রাজনীতির বাস্তবতা মেনেই লোকসভা ভোটের পরে ফের কংগ্রেসকে সমর্থনের সম্ভাবনা একেবারে নাকচ করে দিতে চাইছে না সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও এ বিষয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাশেই থাকছেন। তাঁরাও মানছেন, ভোটের পরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতেই পারে, যেখানে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি-কে ক্ষমতায় আসা থেকে ঠেকাতে ফের কংগ্রেসকে সমর্থন করতে হতে পারে। অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকেও সেই দিকে টেনে আনার চেষ্টা করতে হতে পারে।
কেন্দ্রে ২০০৪ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে ভোটের পরে বামেরা কি ফের কংগ্রেসকে সমর্থন করবে? এর জবাবে সংবাদসংস্থাকে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবু বলেছিলেন, “একমাত্র যদি ২০০৪-এর মতো পরিস্থিতি আসে এবং অন্য কোনও রাস্তা খোলা না থাকে!” আজ দিল্লিতে পলিটব্যুরোর সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি থেকে বৃন্দা কারাটও কার্যত বুদ্ধবাবুর পাশেই দাঁড়িয়েছেন। কেউই সরাসরি এই সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিতে চাননি। বৃন্দা-ইয়েচুরি দু’জনেরই বক্তব্য, ‘যদি-তা হলে’ এই সব প্রশ্ন ভোটের পরেই আসতে পারে। ইয়েচুরির কথায়, “আমরা ভোটে লড়তে নেমেছি জেতার জন্যই। অ-কংগ্রেস, অ-বিজেপি বিকল্প জোটের ডাক দেওয়া হয়েছে। আমরা হারলে কী হবে, ২০০৪-এর মতো পরিস্থিতি এলে কী হবে, তা ভোটের পরেই বিচার করে দেখা যাবে! বুদ্ধবাবুও সেটাই বলেছেন।” ইয়েচুরি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০০৪ সালে ইউপিএ বা ১৯৯৮ সালে এনডিএ গঠন হয়েছিল ভোটের পরে। তার আগে যুক্ত ফ্রন্ট সরকারও নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতেই গঠন হয়েছিল।
বুদ্ধবাবু-সহ সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, ২০০৪ সালের মতো পরিস্থিতি আর ফিরবে না। পলিটব্যুরো নেত্রী বৃন্দা আজ বলেছেন, “২০০৪ সালের সঙ্গে এই লোকসভার ভোটের পরিস্থিতি ভিন্ন। সে সময় এনডিএ ক্ষমতায় ছিল। এ বার কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়েছে। এ বার মানুষ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অসন্তোষ জানিয়েই ভোট দেবেন।”
সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, দলের নিজস্ব শক্তি থাকলে বিকল্প জোট খাড়া করে লোকসভা নির্বাচনের পরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া সহজ। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বিচার করে বামেদের পক্ষে সেটা এখন ভেবে নেওয়া যথেষ্ট কঠিন। সেই পরিস্থিতিতে বিজেপি-কে বাদ দিয়ে অন্য দলগুলির মধ্যে কংগ্রেসই সব চেয়ে বড়। কাজেই তাদের সাহায্য নেওয়া বা অন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে নিয়ে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হতেই পারে। সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট মনে করছেন, ২০০৪ সালে অভূতপূর্ব ভাবে বামেরা লোকসভায় ৬১টি আসন পেয়েছিল। সাধারণত বামেদের আসন সংখ্যা ৪০-৪৫’এর মধ্যেই থাকে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের জনপ্রিয়তা কমলেও বামেদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন। সব বাধা কাটিয়ে এবং নির্বাচন কমিশন অবাধ ভোট নিশ্চিত করতে পারলে তবেই বাংলায় সম্মানজনক ফল সম্ভব। সেটা না-হলে লোকসভায় নির্ণায়ক ভূমিকা নেওয়া মুশকিল। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসের দিকেই ঝুঁকতে হতে পারে।
আপাতত বিজেপি-র সাম্প্রদায়িকতাকে বড় শক্র মনে করেই নির্বাচনে ঝাঁপাচ্ছে সিপিএম। এ কে জি ভবনে নরেন্দ্র মোদীর গুজরাতের উন্নয়ন মডেল এবং বিজেপি-র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সমালোচনা করে দু’টি পুস্তিকা প্রকাশের পরে বৃন্দা বলেছেন, “দেশের পরিস্থিতি সব চেয়ে খারাপ হবে, যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে। কারণ শস্তায় শ্রমিক নিয়োগ, শিল্পপতিদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া আর সংখ্যালঘুদের উপরে হামলা চালিয়ে ভোটের মেরুকরণই মোদীর প্রধান হাতিয়ার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy