ঘড়ির কাটা বললেও, ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। চারপাশ ঢাকা কুয়াশায়। তার উপর লোডশেডিং। ট্রেন থেকে নামার পর স্টেশনের সামনে ছোট্ট চায়ের দোকানের লোকটার কথা শুনে হতবাক। তিনি বললেন, “মোবাইলে আলো জ্বালিয়ে নিন বাবু। রাস্তার গর্তে পড়বেন না হলে।”
রাজমহল না কি এমনই!
ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলার এক মাত্র মহকুমা শহর। কিন্তু শুধু নামেই। গঙ্গা তীরের ওই জায়গায় দিনের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। অনেক বাড়িতে এখনও তাই ভরসা মোমবাতি, হ্যাজাক, লণ্ঠন।
অথচ এমন হওয়ার কথা ছিল না। শহরবাসী বলছেন, পর্যটনের প্রচুর রসদ থাকলেও সরকার সে দিকে নজর দেয়নি। মহারাজা মানসিংহ, মুঘল সম্রাট আকবর, শাহ সুজা আমলের স্থাপত্য রয়েছে শহরে। অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে সিংহদালান, নীলকুঠি, আকবরের আমলে তৈরি জামা মসজিদ, মিরজাফরের ছেলে মিরনের সমাধি, মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের পায়ের ছাপ। মিরনের সমাধি এখন জঙ্গলে ঢেকেছে। নীলকুঠির মালিকানা গিয়েছে বেসরকারি হাতে।
এ সবে আঙুল উঠছে প্রশাসনে উদাসীনতার দিকেই। রাজমহলের লোকজনের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের মালদহের ঠিক উল্টোদিকের ওই শহরকে সাম্প্রতিক অতীতে সাজগোজই করানো হয়নি। গঙ্গা তীরবর্তী মুর্শিদাবাদ, এমনকী বারাণসীর সঙ্গে রাজমহলের অনেকটা মিল থাকলেও, বছরের পর বছর ধরে রাজ্যের ক্ষমতাসীন কেউ তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেনি। সেখানে না রয়েছে শিল্পাঞ্চল, না ভাল হাসপাতাল। টেলিভিশন, ইন্টারনেটের নাম শোনেননি শহরের অনেকে।
নগরবাসীর কৌতুক ‘সভ্য সমাজে যা থাকতে নেই, তাই রয়েছে রাজমহলে।’
কী সেগুলি? বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেআইনি কারবারের আঁতুড়ঘর হয়েছে ঐতিহাসিক ওই শহর। অবাধে চলছে গরু পাচার, বেআইনি পাথর খাদান, বিদ্যুৎ চুরি, চোরাচালান। বাংলাদেশ সীমান্ত রাজমহলের খুব কাছে। গঙ্গা পেরলেই মালদহের মানিকচক। বড় নৌকায় মানিকচকে পৌঁছয় গরু। সেখান থেকে ঢোকে বাংলাদেশে। একই রাস্তায় চলে অনুপ্রবেশ। গঙ্গার স্রোতে গরু ভাসিয়ে সেটির লেজ ধরে না কি সহজেই এখানে চলে আসা যায়। রাজমহলের মঙ্গলাহাট, উধুয়ার মতো অনেক জায়গায় অনুপ্রবেশকারীরা বসতিও গড়েছে। দুর্নীতির সুযোগে তাদের হাতে পৌঁছেছে ভোটার পরিচয়পত্র, রেশন কার্ড। ভোট এলেই ছবিটা বদলানোর আশ্বাস দেয় রাজনৈতিক দলগুলি। কেউ বলেন, জিতলে কমিশনারেট তৈরি হবে রাজমহলে। হবে বড় হাসপাতাল, কলেজ, স্কুল, রাস্তা আরও অনেক কিছু। কিন্তু বাস্তবটা জানেন শহরের ভোটাররা। নির্বাচন মিটলেই যে রাজনেতারা উধাও হন। এ বার তাই তাঁদের অনেকেই অন্য পথে এগোনোর কথা বলছেন। ওই দলে রয়েছেন সারদা, রোজভ্যালি, টাওয়ারের মতো ২৪টি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে সব হারানো লোকজনও। দু’র্দিনে তাঁদের পাশে থাকেন না নেতারা। সে জন্য ভোটযন্ত্রের ‘নোটা’ বোতামেই ভরসা রাখছেন সকলে। এতে বাসিন্দাদের দিন বদলায় কি না, তার অপেক্ষায় থাকবে রাজমহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy