অনেকে আছেন, যাঁরা কাজে ডুবে থাকলেই সবচেয়ে ভাল থাকেন। আবার এর ঠিক বিপরীত মেরুর কিছু মানুষও আছেন। তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো। কাজ করতে করতে বেলা পেরোলেই চেপে ধরে ক্লান্তিবোধ। কাজ করার উৎসাহে ভাটা পড়ে। কখনও-সখনও আসে বিরক্তিও। বিকেল না পেরোতেই মনে হতে থাকে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ শেষ করে অফিস থেকে বেরোতে পারলে স্বস্তি। কিন্তু মস্তিষ্কই যেখানে ক্লান্ত, সেখানে কাজ দ্রুত শেষ হবে কী করে! ফলে কাজে মন বসে না। কাজ শেষ হতে দেরি হয় আরও। ক্লান্তিবোধ বাড়তেই থাকে।
পুরো বিষয়টাই একখানি বিষাক্ত চক্রের মতো। যার ভিতরে এক বার ঢুকে পড়লে বেরিয়ে আসা কঠিন। যদিও গবেষণা বলছে, এই ধরনের সমস্যার দু’টি সমাধান আছে।
কী কী সমাধান?
আমেরিকার ওয়েক ফরেস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মিলিত গবেষণায় পাওয়া ওই দুই সমাধান হল—

মস্তিষ্কই যেখানে ক্লান্ত, সেখানে কাজ দ্রুত শেষ হবে কী করে! ছবি: সংগৃহীত।
১। কাজের মধ্যে ছোট ছোট বিরতি নেওয়া
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, কাজের ফাঁকে ছোট ছোট বিরতি বা ‘মাইক্রোব্রেক’ ওই ধরনের ক্লান্তিবোধ কাটানোর সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী উপায়। বিশেষ করে কাজের চাপ যদি বেশি থাকে, তবে ওই ধরনের ছোট ছোট বিরতিই উপকারে লাগে।
২। ম্যানেজার বা সুপারভাইজ়ারের তরফে সাহায্য
যিনি আপনার ইমিডিয়েট বস্ বা ম্যানেজার অথবা সুপারভাইজ়ার, তাঁর তরফে কতটা সাহায্য পাচ্ছেন, তার উপরেও নির্ভর করে বিষয়টি। যদি তিনি আপনার ভাল-মন্দ বোঝেন, প্রয়োজনমতো পাশে দাঁড়ান, তা হলে এই ক্লান্তিবোধ সচরাচর থাকে না। বরং কাজে বাড়তি আগ্রহ পান কর্মী।

সুপারভাইজ়ার বা ইমিডিয়েট বস্ কাজের সুবিধা অসুবিধা বুঝলে এবং দরকারে পাশে দাঁড়ালে কর্মীরা কাজে উদ্যম পান। ছবি: সংগৃহীত।
গবেষণায় কী দেখা গিয়েছে?
গবেষণাটি বেশ কয়েকটি পর্যায়ে করা হয়েছিল। প্রথমে ৪৪ জন কর্মরতের কাঝে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তাঁদের কর্মজীবনের ক্লান্তিবোধ অথবা কাজের উৎসাহ পাওয়ার বিষয়ে। তাঁদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এর পরে ১৭৯ জন কর্মরতের উপরে (যাঁরা কর্মক্ষেত্রে কাজে উৎসাহের অভাব বোধ করেন) মাইক্রোব্রেক বা ছোট ছোট বিরতির প্রভাব পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, দীর্ঘ সময় কাজের ফাঁকে যাঁরা মাঝে মধ্যেই ছোট বিরতি নিয়েছেন, তাঁরা ক্লান্তিবোধ, একঘেয়েমি, কর্মোদ্যমের অভাব কাটিয়ে উঠেছেন। শুধু তা-ই নয়, এতে তাঁদের রাতের ঘুমের মানও ভাল হয়েছে। পরের দিন কাজে আসতেও তাঁরা বেশি উৎসাহবোধ করেছেন।
আবার কিছু অংশগ্রহণকারীর উপরে পরীক্ষা করা হয়েছিল সুপারভাইজ়ার বা ম্যানেজারের সাহায্যের বিষয়টি। দেখা গিয়েছে, যাঁদের ম্যানেজার তাঁদের কাজের বিষয়ে সাহায্য করেছেন, সময়ে সময়ে কর্মীর ভাল-মন্দের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন, কাজের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অথবা কাজের ক্ষেত্রে কর্মীদের দরকার পড়লে পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেই সব কর্মীরও কাজে উদ্যম বেড়েছে। তাঁরাও অফিসে যাওয়া এবং ভাল কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছেন। দ্রুত কাজ শেষ করার ব্যাপারেও উন্নতি করেছেন।

কাজের ফাঁকে যাঁরা মাঝে মধ্যেই ছোট বিরতি নিয়েছেন, তাঁরা ক্লান্তিবোধ, একঘেয়েমি, কর্মোদ্যমের অভাব কাটিয়ে উঠেছেন। ছবি: সংগৃহীত।
কী করবেন?
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এখন সব অফিসেই, বিশেষ করে কর্পোরেট ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে কাজ শেষ করার চাপ থাকেই। যা থেকে ক্লান্তিবোধ আসা অস্বাভাবিক নয়। পছন্দের কাজও কখনও সখনও ওই চাপের মুখে পড়ে অসহ্য মনে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সমাধান হিসাবে আধ ঘণ্টা বা ৪৫ মিনিট অন্তর ছোট ছোট বিরতি নিতে পারেন। সেই বিরতিতে এক কাপ চা বা কফি খেতে পারেন আবার চোখ রাখতে পারেন খবরের কাগজে। অথবা ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হলে তাঁকে বুঝিয়ে বলতে পারেন আপনার সুবিধা অসুবিধার কথা।