ওজন কমানোর ওই ওষুধ বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। কেবল ওজনই নয়, এই ওষুধের ডোজ়ে নাকি টাইপ-২ ডায়াবিটিসের ঝুঁকিও কমছে বলে দাবি। ওষুধটি বাজারে আসার পর থেকেই এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। কম সময়ে রোগা হতে এটি নাকি খুবই কার্যকরী বলে দাবি করেছেন অনেকে। ওষুধটির নাম ওজ়েম্পিক, যা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে নিতে হয় সপ্তাহে এক বার। ওজ়েম্পিক আদৌ কার্যকরী, না কি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে তা জানতে সমীক্ষা চালানো হয়। তাতে জানা গিয়েছে, ওষুধটি সকলের জন্য নিরাপদ নয়। ওজ়েম্পিক হৃদ্রোগের কারণ হতে পারে। আবার ওই ওষুধটির কারণে চর্মরোগও দেখা গিয়েছে অনেকের।
২০১৭ সালে ওজ়েম্পিক ইঞ্জেকশনটিকে অনুমোদন দেয় আমেরিকার ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’। আগে এর ব্যবহার ছিল সীমিত। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদেরই দেওয়া হত। ডায়াবিটিস বা অন্যান্য কোমর্বিডিটি রয়েছে, এমন রোগীদেরই এই ইঞ্জেকশনটি দিতেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু এখন খোলা বাজারে ওজ়েম্পিক ওজন কমানোর ওষুধ হিসেবে বিক্রি করা হয়। আর এর ডোজ় সম্পর্কে না জেনেই বহু মানুষ এটি ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। যার ফলে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের রোগ।
আরও পড়ুন:
‘নেচার মেডিসিন’ জার্নালে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, যেখানে গবেষকেরা দাবি করেছেন ওজ়েম্পিকের সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি হল— দুর্বলতা, ডায়েরিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ও অ্যাসিড রিফ্লাক্স। তা ছাড়াও দেখা গিয়েছে, ওষুধটি প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে নেওয়ার ফলে প্যানক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। এমনকি কিডনির জটিল রোগও দেখা দিয়েছে।
‘জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিয়োলজি’ (জেএসিসি)-র তথ্য বলছে, ওজ়েম্পিক হৃদ্পেশি দুর্বল করে দিতে পারে। ফলে হার্টের সঙ্কোচন ও প্রসারণ অনিয়মিত হয়ে যায়। এর ফলে হার্টে অক্সিজেন-সমৃদ্ধ বিশুদ্ধ রক্তের সঞ্চালন কমে ও কার্ডিয়োমায়োপ্যাথি নামক রোগের ঝুঁকি বাড়ে। যে কারণে হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে।
অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনকে চিকিৎসাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘কার্ডিয়াক অ্যারিদ্মিয়া’ বলা হয়। অ্যারিদমিয়া হার্টের উপরের প্রকোষ্ঠ অ্যাট্রিয়া বা নীচের প্রকোষ্ঠ ভেনট্রিকলসে দেখা দিতে পারে। হার্টের ভিতরে ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপালস গেলে হার্ট সঙ্কুচিত হয়। এই ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপালস যেখানে তৈরি হয়, সেই জায়গায় যদি গন্ডগোল থাকে, তা হলে হার্টরেট কমে যেতে পারে এবং হাঁপিয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ওজ়েম্পিকের কারণে অনেকেরই অ্যারিদ্মিয়া দেখা দিয়েছে বলে দাবি গবেষকদের।
এই ওষুধের কারণে ত্বকের প্রদাহ বাড়ে। ওজ়েম্পিকের কারণে ত্বকের সংক্রমণজনিত রোগও দেখা দিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ত্বকে জ্বালা-যন্ত্রণা, র্যাশ, চামড়া কুঁচকে যাওয়া, এমনকি নানা রকম চর্মরোগও দেখা দিতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধটি ব্যবহার করা নিরাপদ নয় বলেই মনে করছেন গবেষকেরা।