নিজের বাগানে রবি মারশেতওয়্যার। ছবি রবি মারশেতওয়্যারের ফেসবুক পেজ থেকে।
কোনওটা লাল, কোনওটা হলুদ, কোনওটা আবার সবুজ। কোনওটা গোল তো কোনওটা আবার ঠিক যেন বাংলার পাঁচ! থোকা থোকা হয়ে একটি গাছেই ঝুলছে এমন হরেক রকম আম! সম্প্রতি একটি গাছে ৫১ প্রজাতির আম ফলিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এক ব্যক্তি। তাঁর নাম রবি মারশেতওয়্যার। পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রবি ২০০১ সালে উচ্চ মাইনের চাকরি ছেড়ে মহারাষ্ট্রে তাঁর জন্মস্থান ওয়াসিম গ্রামে চলে আসেন। তারপর সেখানেই চাষাবাদ শুরু করেন। চাষিদের জন্য কিছু করার উদ্দেশ্যেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত বলে তিনি জানান।
অবশ্য প্রথমেই তাঁর মাথায় এই পরিকল্পনা আসেনি। তিনি তাঁর প্রায় ৩ একর জমিতে বিভিন্ন ফল এবং সব্জি চাষ শুরু করেন। জৈব সার তৈরি করে কী ভাবে চাষের কাজে লাগানো যায়, গ্রামের চাষিদের তা শেখানো শুরু করেন। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প সম্বন্ধেও চাষীদের জানান। এই সময়েই পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক সুভাষ পালেকরের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। প্রথমে তাঁর থেকেই গ্রাফটিং পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন। সুভাষ পালেকর তাঁকে দেভরিকর নামে আর এক ব্যক্তির সন্ধান দেন।
রবি বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্রের ওসমানাবাদ জেলায় গিয়ে দেভরিকরের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি একটি গাছে ১৫ ধরনের আম ফলিয়েছিলেন। তাঁর থেকেই গ্রাফটিং পদ্ধতি শিখেনি। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি লুপ্তপ্রায় আমের প্রজাতি রক্ষা করব।’’ বেশ কয়েক বার চেষ্টার পর গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে একটি গাছে মোট ৫১ প্রজাতির আম ফলান তিনি। আলফানসো থেকে মহারাজা প্রায় সমস্ত প্রজাতির আমই ফলেছে একটি গাছে!
এই গাছটিতেই গ্রাফটিং করেছেন রবি মারশেতওয়্যার
কী ভাবে এত প্রজাতির আম ফলালেন তিনি?
রবি জানান, দেভরিকরই তাঁকে এমন বেশ কিছু কৃষকের সন্ধান দেন যাঁরা দুর্লভ প্রজাতির আম চাষ করেন। মহারাষ্ট্রের প্রায় ২১টি গ্রামে ঘুরে আমচাষিদের কাছ থেকে এমন দুর্লভ প্রজাতির আম গাছের ডাল সংগ্রহ করে আনেন তিনি। তারপর সেগুলোকে তাঁর বাগানের একটি পুরনো আম গাছে গ্রাফটিং করেন। সেখান থেকেই নতুন নতুন শাখা বেরিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির আম ফলেছে। তবে সবকটি গ্রাফটিং সফল হয়নি। ওই আম গাছে ১৩৫০টি গ্রাফটিং করেছিলেন তিনি। তার মধ্যে মাত্র কয়েকশোই সফল হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: মুকেশের প্রাসাদের উল্টো দিকে ১২৫ কোটির বাড়ি কিনলেন এই ব্যবসায়ী
রবি জানান, তাঁর বাগানের ওই আম গাছটি ৫০ বছরের পুরনো। বয়স বাড়ায় ফলনও কমে গিয়েছিল। কমে গিয়েছিল আমের মিষ্টতাও। আর এখন গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে সব মিলিয়ে মোট ৫১ প্রজাতির আম ফলেছে গাছটিতে। আগে যেখানে আম বিক্রি করে মাত্র ১০০০ টাকা উপার্জন করতেন, চলতি মরশুমে তিনি একটি মাত্র গাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা উপার্জন করেছেন।
গ্রামের অন্য চাষিরাও যাতে এই ভাবে আম ফলিয়ে লাভ করতে পারেন তার জন্য তিনি নিখরচায় প্রশিক্ষণ দেওয়াও শুরু করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy