Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Baby Food Chart

৬ মাস বয়সের পর থেকে শিশুকে কী খাওয়াবেন, আর কী নয়? সময় ধরে তালিকা বললেন চিকিৎসকেরা

৬ মাসের পর থেকে ২ বছর অবধি মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক আহারও দিতে হবে শিশুকে। এই সময়টিতে শিশুর পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য কী কী দরকার?

ICMR Guidelines, diet chart for infants

৬ মাসের পর থেকে সন্তানকে কী কী খাওয়ালে পুষ্টি হবে। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৪ ১৭:১৬
Share: Save:

ছ’মাস বয়স পর্যন্ত সব শিশু মায়ের দুধেই পুষ্টি পায়। এই সময়ে সন্তানকে খাওয়ানো নিয়ে মায়ের আর ভাবনা থাকে না। কিন্তু আসল চিন্তাটা শুরু হয় শিশুর ৬ মাস বয়সের পর থেকে। সন্তানের ৬ মাস বয়স হলেই অনুষ্ঠান করে মুখে ভাত দেওয়া হয়। ওই দিন প্রথম ভাত, ডাল, তরকারি, পায়েসের স্বাদ পায় খুদে। তার পর থেকে কী কী খাওয়ানো দরকার, তার একটা রুটিন হওয়া খুব জরুরি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর), তাদের নতুন নির্দেশিকায় জানিয়েছে, ৬ মাস বয়সের পর থেকে শিশুর ডায়েট ঠিক কেমন হবে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত, সময় ধরে শিশু কী কী খাবে, সে নিয়ে মতামত দিয়েছেন চিকিৎসকেরাও। চলুন জেনে নেওয়া যাক, সন্তানের পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য কী কী করবেন মায়েরা।

জন্মের পর থেকে শিশুর ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধই খাওয়াতে হবে। এই সময়টিকে বলা হয় ‘ব্রেস্ট ফিডিং পিরিয়ড’। ৬ মাসের পর থেকে শুরু হবে ‘উইনিং পিরিয়ড’। অর্থাৎ, এই সময়টিতে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক আহারও দিতে হবে শিশুকে। দাঁত বেরোনোর সময় এগিয়ে আসায় এই সময় থেকেই তাকে চিবিয়ে খেতে শেখানো শুরু করা দরকার। পাশাপাশি, দিনে তিন থেকে চার বার শক্ত খাবারও তাকে দিতে হবে। বছর দুয়েক পর্যন্ত চলবে এই ‘উইনিং পিরিয়ড’।

শুরুর সময়টা শিশু কী কী খাবে

বাজারচলতি প্যাকেটজাত খাবার না দেওয়াই ভাল। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী জানালেন, দোকান থেকে কেনা ‘বেবি ফুড’ একেবারেই দেবেন না। বরং বাড়িতে চাল-ডাল-আলু দিয়ে হালকা করে তৈরি খিচুড়ি সামান্য ঘি বা মাখন দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে শুরুতে। বেশি শক্ত খাবার শুরুতেই দেওয়া যাবে না। ভাত চটকে সব্জি সেদ্ধ দিয়ে খাওয়াতে পারেন। পাতলা করে রান্না ডালিয়াও ভাল খাবে শিশু। শুরুতে অল্প করে নুন দিয়ে রান্না করতে হবে। চিনির ব্যবহার না করাই ভাল।

৬ থেকে ৮ মাস পর্যন্ত শিশুকে সারা দিনে অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে। সাত-সাড়ে সাত মাস থেকে আমিষ শুরু করতে পারেন। জ্যান্ত চারা মাছ, ডিম, মুরগির মাংস, সবই খেতে পারে শিশু। ডিম খাওয়ানো শুরু করার সময়ে কুসুম ও সাদা অংশ আলাদা করে নেবেন। এক-একটি খাবার সইয়ে নিয়ে কয়েক দিন পরে নতুন আর একটি খাবার দিন। ৯ মাসের পর থেকে ফল খাওয়ানো শুরু করলে ভাল।

শিশুকে একসঙ্গে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। মায়ের দুধের পরে নতুন খাবারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিশু একটু সময় নেয়। ‘ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ’-এর পেডিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল বলছেন, “শিশু শুরুতেই খেতে চাইবে না। তখন জোর করে খাওয়াবেন না। সারা দিনে বার বার একটু একটু করে খাবার মুখে দিন। সেটা দিনে ১৫ থেকে ২০ বারও হতে পারে।”

কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট যাতে সঠিক পরিমাণে থাকে, সেটা দেখতে হবে। ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত শিশুর দিনে ৬৫০ কিলো ক্যালোরি দরকার। তার মধ্যে ৪২০ কিলো ক্যালোরি আসবে মায়ের দুধ থেকে, বাকিটা পরিপূরক আহার থেকে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে খাওয়াতে পারেন ভাত, সব্জি, ডাল। দুপুর ১টার পর কলা, আম চটকে বা সিদ্ধ আপেল চটকে খাওয়াতে পারেন। কলার স্বাদ পছন্দ করে শিশুরা। বিকেল ৪টে থেকে ৫টার মধ্যে ডালিয়ার খিচুড়ি, ছানা, ছাতু বা সুজির পায়েস যে কোনও কিছুই খাওয়াতে পারেন। ধীরে ধীরে সব ধরনের মরসুমি ফল ও সব্জির সঙ্গেই পরিচয় করাতে হবে।

শিশুর বয়স ৯ মাস পেরিয়ে গেলে তখন খাওয়ার পরিমাণ একটু একটু বাড়াতে হবে। ৯ মাস থেকে ১ বছর অবধি শিশুর দিনে ৭২০ কিলো ক্যালোরি দরকার। তার মধ্যে কিছুটা আসবে মায়ের দুধ থেকে, বাকিটা খাবার থেকে।

বয়স দু’বছর পেরিয়ে গেলে তার জন্য আলাদা করে রান্না করারও দরকার নেই। বাড়ির রান্না ডাল-ভাত-তরকারিই খাওয়ানো শেখাতে হবে। শুধু খেয়াল রাখতে হবে শিশুর খাবারে যেন বেশি তেলমশলা না থাকে। চিনির মাত্রাও কম হওয়া জরুরি। তরকারি বলতে শুধু আলু নয়, সবুজ শাকসব্জিও খাওয়াতে হবে।

মায়েরা মনে রাখবেন

কখনওই শিশুকে জোর করে খাওয়াবেন না। খিদে পেলে সে আবার খেতে চাইবে। একবারে অনেকটা ভাত মেখে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। এতে শিশুর শুরু থেকেই খাবারে অরুচি আসবে। অল্প ভাত দিন, তার পর একটু কলা চটকে খাওয়ান। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খাওয়াতে হবে। শিশুর ভাল খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে গেলে মাকে ধৈর্য রাখতেই হবে। শিশু বসতে শিখলে বাড়ির সকলের সঙ্গে বসে খাওয়ানোর অভ্যাস করা ভাল। মোবাইল দেখিয়ে বা টিভি চালিয়ে খাওয়াবেন না। এতে শিশু দীর্ঘ ক্ষণ খাবার নিয়ে বসে থাকবে। খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হবে। খাওয়া শেষ হওয়ার অন্তত মিনিট পনেরো পরে জল খাওয়াবেন।

এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। অনেক শিশুরই বিভিন্ন রকম খাবারে অ্যালার্জি থাকে, দুধ সহ্য না-ও হতে পারে। তাই আপনার শিশুকে কী কী খাওয়াবেন আর কী নয়, তা চিকিৎসকের থেকে জেনে নেওয়াই ভাল।

অন্য বিষয়গুলি:

child care Baby Food Child Care Tips
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy