বিদায়। স্বামীকে জড়িয়ে কান্না প্রিয়াদেবীর। রাঁচির শ্মশানে। রবিবার হেমন্ত কুমারের তোলা ছবি।
কাশ্মীর ছেড়ে দেশের অন্য কোনও নিরাপদ ছাউনিতে বদলি নিতে বার বার অনুরোধ করতেন তাঁর ছোটবেলার বন্ধুরা। মানতেন না লেফটেন্যান্ট কর্নেল সঙ্কল্প শুক্ল। শুধু বলতেন, “ওদের উপহার সুদ সমেত ফেরত না দিয়ে কোথাও যাব না।”
বছর এগারো আগে বারামুলায় ভারত-পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণরেখায় জঙ্গিদের বুলেটের কয়েকটি ছররা যে কিছুতেই তাঁর শরীর থেকে বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা। সে বার কার্যত ‘যমের দুয়ার’ থেকে ফেরার পর সুদে-আসলে ছররার হিসেব শত্রুদের বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন সঙ্কল্প। সেটাই ছিল তাঁর উপহার। কিন্তু দু’দিন আগে উত্তর কাশ্মীরের বারামুলার উরিতে সীমান্তপারের আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় সব কিছু বদলে গেল।
রাঁচির বুটি মোড়ের কাছে কৃষ্ণনগরের বাড়িতে গত রাতেই সঙ্কল্পের দেহ পৌঁছে দিয়েছিলেন সেনা অফিসাররা। আজ তাঁর শেষযাত্রায় মানুষের ঢল নামে। শোকযাত্রায় ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’ স্লোগান শুনে হাতের ইশারায় তা বন্ধ করতে বলেন শহিদ সেনার পরিজনরা।
দুপুরে রাঁচিতে হরমুর মুক্তিধান শ্মশানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তখন শেষকৃত্য চলছিল সঙ্কল্পের। তাঁর কলেজের বন্ধু, ব্যবসায়ী উমেশ অগ্রবাল যেন নিজের মনেই বলছিলেন, “ছুটিতে বাড়ি ফিরলে এক সঙ্গে শহরে ঘুরতে যেতাম। শপিং মলের মতো কোথাও মেটাল ডিটেক্টরের মধ্যে দিয়ে ও (সঙ্কল্প) গেলেই যন্ত্র প্রচণ্ড আওয়াজ শুরু করত। ওঁর শরীরের সব জায়গায় যে গুলির ছররা আটকে ছিল!”
রাঁচির রামগড়ে মোতায়েন পঞ্জাব রেজিমেন্টের অফিসার সুদবীর সিংহ বললেন, “ওই সময় জম্মুর সেনা হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়েছিল সঙ্কল্পের। কিন্তু সব ছররা বের করা যায়নি। মাংস, পেশির ক্ষতি হয়েছিল। ব্যথা হত মাঝেমধ্যেই।” কিন্তু টলানো যায়নি সঙ্কল্পকে। সুস্থ হওয়ার পর ফের তিনি ফেরেন নিয়ন্ত্রণরেখার বাঙ্কারেই।
তাঁকে আটকাতে চেয়েছিলেন বন্ধু, আত্মীয়রা। লাভ হয়নি। সকলে গিয়ে ধরেন সঙ্কল্পের স্ত্রী প্রিয়াদেবীকে। উমেশ বলেন, “প্রিয়া আমাদের বলল, ও সৈনিকের স্ত্রী। স্বামীর মতো দেশের কথা মনে রাখা ওঁর কর্তব্য।”
সাজানো কাঠের চিতার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন প্রিয়াদেবী। পাশে দুই মেয়ে। এক বার চিতায় শোয়ানো স্বামীকে শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরলেন। তার পর চোয়াল শক্ত করে বড় মেয়ের হাতে জ্বলন্ত কাঠ তুলে দিলেন তিনি। সঙ্কল্পের মুখাগ্নির জন্য। এক হাতে আড়াল করলেন মেয়ের দু’চোখ।
সেনা বিউগলের মধ্যেই দাউদাউ করে জ্বলে উঠল শহিদ সেনা অফিসারের চিতা।
পলকহীন চোখে সে দিকে তাকিয়ে থাকলেন প্রিয়াদেবী। মুছে নিলেন চোখের কোণের জলটুকু। ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ বললেন, “ও তো সৈনিকের স্ত্রী তাই না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy