মৎস্যাসন নিয়মিত অভ্যাসে শরীর তরতাজা থাকবে। ছবি: ফ্রিপিক।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বয়সের ছাপ পড়ে শরীরে। আর এখনকার সময়ে মানুষজন যে ভাবে প্রতিনিয়ত ছুটে চলেছেন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করছেন, তাতে সময়ের আগেই বুড়িয়ে যাচ্ছে শরীর ও মন। হাজারটা অসুখবিসুখ হানা দিচ্ছে। সংক্রমণজনিত রোগে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তছনছ হচ্ছে। খুব কম জনকেই বলতে শুনবেন, যে তাঁদের কোনও রোগব্যাধি নেই। এই বিষয়ে যোগাসন প্রশিক্ষক অনুপ আচার্য্য আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “পুরুষ ও মহিলাদের জন্য কিছু আসন নির্দিষ্ট আছে। তবে এমন কিছু যোগাসন আছে, তা সকলেই করতে পারেন। নিয়ম করে অভ্যাস করলে বেশী বয়সেও অনেক বেশি সুস্থ ও তরতাজা থাকা যাবে। বয়সের ছাপ চট করে ধরা দেবে না শরীরে। বয়সের কাঁটা চল্লিশ পার হলেও তারুণ্য ধরে রাখা সম্ভব। অসুখবিসুখও কম হবে।”
মাথা ঝুঁকিয়ে যে আসনগুলি আছে সেগুলি শরীর ও মন সতেজ রাখতে সাহায্য করে। যোগাসন প্রশিক্ষক অনুপ জানাচ্ছেন, পদহস্তাসন, হলাসন, উষ্ট্রাসন, মৎস্যাসনের মতো আসন করা যেতে পারে। তবে যদি মাথায়, ঘাড়ে বা পিঠে ব্যথা থাকে, তা হলে কিন্তু পদহস্তাসন করার আগে প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিতে হবে।
কী কী আসন অভ্যাস করবেন?
পদহস্তাসন
সামনে ঝুঁকে হাত দিয়ে পায়ের আঙুল ছুঁয়ে এই ব্যায়াম করতে হয়। ম্যাটের উপর টানটান হয়ে দাঁড়ান। দুই পা আরামদায়ক দূরত্বে রাখুন, দুই হাত থাকবে পাশে। ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে কানের পাশ দিয়ে দুই হাত সোজা করে মাথার উপরে তুলুন। শরীর টানটান রাখতে হবে। এ বার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সামনের দিকে ঝুঁকে হাত দিয়ে পায়ের পাতা স্পর্শ করতে হবে। তবে পায়ের গোড়ালি জড়িয়ে ধরতে পারলে ভাল হয়। না হলে হাত দিয়ে পায়ের পাতা ছুঁয়ে থাকুন। হাঁটু যেন টানটান থাকে খেয়াল রাখতে হবে। শুরুতে ততটা সহজ হবে না। তবে ধীরে ধীরে অভ্যাস করতে হবে। খেয়াল রাখুন ঘাড়, মাথা যেন আরামদায়ক অবস্থায় থাকে। পা থাকুক টানটান ও সোজা। এই অবস্থায় ১০ সেকেন্ড থেকে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসুন। অন্তত ৫ বার এই আসন অভ্যাস করতে হবে।
হলাসন
ম্যাটের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুই পা একসঙ্গে জোড়া করে উপরে তুলুন। এ বার দুই হাত দিয়ে কোমর ধরে এমন ভাবে শরীরটাকে তুলুন যাতে নিতম্ব, কোমর, পিঠ টানটান থাকে। শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে দুই পা কোমর থেকে ভাঁজ করে হাঁটু ভেঙে মাথার পিছন দিকে এমন ভাবে নিয়ে যান, যাতে পায়ের আঙুল মাথার পিছন দিকের ম্যাট বা মাটি স্পর্শ করে। এই ভঙ্গিতে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন। ১০-২০ সেকেন্ড থেকে পা দু’টি আবার সোজা উপরের দিকে টানটান করে রাখুন। হাত কোমর থেকে সরিয়ে নিতম্ব ম্যাটে ছোঁয়ান। শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পা মাটিতে রাখুন। এই আসনটি দিনে ২ থেকে ৩ বার করুন।
মৎস্যাসন
মাছ জলের মধ্যে যে ভঙ্গিতে ভেসে বেড়ায়, আসনটি অনেকটা তেমন দেখতে বলেই এমন নামকরণ। এই আসন শরীর ও মন দুই-ই সতেজ রাখে। প্রথমে ম্যাটের উপর টানটান হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুই হাত পাশে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এ বার ধীরে ধীরে পিঠ বেঁকিয়ে ধনুকের মতো করতে হবে। হাতের কনুই, মাথা আর নিতম্বে ভর দিয়ে পিঠ তুলুন। মাথা যেন মাটিতে থাকে। মাথায় ভর দিতে হবে। এ বার হাত পাশে রাখুন। কাঁধ, পিঠ তুলে রাখতে হবে। ১০-২০ সেকেন্ড সেই ভঙ্গিতে থেকে আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসুন। যদি কাঁধ, পিঠ, তোলা অবস্থায় দুই পা টানটান রাখেন, তা হলে দুই হাত পাশে থাকবে। আর যদি সেই ভঙ্গিতেই দুই পা পদ্মাসনে রাখেন, তা হলে দুই পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল টেনে ধরুন। আসন থেকে ফেরার সময় অবশ্যই দুই হাত আবার দুই পাশে রেখে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন।
উষ্ট্রাসন
মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসুন। মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে দুই হাত দিয়ে দুই পায়ের গোড়ালি ধরুন। এর পর মাথা পিছনের দিকে ঝুলিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে পেটের অংশটা সামনের দিকে এগিয়ে দিন। ডান হাতের বুড়ো আঙুলটি ডান দিকের গোড়ালির উপর রেখে বাকি সব আঙুল বাইরের দিকে রাখুন। বাঁ দিকের ক্ষেত্রেও একই ভাবে রাখুন। পায়ের পাতা মাটিতে রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।
ময়ূরাসন
প্রথমে বজ্রাসনে বসুন। পায়ের পাতা মুড়ে হাঁটুর উপর বসতে হবে। এ বার হাতের তালু দু’টো হাঁটু থেকে প্রায় এক হাত দূরে এমন ভাবে মেঝেতে রাখুন যেন হাতের কব্জি দু’টি সামনের দিকে ও আঙুলগুলি পিছনের দিকে থাকে। দু’হাতের কনুই ভেঙে নাভির দু’পাশে লাগিয়ে শ্বাস নিয়ে তলপেট শক্ত করে সামনের দিকে ঝুঁকুন এবং পা দু’টি সোজা করুন। এ বার হাতের তালুর উপর ভর রেখে দুই পা উপরে তুলুন। দু’হাতের উপর শরীরটা মাটির সঙ্গে অনেকটা সমান্তরালে ভেসে থাকবে। যদি সম্ভব হয় তা হলে সেই ভঙ্গিতে থেকেই মাথা সামনের দিকে একটু ঝুঁকিয়ে দুই পা আর একটু তুলে মাটির সঙ্গে ৪৫ ডিগ্রি কোণে রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ১০ থেকে ২০ সেকেন্ড করতে হবে এই আসন। তার পর পা নামিয়ে হাত আলগা করে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসুন।
অনুপ জানাচ্ছেন, হার্টের অসুখ থাকলে বা লিভারের রোগ থাকলে এই ব্যায়াম করা যাবে না।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। শারীরিক কোনও রকম অসুস্থতা থাকলে এইসব ব্যায়াম করা যাবে না। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, বাতের ব্যথা, পিঠে-কোমরে ব্যথা বা মেরুদণ্ডের বেদনা থাকলে এইসব যোগাসন অভ্যাস না করাই ভাল। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই যোগাসন প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy