কেউটে বা গোখরোর বিষের প্রতিষেধক নিয়ে নতুন খোঁজ বিজ্ঞানীদের। ছবি: সংগৃহীত।
বিষধর সাপের এক ছোবলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারেন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। শিশু বা বয়স্ক হলে বাঁচানোর সময়ও কম পাওয়া যায়। ভারতে সর্পদংশনে মৃত্যুর দায়ী মোটামুটি সাত থেকে আট ধরনের সাপ। গোখরো, কেউটে, কালাচ ও চন্দ্রবোড়ার কামড়েই বেশিরভাগ মৃত্যু হয়। এই প্রজাতির সাপগুলি কামড়ের সঙ্গে সঙ্গেই বিষ ঢালে। এই বিষ তাড়াতাড়ি আক্রান্তের রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। এর ফলে খুব দ্রুত রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। কেউটে বা গোখরোর কামড় হলে যদি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষেধক না দেওয়া হয়, তা হলে রোগীকে বাঁচানোর আশা প্রায় ছেড়েই দিতে হয়। বিষধর সাপের দংশন থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য নতুন আবিষ্কারের পথে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, এমন এক প্রতিষেধকের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে যা দামেও কম, সহজলভ্য এবং বিষধর সাপের বিষের জ্বালা কমাতে পারে।
রক্ত পাতলা করার ওষুধেই নাকি বিষের জ্বালা কমবে, এমনই দাবি বিজ্ঞানীদের। সাপের কামড়ে মৃত্যুরমুখে চলে যাওয়া ব্যক্তিকেও বাঁচাতে পারবে এই ওষুধ, এমনই সিদ্ধান্তে পৌঁছেচেন তাঁরা। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে এই গবেষণায় যুক্ত রয়েছেন ব্রিটেনের লিভারপুল স্কুল অফ ট্রপিকা মেডিসিন ও কোস্টা রিকার ক্লোডোমিরো পিকাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরাও। রক্ত পাতলা করার ওষুধ হেপারিন নিয়ে গবেষণা করছেন তাঁরা।
সিডনিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক গ্রেগ নিলি জানাচ্ছেন, সব সাপের বিষের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না এই ওষুধকে। কেবল কেউটে বা গোখরো জাতীয় সাপের বিষের প্রতিষেধক হিসেবেই এটির প্রয়োগ হতে পারে। কেউটে বা গোখরো শরীরের যেখানে দংশন করে, সেখানকার কোষগুলি ছিঁড়ে-ফেটে যায়। সেই এলাকায় রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। তখন নির্দিষ্ট ডোজে রক্ত পাতলা করার ওষুধ দিলে বিষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে না। তোবে ওষুধ কোন রূপে, কী ভাবে দিতে হবে সে সম্বন্ধে এখনও কোনও আলোকপাত করেননি বিজ্ঞানীরা। রক্ত জমাট বাঁধার কারণে রোগীর মৃত্যুও হবে না। তবে এই ওষুধ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা গবেষণার স্তরেই আছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
সাপের বিষ তাদের চোখ এবং মুখের কোণের মাঝের অংশের উপরে চোয়ালের উভয় পাশে অবস্থিত বিষথলিতে উৎপন্ন হয় ও সঞ্চিত থাকে। বিভিন্ন রকম প্রোটিন ও উৎসেচকের মিশ্রণ এই বিষ। সাপ যখন ছোবল মারে, তখন বিষ ওই বিষথলি থেকে বিষনালির মধ্যে দিয়ে বিষদাঁতে এসে পৌঁছয়। এদের বিষদাঁতগুলি অনেকটা ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জের মতো কাজ করে। এই বিষ তাড়াতাড়ি রক্তে মিশে যায়। সাপের বিষ সাধারণত চার রকমের হয়— নিউরোটক্সিক, হেমাটক্সিক, সাইটোটক্সিক ও মায়োটক্সিক। কেউটে বা গোখরোর বিষ নিউরোটক্সিক জাতীয়। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে অকেজো করতে শুরু করে। মাংসপেশিকেও অসাড় করে দেয়।
গবেষকেরা বলছেন, সাপের বিষের তীব্রতা ও প্রকৃতি, এলাকা বিশেষে পরিবর্তিত হয়। ফলে, অনেক সময় দেখা যায় প্রতিষেধক দেওয়ার পরেও তা ঠিকমতো কাজ করছে না। তাই বিষধর সাপের জিনগত গঠন ও তাদের বিষের রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা করেই প্রতিষেধক তৈরি করা উচিত। গবেষক গ্রেগের মতে, রক্ত পাতলা করার ওষুধ কী ভাবে সাপের বিষের প্রতিষেধক হয়ে উঠতে পারে তা জানার জন্য আগে সাপের বিষের রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা করা হয়েছিল। দংশনের পরে শরীরে কী কী বদল হচ্ছে, তা-ও ‘ক্রিসপার জিন এডিটিং’ পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে দেখা হয়। দংশনের জায়গার কোষ কী ভাবে নষ্ট হচ্ছে, কত দ্রুত রক্ত জমাট বাঁধছে, সেসব পরীক্ষা করে দেখার পরেই ওই ওষুধটিকে প্রতিষেধক হিসাবে কাজে লাগানো যায় কি না, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। যদি এই গবেষণা পুরোপুরি সফল হয়, তা হলে সর্পদংশনে মৃত্যুর হার অনেক কমে যাবে বলেই আশা বিজ্ঞানীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy