পেয়েছে শাহিদা। জেরিনা পাস করেছে তৃতীয় বিভাগে। নাম জানতে চাইলে কাগজ টেনে স্পষ্ট হরফে ‘শাহিদা’ লেখে মেয়েটি। জেরিনা জানায়, ক্লাসে দিদির সহযোগী সে-ই। ইশারায় তাকে শিক্ষকদের কথা বুঝিয়ে দিত জেরিনাই। মমতা বেগম বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই শাহিদার পড়াশোনা আগ্রহ ছিল। অনটনের সংসারে অনেক কষ্টে ওদের পড়ানোর খরচ জুগিয়েছেন আমার স্বামী।’’ কিন্তু মেয়েদের উচ্চশিক্ষার খরচ নিয়ে চিন্তায় ওই দম্পতি। তাঁদের আশঙ্কা, এ বার না দু’জনের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়। বাহারুলের কথাতে মিলল তারই রেশ।

তবে এখানে থামতে চায় না শাহিদা। সে জানায়, হাইলাকান্দির মহিলা কলেজে পড়ার ইচ্ছা রয়েছে তার। কিন্তু পড়ার খরচ নিয়ে চিন্তায় রয়েছে সে-ও।

হাইলাকান্দির রাঙাউটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না পাল বলেন, ‘‘তিন বছর আগে মূকবধির মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে এসেছিলেন তার মা-বাবা। প্রথমে বিশেষ আগ্রহ দেখাইনি। কিন্তু শাহিদার হাতের লেখা দেখে সিদ্ধান্ত বদলাই। ওকে ভর্তি করাটা যে সঠিক ছিল। তা আজ প্রমাণিত হয়েছে।’’

প্রধানমন্ত্রীর ‘বেটি বাচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্পের কথা শোনেননি বাহারুল। কোথায় সরকারি সাহায্য মিলতে পারে, তা বুঝতে পারেন না তিনি। চিন্তা শুধু একটাই— এত দিন মেয়ের পাশে থেকে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। এ বার কি পরাজয়ের মুখ দেখবেন, না কি শাহিদার জন্য এগিয়ে আসবেন সত্যিকারের কোনও বজরঙ্গি ভাইজান!

অন্য বিষয়গুলি:

deaf dumb
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE