অতিমারির আতঙ্ক শেষ হলেও শান্তি নেই। নানা রকম ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়ার উপদ্রব বাড়ছে দিন দিন। ফলে সংক্রামক অসুখবিসুখ লেগেই থাকছে। কখনও ইনফ্লুয়েঞ্জা, কখনও নিউমোনিয়া আবার কখনও অ্যাডিনোভাইরাস, রোটাভাইরাস বা নোরোভাইরাসের উৎপাতে ভাইরাল জ্বর, ডায়েরিয়া, শ্বাসের সমস্যাও চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। গিয়ান-ব্যারের প্রকোপ নিয়ে ইদানীং কালে উদ্বেগও বেড়েছে। চিকিৎসকেরা সতর্ক করে বলেছেন, বিভিন্ন ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত রোগের পরেই এমন স্নায়ুর রোগ দেখা দিচ্ছে। যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা কোনও না কোনও ভাইরাস জনিত অসুখে আগে ভুগেছেন। কাজেই এর থেকে রেহাই পেতে হলে শরীরেই সুরক্ষাকবচ বানিয়ে রাখতে হবে। তার জন্য জরুরি কিছু প্রতিষেধক।
কোন কোন টিকা এই সময়ে নিয়ে রাখা জরুরি?
ফ্লু-এর টিকা
ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নিয়ে রাখা খুবই জরুরি। চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডলের মতে, ভাইরাল জ্বর বা ‘ফ্লু’ এখন ঘরে ঘরে হচ্ছে। সে জন্য ফ্লু-এর টিকা নিয়ে রাখলে ভাল হয়। ফ্লু-এর টিকা মানে হল ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রতিষেধক। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এই টিকা ০.৫ মিলিলিটার ডোজ়ে প্রতি বছর নিতে হবে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যে হেতু বছর বছর তার চরিত্র বদলে ফেলে, তাই এক বার টিকা নিয়ে রাখলে কোনও কাজ হবে না। প্রতি বছরই নিয়ম করে প্রতিষেধক নিতে হবে।
কারা নেবেন?
হাঁপানি বা সিওপিডি-র রোগী অথবা ক্রনিক শ্বাসপ্রশ্বাসের অসুখ, ফুসফুসের সংক্রামক রোগ আছে, এমন রোগীদেরই ফ্লু-এর টিকা নিয়ে রাখলে ভাল হয়। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে। খুব কম বয়সে ফ্লু টিকা নেওয়ার দরকার নেই। দশ বছর বেশি বয়সি হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন:
নিউমোনিয়ার প্রতিষেধক
দেশে প্রতি বছর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন লক্ষাধিক মানুষ। তা থেকে মৃত্যুও ঘটে। তাই নিউমোনিয়ার টিকা নিয়ে রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এখন আবার কোভিডেরই মতো হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। দেশের নানা জায়গায় চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, নিউমোনিয়ার টিকা নিলে এই ভাইরাসকে সম্পূর্ণ ভাবে রোখা যাবে না ঠিকই, তবে রোগের তীব্রতা কমানো যাবে।
কারা নেবেন?
নিউমোনিয়ার দু’রকম টিকা আছে— নিউমোকক্কাল কনজুগেট ভ্যাকসিন (পিসিভি) এবং নিউমোকক্কাল পলিস্যাকারাইড ভ্যাকসিন (পিপিএসভি)। পিসিভি টিকা শিশু ও বয়স্কদের জন্য। আর পিপিএসভি টিকা তাঁদেরই দেওয়া হয়, যাঁদের বয়স ষাট পেরিয়েছে এবং ফুসফুস দুর্বল বা সিওপিডি, হাঁপানির মতো রোগ বা অন্য কোনও জটিল অসুখ রয়েছে।
হেপাটাইটিস এ ও বি-এর টিকা
লিভারে সংক্রমণের ফলে হেপাটাইটিস হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রতি বছর মোট ১০ কোটিরও বেশি মানুষ হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত হন। হেপাটাইটিস এ রোগ মূলত ছড়ায় জল এবং খাবারের মাধ্যমে এবং হেপাটাইটিস বি রক্তের মাধ্যমে। দুই ক্ষেত্রেই রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা নিয়ে রাখা জরুরি।
কারা নেবেন?
এক বছর এবং তার বেশি বয়সি শিশু থেকে শুরু করে যে কেউ হেপাটাইটিস এ প্রতিরোধক টিকা নিতে পারেন। সাধারণত ৬ মাসের ব্যবধানে দু’টি টিকা নিতে হয়। হেপাটাইটিসের বি-এর টিকার তিনটি ডোজ় এক মাস অন্তর দিতে হয়। চতুর্থ টিকা দিতে হয় প্রথম ডোজ়ের ঠিক এক বছর পরে। পাঁচ বছর পরে নিতে হয় বুস্টার ডোজ়।
হার্পিস জ়স্টার টিকা
দু’রকমের টিকা রয়েছে। বয়স ষাটের বেশি হলে হার্পিসের প্রতিষেধক নিয়ে রাখা ভাল। এই টিকা নিলে হার্পিস হওয়ার ঝুঁকি কমবে। রোগ হলেও ব্যথা, যন্ত্রণা, অস্বস্তি কম হবে।