শিশুর সুষম আহার কেমন হবে, কী কী খাওয়াবেন। ছবি: শাটারস্টক।
শিশু ছ’মাস বয়স অবধি মায়ের দুধেই পুষ্টি পায়। এই সময়ে সন্তানের খাওয়া নিয়ে বেশি ভাবনাচিন্তা করতে হয় না মা-বাবাকে। কিন্তু আসল চিন্তা শুরু হয় ৬ মাস বয়সের পর থেকে। ভাত খাওয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই একটু-একটু করে সব রকম খাবারের সঙ্গেই পরিচয় করাতে হয় শিশুকে। ওই বয়স থেকেই শিশুদের শরীর ও মস্তিষ্কের বৃদ্ধি হতে থাকে। ফলে সুষম আহার খুব জরুরি। দু’বছরের পর থেকে ধীরে ধীরে স্কুলে যাওয়া শুরু হয় শিশুর। তখন খাবার নির্বাচনের ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদের। শিশুর কোনও খাবারে অ্যালার্জি আছে কি না, তা-ও খেয়াল করতে হবে। এই সময়ে খাদ্যতালিকা এমন হতে হবে যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটায় যথাযথ ভাবে। সকলেই চান তাঁর সন্তান যেন স্বাস্থ্যে, দেহের বুদ্ধিতে হয় সকলের সেরা। মা-বাবাদের চিন্তা দূর করার জন্য তাই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) শিশুদের জন্য পুষ্টিকর ডায়েট চার্ট প্রকাশ করেছে।
জেনে নিন কী কী খাবার অবশ্যই রাখবেন শিশুর ডায়েটে—
১) বাড়িতে তৈরি খাবারই দিতে হবে শিশুকে। বাইরের খাবার, প্যাকেটজাত নরম পানীয় অথবা পক্রিয়াজাত খাবার একেবারেই চলবে না। বেশি নুন বা মিষ্টি দেওয়া খাবার শিশুকে দেবেন না। তা না হলে ছোট থেকেই গ্যাস-অম্বল, বদহজমের সমস্যা শুরু হবে।
২) প্রোটিনের জন্য শিশুকে ডাল খাওয়াতে হবে। তবে শুরুতেই অড়হর, ছোলা, মটর ওদের পক্ষে হজম করা কঠিন হবে। তাই মুগ বা মুসুর ডালই দিন।
৩) সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে শিশুকে প্রাতরাশ খাইয়ে দিন। মাখন পাউরুটি, দুধ দিয়ে কর্নফ্লেক্স বা দুধ-ওট্স দিতে পারেন শিশুকে। উপরে ছোট ছোট করে ফল কেটে ছড়িয়ে দিন। এতে অনেক ক্ষণ পেট ভর্তি থাকবে। চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়িও রেঁধে দিতে পারেন।
৪) বেলা ১টা থেকে ২টোর মধ্যে দুপুরের খাওয়া খাইয়ে দিতে হবে। ভাত মেপে দেওয়াই ভাল। অনেক বাবা-মা ভাবেন বেশি করে ভাত বা মাছ খাইয়ে দিলে শিশুর পুষ্টি বেশি হবে। আসলে তা নয়। শিশুকে বারে বারে অল্প অল্প করে খাওয়ানো উচিত। এক থেকে দুই কাপ ভাত, সঙ্গে এক বাটি ভর্তি ডাল, এক টুকরো মাছ, সব রকম সব্জি দিয়ে তরকারি দিন শিশুকে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সব্জি দিতে হবে। লাউ, কাঁচা পেঁপে, ঝিঙে, গাজর জাতীয় সব্জি শিশুর পুষ্টির জন্য ভাল।
৫) দুপুর ১টার পর কলা, আম চটকে বা সিদ্ধ আপেল চটকে খাওয়াতে পারেন।
৬) বিকেল ৪টে থেকে ৫টার মধ্যে ডালিয়ার খিচুড়ি, ছানা, ছাতু বা সুজির পায়েস যে কোনও কিছুই খাওয়াতে পারেন। ধীরে ধীরে সব ধরনের মরসুমি ফল ও সব্জির সঙ্গেই পরিচয় করাতে হবে।
৭) রাতে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে রাতের খাওয়া দিতে হবে শিশুকে। হাতে গড়া দু’টি রুটি, এক বাটি সব্জি, ঘরে পাতা টক দই দিতে পারেন।
৮) রোজকার খাবারে প্রোটিনও রাখতে হবে। শিশুকে ছোট মাছ বা জিওল মাছ খাওয়ালে খুব ভাল। শিঙি, মাগুরের মতো জিওল মাছ খাওয়াতে পারেন শিশুকে। মাছ থেকে ভরপুর ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাবে শিশু।
৬) এক দিনেই মাছ, মাংস, ডিম না দেওয়াই ভাল। ভাগে-ভাগে শুরু করা উচিত। তা হলে বোঝা যাবে, শিশুর কোনও খাবারে অ্যালার্জি আছে কি না। মাংস দিলে প্রথমে সিদ্ধ চিকেন দিয়ে শুরু করুন। চিকেন স্ট্যু-ই শুরুতে খাবে শিশু। একবারে দুই থেকে তিন পিসের বেশি মাংস দেবেন না। বেশি তেলমশলা দিয়ে রান্না করা মাংস না খাওয়ানোই ভাল।
৭) শিশুর হাড়ের গঠন মজবুত করতে ক্যালসিয়াম খাওয়াতে হবে। দুধ, দই, ছানা, পনির থেকে ক্যালসিয়াম পাবে শিশু। তবে যদি দুধে অ্যালার্জি থাকে তা হলে দই ও বাটারমিল্ক দিতে পারেন। দুধ থেকে অ্যালার্জি হওয়া মানেই যে দুগ্ধজাত সব কিছু থেকেই সমস্যা আসবে, এমন নয়। অনেকেরই দুধে সমস্যা হলেও দই, পনিরে তেমন অসুবিধা হয় না। তবে দুগ্ধজাত যে কোনও উপাদানে সমস্যা তৈরি হলে সে সব বন্ধ করে দেওয়া দরকার। বরং তার বদলে সয়াবিন, টোফু, ডাল ইত্যাদির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারেন।
৮) এক চামচ তিলে রয়েছে ৮৮ গ্রাম ক্যালসিয়াম। তাই শিশুর ডায়েটে অবশ্যই রাখুন তিল। শিশুর জন্য রান্না করার সময় যতটা সম্ভব তিল ব্যবহার করুন।
৯) শিশুকে দিতে পারেন ব্রাউন রাইস ও লাল আটার রুটি। এক কাপ ব্রাউন রাইসে রয়েছে সাড়ে ৩ গ্রাম ক্যালসিয়াম। এক কাপ লাল আটায় রয়েছে ৬.৩ গ্রাম ক্যালসিয়াম।
মায়েরা যা মনে রাখবেন
কখনওই শিশুকে জোর করে খাওয়াবেন না। খিদে পেলে সে আবার খেতে চাইবে। একবারে অনেকটা ভাত মেখে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। এতে শিশুর শুরু থেকেই খাবারে অরুচি আসবে। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খাওয়াতে হবে। শিশুর ভাল খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে গেলে মাকে ধৈর্য রাখতেই হবে।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। অনেক শিশুরই বিভিন্ন রকম খাবারে অ্যালার্জি থাকে, দুধ সহ্য না-ও হতে পারে। তাই আপনার শিশুকে কী কী খাওয়াবেন আর কী নয়, তা সন্তানের খাওয়া দাওয়ার উপর লক্ষ রেখে এবং চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের থেকে আলোচনার মাধ্যমেই জেনে নেওয়াই ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy