Advertisement
E-Paper

২৭০ কেজি ওজন তুলতে গিয়ে মৃত্যু, অনুশীলনের সময়ে কী কী ভুলে এমন বিপদ ঘটতে পারে? সতর্ক করলেন প্রশিক্ষক

যষ্টিকার মতো যাঁরা ভারোত্তোলন করেন, তাঁদের কঠিন পরিশ্রম ও অনুশীলনেরই প্রয়োজন হয়। তবে তারও কিছু নিয়ম আছে। ভারী ওজন তুলে ব্যায়াম করার সময়ে ঠিক কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি, সে ব্যাপারে আলোকপাত করলেন মোহনবাগান ক্লাবের প্রাক্তন ফিটনেস প্রশিক্ষক অনুপ আচার্য।

How to be safe in Gym, Don’t make these weightlifting mistakes, warns Fitness coach

যষ্টিকার মতো যাঁরা অনুশীলন করেন, তাঁরা কী কী খেয়াল রাখবেন? ফাইল চিত্র।

অনুপ আচার্য

অনুপ আচার্য

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:২৭
Share
Save

পেশাদারিত্ব যতই থাক, ১৭ বছরের একটি মেয়ের পক্ষে ২৭০ কিলোগ্রাম ওজনের বারবেল তুলে ব্যায়াম করা কি যুক্তিসঙ্গত? প্রশ্নটা আসলে এখানেই। রাজস্থানের বিকানেরে সম্প্রতি খুবই দুঃখজনক এক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। জিমে অনুশীলনের সময়ে ২৭০ কেজি ওজনের বারবেল ঘাড়ের উপর পড়ে মৃত্যু হয়েছে স্বর্ণপদকজয়ী পাওয়ারলিফ্টার যষ্টিকা আচার্যের। দুর্ঘটনা যখন ঘটে তখন প্রশিক্ষক তাঁর পাশেই ছিলেন, কিন্তু তিনিও অতটা ওজন সামলাতে পারেননি। ফলে ঘাড়ের হাড় ভেঙে মৃত্যু হয় যষ্টিকার। জিম করতে গিয়ে আঘাত লাগা, পেশিতে টান ধরা বা লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কিন্তু ক্রীড়াবিদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা অনেকগুলি প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। পাশাপাশি, ব্যায়াম করার সময়ে কী ধরনের সতর্কতা নেওয়া জরুরি, সকলে এই ধরনের সতর্কতা নেন কি না, তা-ও ভেবে দেখা জরুরি।

যষ্টিকার মতো যাঁরা ভারোত্তোলন করেন, তাঁদের কঠিন পরিশ্রম ও অনুশীলনেরই প্রয়োজন হয়। তবে তারও কিছু নিয়ম আছে। ভারী ওজন তুলে ব্যায়াম করার সময়ে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতেই হয়।

শরীর তৈরি থাকতে হবে

যষ্টিকার বয়সি মেয়ের ২৭০ কেজি ওজন তোলা সঠিক হয়েছে না বেঠিক, তা পরের প্রশ্ন। সে ব্যাপারে আমি যাচ্ছিই না। কিন্তু কথা হল, এত ভারী ওজন তোলার আগে শরীরকে সেই ভাবে প্রস্তুত করতে হবে। যাঁরা পেশাদার, তাঁরা ওজন তুলে অভ্যস্ত। কিন্তু দিনের কোন সময়ে অনুশীলন করছেন, সেই সময়ে শরীরের অবস্থা কেমন, কোনও রকম দুর্বলতা আছে কি না বা পেশিতে ব্যথা রয়েছে কি না, সব দেখে তবেই ওজন তোলা উচিত। হঠাৎ এত বেশি ওজন তুলতে গেলে বিপদ ঘটতে পারে। এই ধরনের অনুশীলনের আগে তাই সব সময়ে আমরা বলি ‘ওয়ার্ম আপ’ করে নিতে। তার জন্য কিছু ব্যায়ামও আছে। এই ব্যায়ামগুলি করলে পেশির আড়ষ্টতা ছেড়ে যাবে, শরীরও ভারী ওজন তোলার জন্য তৈরি হবে।

অসুস্থতা নিয়ে একদমই নয়

শরীর সব দিন সমান থাকে না। কোনও দিন সকালে উঠে মনে হয় শরীর খুব দুর্বল, ক্লান্ত লাগছে। তা হলে সে দিন ভারী ওজন তোলা উচিত হবে না। এখন আবহাওয়া বদলাচ্ছে। এই সময়েই নানা রকম অসুখবিসুখ লেগে থাকে। ২৭০ কেজি ওজন তোলার সময়ে যষ্টিকার শরীরের অবস্থা কেমন ছিল, কোনও অসুস্থতা ছিল কি না, তা তাঁর প্রশিক্ষক কতটা দেখেছেন, তা জানা নেই। তবে আমি বলব, দুর্বলতা, বমিভাব, প্রচণ্ড ক্লান্তি থাকলে ওজন তুলবেন না। মেয়েদের ঋতুস্রাব চলাকালীন বা ঋতুস্রাব শুরু ও শেষ হওয়ার ৫ দিন আগে বা পরে খুব ভারী ওজন না তোলাই ভাল।

মানসিক স্থিতি

শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনের প্রস্তুতিও জরুরি। যাঁরা ভারী ওজন তোলেন, তাঁদের মনের স্থিরতা ও ধৈর্য খুব দরকার। যদি মন ভাল না থাকে বা কোনও রকম উদ্বেগ থাকে, তা হলে ওজন না তোলাই ভাল। মন ঠিক না থাকলে, শরীরও তার ভারসাম্য রাখতে পারবে না। জোর করে বা কারও প্ররোচনায় এমন ব্যায়াম করার চেষ্টা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

প্রশিক্ষকের দায়িত্বই বেশি

যে কোনও সাধারণ মানুষ হোন বা নামী ক্রীড়াবিদ— তিনি কী ধরনের ব্যায়ামের অনুশীলন করছেন তার সবটা দেখার দায়িত্ব প্রশিক্ষকেরই। তিনি ঠিক করে দেবেন, ওজন, উচ্চতা ও শারীরিক ক্ষমতা অনুযায়ী কে কোন ব্যায়াম করবেন বা কতটা ওজন তুলবেন। আত্মবিশ্বাস ভাল, কিন্তু তা অতিরিক্ত হয়ে গেলেই মুশকিল। একমাত্র অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকই বুঝতে পারেন শরীরের অবস্থা ঠিক কেমন। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে একগাদা ওজনের বোঝা চাপিয়ে দিলেই যে শরীর তা সইতে পারবে তা নয়। কার শরীর কতটা তৈরি তা না বুঝলে এমন বিপদ ঘটবেই। আর যদি বেশি ওজন তোলাতেই হয়, তা হলে তার জন্য প্রস্তুতিও জরুরি। ওজন তুলতে গিয়ে তা হাত থেকে পিছলে গেলে বা কোনও দুর্ঘটনা ঘটার উপক্রম হলে, সঙ্গে সঙ্গে কী করতে হবে, সে ব্যবস্থাও করে রাখতে হবে আগে থেকেই। যষ্টিকার ক্ষেত্রে তাঁর প্রশিক্ষক তো বটেই, আশপাশের সাপোর্টিং স্টাফেরাও তেমন ভাবে তৈরি ছিলেন বলে মনে হয়নি।

যিনি ওজন তুলছেন, তিনি খাওয়াদাওয়া নিয়ম মেনে করছেন কি না, তা-ও কিন্তু বড় ব্যাপার। একেবারে খালি পেটে বা পেট ভরে খেয়ে ‘ওয়েট ট্রেনিং’ করা যায় না। তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। ‘স্ট্রেংথ ট্রেনিং’ করতে হলে ডায়েট আলাদা হবেই। প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখতেই হবে ডায়েটে। আর পাঁচ জন যা খান, তেমন খেলে চলবে না। শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থাকলে পেশি দুর্বল থাকবে। আর পেশির দুর্বলতা থাকলে বা হাড়ের গঠন তেমন মজবুত না হলে দুর্ঘটনা ঘটবেই।

নানা রকম ফুড সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে। তা হলেই শরীর মজবুত হবে। মরসুম বদলের সময়ে আর পাঁচ জনের শরীরে যে বদল হয়, একজন ক্রীড়াবিদের শরীরে তা হবে না। কারণ অনুশীলন আর খাওয়াদাওয়া— এই দুইই সঠিক ভাবে হলে যে কোনও পরিস্থিতিতেই শরীর প্রতিরোধের ক্ষমতা অর্জন করবে। তখন বিপদের ঝুঁকিও কম থাকবে।

(লেখক মোহনবাগান ক্লাবের প্রাক্তন ফিটনেস প্রশিক্ষক)

Fitness Tips Weightlifting

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}