সরকারি ল্যাপটপ নিয়ে জঙ্গি কার্যকলাপ পরিচালনা!
মেধাবি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অসম সরকারের তরফে বিনামূল্যে বিলি করা ল্যাপটপ লাগানো হয়েছিল জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর জঙ্গি কার্যকলাপে। নমনি অসম তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গেও জঙ্গি কার্যকলাপের সহায়ক ছিল ওই সব ল্যাপটপ। পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি-র জঙ্গি-ডেরাগুলিতে তল্লাশি চালিয়ে ইতিমধ্যেই বর্ধমানের একটি ঘাঁটি থেকে ওই রকম একটি ল্যাপটপের সন্ধান পেয়েছে অসম পুলিশ ও জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। গোয়েন্দারা জেনেছেন, সরকারের কাছ থেকে ল্যাপটপ পেয়ে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ অনেক ক্ষেত্রেই দারিদ্রের তাড়নায় ওই ল্যাপটপ বিক্রি করে দেন। তারই বেশ কয়েকটি গিয়ে পৌঁছেছে জঙ্গিদের হাতে।
এনআইএ সূত্রের খবর, বাংলাদেশে থাকা জেএমবি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা, অনলাইনে আর্থিক লেনদেন-সহ জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন কাজে ওই সব ল্যাপটপ ব্যবহার করা হতো। অসমের জেএমবি চাঁই সন্দেহে বরপেটার হাতুড়ে ডাক্তার শাহনুর আলম-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তকারীদের বক্তব্য, ওই তিন জনের নেতৃত্বে জঙ্গি-নেটওয়ার্ক অসমের নলবাড়ি, ধুবুরি, বাক্সা ও বরপেটার বহু তল্লাটে ছড়িয়ে পড়েছিল। সব জায়গাতেই ব্যবহার করা হতো ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে কিনে নেওয়া ওই ‘সরকারি ল্যাপটপ’। পুলিশের দাবি, জেরায় শাহনুর ও তার দুই সঙ্গী কবুল করেছে, অসম থেকেই পশ্চিমবঙ্গে তারা ল্যাপটপ নিয়ে গিয়েছিল।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সাল থেকে ‘আনন্দরাম বরুয়া ল্যাপটপ অ্যাওয়ার্ড’ প্রকল্পের অধীনে অসম সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে ল্যাপটপ দিচ্ছে। প্রথম বছর ১২ হাজার ছাত্রছাত্রী এই ল্যাপটপ পেয়েছিলেন। এখন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার। শাহনুর যে এলাকার বাসিন্দা, সেই বরপেটা জেলার সর্থেবাড়িতে এই ধরনের ল্যাপটপ জঙ্গিরা বেশি কিনেছিল বলে এনআইএ সূত্রের খবর।
পল্লববাবু জানান, আনন্দরাম বরুয়া প্রকল্পের ল্যাপটপ জেএমবি-র হাতে পৌঁছনোর খবর বর্ধমান থেকে প্রথম জানা গিয়েছে। সেখানে এনআইএ কয়েকটি জঙ্গি ডেরায় হানা দিয়েছিল এবং তার মধ্যে একটি জায়গায় ওই ল্যাপটপ মেলে। বাক্সায় নুরজামাল হকের বাড়ির বাগান থেকে পুলিশ যে ১০টি বোমা উদ্ধার করেছিল, সেগুলি সরবরাহের অভিযোগে ফুলবর হোসেন নামে এক জনকে বেঙ্গালুরু পুলিশ দেবানগরি থেকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানায়, পেশায় ট্রাক চালক ফুলবর সেখানে লুকিয়েছিল। ফুলবরকে আনতে আজ, রবিবার অসম পুলিশের বেঙ্গালুরু যাওয়ার কথা।
শনিবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে মুখ্য বিচারক মহম্মদ মুমতাজ খানের কাছে অসমের শাহনুর আলম-সহ খাগড়াগড় কাণ্ডের ১১ জন অভিযুক্তকে হাজির করানো হয়। এনআইএ আদালতে জানায়, ধৃত হাইস্কুল শিক্ষক জিয়াউল হকের স্ত্রী ও কন্যা তাঁদের ভাড়া বাড়িতে থাকতে পারবেন। প্রসঙ্গত, জিয়াউলকে গ্রেফতার করার পরে বর্ধমানে ভাড়া নেওয়া তাঁর বাড়ি ‘সিল’ করে দিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। জিয়াউলের আইনজীবী রামদুলাল মান্না আদালতে আবেদন করেছিলেন, খাগড়াগড় কাণ্ডে জিয়াউলের স্ত্রী মাহিরা খাতুন অভিযুক্ত নন। কিন্তু এনআইএ তাঁদের ভাড়াবাড়ি সিল করে দেওয়ায় তিনি শিশুকন্যা নিয়ে ঘরে থাকতে পারছেন না।
এ দিন আদালতে হাজির হওয়া ১১ জন অভিযুক্তকেই ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। অভিযুক্তদের মধ্যে বীরভূমের বাসিন্দা আমজাদ আলি শেখের আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস আদালতে জানান, তিনি তাঁর মক্কেলের জামিনের আবেদন জমা দিতে চান। মুখ্য বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করেন। তবে এ দিন জামিনের আবেদনের শুনানি হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy