হাঁটু ও ঊরুর পেশি দুর্বল থাকলেও হাঁটুর ব্যথা এক প্রকার অবধারিত। ছবি: সংগৃহীত
একটানা বসে কম্পিউটারে পড়াশোনা বা কাজকর্ম করার ফলে ওজন বাড়ছে। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ওজন অন্য অসুখ ডেকে আনার পাশাপাশি হাঁটুর ব্যথারও এক অন্যতম কারণ। মেদ মুক্তির সহজ উপায় হিসেবে অনেককেই প্রচুর সিঁড়ি ওঠানামা করতে হয়। এতে ওজন ঠিক থাকলেও হাঁটুর ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু তা-ও সিঁড়ি চড়া বন্ধ করা উচিত নয় বলেই মত অর্থোপেডিক সার্জন গৌতম সাহার।
আমাদের শরীরের প্রধান ভারবাহী অস্থিসন্ধি হাঁটু। অতিরিক্ত ওজন, কায়িক শ্রমের অভাব, চোট আঘাত, ফ্ল্যাট ফুট সহ নানা কারণে হাঁটুর অস্থিসন্ধির অ্যালাইনমেন্ট ঠিক মতো না-ও থাকতে পারে। কিংবা বয়সজনিত কারণে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলে হাঁটুতে ব্যথা হয়। চিকিৎসক গৌতম বললেন, ‘‘এ ছাড়া হাঁটু ও ঊরুর পেশি দুর্বল থাকলেও হাঁটুর ব্যথা এক প্রকার অবধারিত। অতিরিক্ত হাঁটাচলা ও টানা দৌড়াদৌড়ি করলেও হাঁটুর পেশি ও অস্থিসন্ধির দুর্বলতা বাড়ে, সেই থেকেই ব্যথা হয়। তবে ব্যথা শুরু হলে ওষুধ খেয়ে হাঁটাচলা বন্ধ করে বসে থাকলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। বরং অতি সাবধানী হতে গিয়ে শরীরের প্রধান ভারবাহী এই অস্থিসন্ধি আরও কমজোরি হয়ে যাবে।’’
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, আর্থ্রাইটিস জনিত হাঁটুর ব্যথা সারিয়ে তোলার কোনও ওষুধই এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। এর হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার একমাত্র উপায় পেশির শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম করা। ব্যথার শুরুতেই কোয়াড্রিসেপস মাসলের নির্ধারিত ব্যায়াম জেনে নিয়ে শুরু করতে হবে। ওজন বাড়তে দিলে চলবে না। সিঁড়ি চড়লে বা নামলে কিছুটা ক্যালোরি খরচ হয় যা ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। প্রতি দিন ৩০ থেকে ৪০ টা সিঁড়ি চড়লে ও নামলে ওজন কমে, হার্ট ভাল থাকে, ভুঁড়ি কমে, পেশি মজবুত ও দৃঢ় হয়, মন ভাল থাকে। তাই সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা বন্ধ না করে নিয়ম করে হাঁটুর ব্যায়াম করা উচিত। হাঁটুর ব্যথা শুরুর আগে থেকেই সতর্ক হওয়া উচিত। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় পায়ের প্যাটেলা ও ফিমারের ঘর্ষণ হয়। যাঁদের হাঁটু সুস্থ ও স্বাভাবিক তাঁদের ওই অংশের আর্টিক্যুলার কার্টিলেজ এই দুটি হাড়ের ঘর্ষণ প্রতিরোধ করতে পারে। কিন্তু চোট আঘাত, বেশি বয়স ও অন্যান্য কারণে যাঁদের কার্টিলেজ ক্ষয়ে গিয়েছে, তাঁদের হাঁটু ব্যথা বাড়ে।
গৌতম জানালেন, হাঁটুর ব্যথার ভয়ে অনেকেই সিঁড়ি দিয়ে ওঠার কথা শুনলেই আতঙ্কিত হন। কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে ওঠার চেয়ে হাঁটুর অস্থিসন্ধিতে বেশি চাপ পড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামার সময়। শরীরের ওজনের প্রায় সাড়ে তিন গুণ চাপ পড়ে। অর্থাৎ যাঁর ওজন ৫০ কেজি সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়, তাঁর হাঁটুতে চাপ পড়বে ১৭৫ কেজি। কন্ডোম্যালেশিয়া প্যাটেলা অর্থাৎ হাঁটুর অস্থিসন্ধির কার্টিলেজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সিঁড়ি দিয়ে উঠলে বা নামলে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এই সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করে পেশির শক্তি বাড়াতে পারলে হাঁটুর অস্থিসন্ধি ভাল থাকে। মনে রাখতে হবে, হাঁটু ব্যথার শুরু থেকেই যদি ব্যায়াম নিয়মিত করা যায়, তা হলে অস্থিসন্ধির বিকৃতি অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়। তবে হাঁটু একেবারে ক্ষয়ে গিয়ে প্রচণ্ড ব্যথা হলে রিপ্লেসমেন্ট সার্জারির উপদেশ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করাই সুস্থ হাঁটুর চাবিকাঠি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy