মেয়েটার বয়স সবে দশ। তার গর্ভস্থ ভ্রূণের বয়স ৩২ সপ্তাহ। সাত মাস ধরে নিজেরই কাকার লাগাতার ধর্ষণে গর্ভবতী হয়েছে সে। মেয়ের গর্ভপাতের অনুমতি চেয়েছিলেন বাবা-মা। সেই অনুমতি দিল না সুপ্রিম কোর্ট। কারণ, এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
দেশের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর এবং বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ বলেছে, এই অবস্থায় গর্ভপাত ওই বালিকা ও তার গর্ভস্থ ভ্রূণ— দু’জনের পক্ষেই বিপজ্জনক। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাকে পরীক্ষার পরে চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর চিকিৎসকেরা তেমনই রিপোর্ট দিয়েছেন। আদালত বলেছে, বালিকাটিকে এখন যেন যথাযথ চিকিৎসা পায়।
এ দেশে মায়ের জীবনের ঝুঁকি না থাকলে গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের পরে গর্ভপাত নিষিদ্ধ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বালিকাটি যে গর্ভবতী, তা জানাই যায় অনেক পরে। বাবা-মা চণ্ডীগড়ের জেলা আদালতে গর্ভপাতের আবেদন করে বলেন, মেয়ের শরীর এখনও সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য তৈরি নয়। কিন্তু খারিজ হয়েছিল সে আর্জি। ভ্রূণের বয়স তখনই ছিল ২৬ সপ্তাহ। এর পরে শীর্ষ আদালতে জনস্বার্থ মামলা করেন অলখ অলোক শ্রীবাস্তব নামে এক আইনজীবী। মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষার জন্য চণ্ডীগড়ের ওই হাসপাতালকে নির্দেশ দেয় আদালত। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই আজকের রায়।
ভারতের সামগ্রিক চিত্রটি এমনই। ধর্ষিতা হওয়ার পরে অবাঞ্ছিত গর্ভ নষ্ট করতে চেয়ে অসংখ্য মামলা আদালতে ঝুলছে। কারণ বহু ক্ষেত্রেই নির্ধারিত সময়সীমার পরে সন্তান সম্ভাবনার কথা জানতে পেরেছেন নির্যাতিতা। যদিও গত মে মাসে হরিয়ানার এক ১০ বছরের নির্যাতিতাকে তার প্রায় ২১ সপ্তাহের ভ্রূণটি নষ্ট করার অনুমতি দিয়েছিল শীর্ষ আদালত।
অনেকেরই প্রশ্ন, আইনের দরজায় ঘুরতে ঘুরতেই কি হাতের বাইরে চলে গেল পরিস্থিতি? আজ কার্যত সেই প্রসঙ্গ তুলেই বিচারপতিরা বলেছেন, এই ধরনের ঘটনায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাজ্যে রাজ্যে স্থায়ী মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিক কেন্দ্রীয় সরকার। আজ শুনানিতে হাজির ছিলেন সলিসিটর জেনারেল রঞ্জিৎ কুমার। তাঁকে প্রস্তাবটি বিবেচনা করতে বলেন বিচারপতিরা।
২০১৪-র একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ভারতে প্রতি তিন জন ধর্ষিতার মধ্যে এক জনের বয়স আঠারোর নীচে। ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষক ব্যক্তি আক্রান্তের পূর্বপরিচিত। ২০১৫ সালে নাবালিকাদের ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার প্রায় ২০ হাজার অভিযোগ নথিবদ্ধ হয়েছে। রেহাই পাচ্ছে না দুধের শিশুরাও। তাই শেষ নেই অন্ধকারেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy