তখতে বসে ঘোড়া-বাহনে ডাক চালু করেছিলেন সম্রাট শের শাহ। তখতে বসার আগেই নিজের ‘ডাক’ পাঠাতে চলেছেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী! লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর কাছ থেকে ‘ব্যক্তিগত চিঠি’ পেতে চলেছেন ভোটাররা!
বিজেপি-র একটি সংগঠন ‘সিটিজেন্স অ্যাওয়ারনেস ফর গুড গভর্নেন্স’ বেশ কিছু দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ‘চায়ে পে চর্চা’ চালিয়েছে। যেখানে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী মোদী সরাসরি চায়ের দোকানগুলিতে সমাবেশিত জনতার সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে। এ বার মোদীর জনসংযোগের জন্য নয়া কৌশল নিচ্ছে ওই সংগঠন। মোদী দেশের ভোটারদের কাছে ব্যক্তিগত ভাবে সমর্থনের আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখবেন এ বার। সেই চিঠি অনূদিত হবে প্রত্যেক রাজ্যের ভাষায়। তার পর বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকরা রাজ্যে রাজ্যে নেমে পড়বেন ডাক হরকরার ভূমিকায়। বিশেষ গেঞ্জি এবং টুপি পরে তাঁরা চিঠি পৌঁছে দেবেন দেশের প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রের প্রত্যেক ভোটার পরিবারে। ডাক-বাহন সাইকেলও আসবে দিল্লি থেকে।
বিজেপি-র বক্তব্য, দেশের সামনে, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের কাছে উন্নয়ন এবং সুশাসনের কারিগর হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন মোদী। প্রশাসক হিসাবেও তাঁর ভাবমূর্তি যথেষ্ট উজ্জ্বল। সে জন্যই এখন গোটা দেশ মোদী-ভাবাবেগে আপ্লুত। এই পরিস্থিতিতে মোদীর কাছ থেকে ব্যক্তিগত চিঠি পেলে ওই আবেগ আরও বাড়বে এবং তার প্রতিফলন হবে ভোট-বাক্সে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র সংগঠন খুব শক্তিশালী নয়। সেই প্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপি-র আশা, ভোটের পরেও মোদীর চিঠি তাদের সংগঠন মজবুত করতে সাহায্য করবে। কারণ, মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁর ওই চিঠি সংগ্রহে রাখতে চাইবেন সাধারণ মানুষ। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের কথায়, “ভোটারদের কাছে নরেন্দ্র মোদীর চিঠি দেওয়া অনবদ্য একটা বিষয়! ”
মোদী-হাওয়ার ফায়দা তুলতে এক দিকে বিজেপি যেমন নানা রকম অভিনব প্রচার কৌশল নিচ্ছে, তেমনই একেবারে নিজস্ব কায়দায় সাংগঠনিক ভাবে তাদের সাহায্য করছে আরএসএস-ও। রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে আপাতত আরএসএস এবং বিজেপি ১২টি আসনে যৌথ প্রচার অভিযান শুরু করেছে বলে সঙ্ঘ সূত্রের খবর। বাঁকুড়া, বারাসত, কৃষ্ণনগর, আসানসোল, উত্তর মালদা, আলিপুরদুয়ার, হাওড়া, দমদম, কোচবিহার, বালুরঘাট, রায়গঞ্জ ও ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে নজর দেওয়া হচ্ছে। আরএসএসের পদ্ধতি মেনেই কাজ হচ্ছে একেবারে নীরবে।
দলের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রতি বুথে অন্তত ১০টি দেওয়াল লিখন চাই। বাড়িতে বাড়িতে চাই প্রার্থীর পরিচয়-সহ লিফলেট বিলি। এই কাজ শেষ করতে হবে মার্চেই। প্রচার অভিযান ও নিচু তলার কর্মীদের কাজের উপরে নজরদারির জন্য বিধানসভাভিত্তিক পাঁচ সদস্যের দু’টি কোর কমিটিও গঠন করা হয়েছে। প্রতি কমিটিতে বিজেপি-র দু’জন স্থানীয় নেতা, দু’জন আরএসএস সদস্য ও এক জন প্রার্থীর প্রতিনিধি থাকবেন। এক একটি লোকসভা কেন্দ্রে ১৪টি কোর কমিটি নজরদারি করবে। কোনও কর্মী অন্তর্ঘাত করছেন কি না, তা-ও নজর রাখবেন কমিটির সদস্যেরা। সঙ্ঘের এক প্রচারকের সংযোজন, “এ রাজ্যে লোকসভা ভোটে বিজেপি বহু আসনে নির্ণায়ক শক্তি হবে। ওই ফলাফলের ভিত্তিতে বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের লাভ হবে।”
লোকবলের অভাব মগজ দিয়ে ভরারই চেষ্টায় আছে মোদীর দল!
(তথ্য সহায়তা: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, সুস্মিত হালদার)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy