দিল্লি কংগ্রেসের প্রধান হিসেবে শীলা দীক্ষিতের দায়িত্ব নেওয়ার অনুষ্ঠানে জগদীশ টাইটলার। ছবি: সংগৃহীত।
শীলা দীক্ষিতের দিল্লি কংগ্রেসের দায়িত্বভার হাতে নেওয়ার অনুষ্ঠানে মঞ্চের প্রথম সারিতে শিখ দাঙ্গায় অভিযুক্ত জগদীশ টাইটলারের উপস্থিতি জাতীয় রাজনীতিতে তৈরি করল নয়া বিতর্ক। কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে জগদীশ টাইটলারের এই ছবি সামনে আসার পরই প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিভিন্ন শিখ সংগঠন। শিরোমণি অকালি দলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরসিমরত কউর বাদলের বক্তব্য,‘‘ইন্দিরা থেকে রাজীব হয়ে রাহুল। জগদীশ টাইটলার সবসময়ই গাঁধী পরিবারের ডান হাত। দেশের শিখ সম্প্রদায়ের কাছে এই বার্তা খুব স্পষ্ট।’’
কয়েক সপ্তাহ আগেই শিখ দাঙ্গায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়েছে দিল্লি কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রভাবশালী নেতা সজ্জনকুমারকে। নিম্ন আদালতের রায়ে তাঁকে সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হলেও দীর্ঘ দিন আইনি লড়াইয়ের পর তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে দিল্লি হাইকোর্ট। ১৯৮৪-র শিখ বিরোধী দাঙ্গায় সজ্জনকুমারের সঙ্গে জগদীশ টাইটলারের বিরুদ্ধেও দাঙ্গায় প্রত্যক্ষ মদত দেওয়া এবং অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। যদিও পরে সেই অভিযোগ থেকে মুক্তি পান তিনি। কিন্তু তাঁর উপস্থিতি বরাবরই শিখ সম্প্রদায়ের একাংশের কাছে স্পর্শকাতর। সেই অস্বস্তি বয়ে বেড়াতে হয় কংগ্রেসকেও। শীলা দীক্ষিতের অনুষ্ঠানে মঞ্চের একেবারে প্রথম সারিতে তাঁর উপস্থিতি আরও একটু বাড়াল সেই অস্বস্তি।
অকালি নেতা মনজিন্দার সিংহ সিরসার মন্তব্য, ‘‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই জগদীশ টাইটলারকে মঞ্চের প্রথম সারিতে বসিয়েছে কংগ্রেস। ১৯৮৪ শিখ দাঙ্গার প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতেই এই সিদ্ধান্ত। টাইটলারের পাশে আছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড, এই বার্তা দেওয়া হলে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে ভয় পাবেন।’’
আরও পড়ুন: প্রশান্ত কিশোরকে জেডিইউ-তে নিতে অমিত শাহ ফোন করেছিলেন নীতীশকে!
শুধু অকালি দলই নয়, আম আদমি পার্টি এবং বিজেপি-সহ আরও অনেক রাজনৈতিক দলই বিভিন্ন সময়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে শিখ দাঙ্গায় জড়িতদের আড়াল করার অভিযোগ এনেছে। ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে ইন্দিরা হত্যার পর সারা দেশের মতো রাজধানী দিল্লিতেও নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছিল শিখ সম্প্রদায়ের মানুষদের। মারা গিয়েছিলেন প্রায় ৩০০০ জন।
সমস্ত অভিযোগের মধ্যে জগদীশ টাইটলারের অবশ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘‘আদালতের রায়ের পর কারও কিছু বলার থাকতে পারে না। এখন আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ, মামলা কিছুই নেই। কেউ কিছু বললেই বিশ্বাস করতে হবে নাকি?’’
আরও পড়ুন: মায়াবতীর পাশের এই যুবক কি উত্তরাধিকারী? জানেন ইনি কে?
২০০৪ সালে প্রথম ইউপিএ সরকারে মনমোহন সিংহ মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন টাইটলার। কিন্তু শিখ দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগ থাকার কারণেই মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল তাঁকে। গত বছরের এপ্রিলেও রাজঘাটে মহাত্মা গাঁধীর মূর্তির পাদদেশে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে রাহুল গাঁধীর আসার আগে মঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল জগদীশ টাইটলার এবং সজ্জনকুমারকে। যতক্ষণ রাহুল ছিলেন, ততক্ষণ মঞ্চের নিচে সাধারণ দর্শকদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গাতেই বসেছিলেন তাঁরা। শীলা দীক্ষিতের মত গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ নেত্রীর অনুষ্ঠানে জগদীশ টাইটলারের একেবারে প্রথম সারিতে উপস্থিতি সেই কারণেই ইন্ধন যোগাচ্ছে বিতর্কে।
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy