হাঁপানি হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়ে উঠতে পারে! ছবি: ফ্রিপিক।
হাঁপানির টান বড় যন্ত্রণাদায়ক। যাঁরা ভুক্তভোগী তাঁরাই বিলক্ষণ বোঝেন এর কষ্টটা। হাঁপানি কেন হয়, তার কারণ অনেক। তবে এখন বায়ুদূষণ যে ভাবে খাঁড়া ঝুলিয়ে রেখেছে, তাতে প্রায় ঘরে ঘরেই হাঁপানির রোগী খুঁজে পাওয়া যাবে। একে তো দূষণ, তার উপরে ধূমপান, সেই সঙ্গেই খামখেয়ালি আবহাওয়ার জের। এ শহরেও শ্বাস নেওয়াটাই যেন কষ্টকর হয়ে উঠেছে। যাকেই জিজ্ঞাসা করবেন, বলবে যে কাশি কিছুতেই কমছে না। বুকে চাপ চাপ ব্যথা। রাতে শুলেই বুকে সাঁ সাঁ শব্দের সাইরেন বাজছে যেন। হাঁপানির সূত্রপাত এখান থেকেই হচ্ছে। আর যখনই তা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে যাচ্ছে, তখন শ্বাসকষ্ট, দমবন্ধ হয়ে আসা, বুক ধড়ফড় করার মতো লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।
চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, এখন অনেক রোগীই আসছেন যাঁদের হাঁপানির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। সাধারণ ভাবে হাঁপানির কারণ হল শ্বাসনালিতে প্রদাহ। ফুসফুসে বাতাস ঢোকে যে পথে, সেই শ্বাসনালি ক্রমশ সরু হয় ও ফুলে ওঠে। সেখানে স্তরে স্তরে ‘মিউকাস’ও জমতে থাকে। তখন শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। সাধারণ সর্দিকাশি হলে যে শ্বাসকষ্ট হয়, হাঁপানির শ্বাসকষ্ট তার থেকে অনেক গুণ বেশি যন্ত্রণাদায়ক। যখন তা মারাত্মক আকার নেয়, তখন তাকেই চিকিৎসার ভাষায় বলা হয় ‘সিভিয়ার অ্যাজ়মা’। চিকিৎসক বলছেন, এই ‘সিভিয়ার অ্যাজ়মা’ ক্ষেত্রবিশেষে হৃদ্রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
কী ভাবে?
হাঁপানির টান বাড়লে শ্বাসনালি বেশি সঙ্কুচিত হয়ে যায়। তখন শ্বাসের বাতাস নালিপথে সহজে ফুসফুসে ঢুকতে পারে না। অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসনালিতে প্রদাহ বেড়ে যায়। তখন রোগীর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এ দিকে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি কমে আসায় হার্টেও অক্সিজেন সরবরাহ কমতে থাকে। ফলে হার্টের সঙ্কোচন-প্রসারণের সময় ও ছন্দের হেরফের হতে থাকে। সাধারণত একজন মানুষের হৃৎস্পন্দন মিনিটে ৬০ থেকে ১০০-র মধ্যে থাকে। কিন্তু যখন তা কম বা বেশি হয়, তখনই সমস্যা শুরু হয়। অনিয়মিত হৎস্পন্দনকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া’।
বুক ধড়ফড়, মাথা ঝিমঝিম করা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায় এ ক্ষেত্রে। এই অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনই হৃদ্রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। আচমকা হার্টের স্পন্দনের হেরফের হয়ে হার্ট অ্যাটাক হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ‘সিভিয়ার হাঁপানি’র রোগীরা রাতে ঘুমোবার সময় ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারেন না। ঘুমের মধ্যেই টান উঠতে পারে, প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। আর তার থেকেই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার শঙ্কাও বাড়ে।
কী ভাবে সামলে রাখবেন হাঁপানিকে?
১)প্রথমত হাঁপানির রোগীকে ইনহেলার সঙ্গে রাখতেই হবে। কার কোন ইনহেলার দরকার, তা ঠিক করে দেবেন চিকিৎসক।
২) শ্বাসপ্রশ্বাসের কিছু ব্যায়াম বা ‘ব্রিদিং এক্সারসাইজ়’ করা খুব জরুরি। এই ধরনের ব্যায়াম নিয়মিত অভ্যাস করলে ফুসফুসে বাতাস ঢোকা এবং বার করার পরিমাণ বাড়ে।
৩) হাঁপানি সারানো যায় না। কিন্তু চেষ্টা করলেই, তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আর তার জন্য দরকার সচেতনতা। ঋতুবদলের সময়ে সচেতন থাকতে হবে। ধুলো-ধোঁয়া থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা যায়, ততই ভাল। ফুলের রেণু, পশুর লোম থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে কি না খেয়াল রাখুন।
৪) যে খাবারে অ্যালার্জি আছে, তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত অবিলম্বে। খুব বেশি চা-কফি খাওয়া, ধূমপান, মদ্যপান বন্ধ করতে হবে।
৫) ঠান্ডা লাগার ধাত থাকলে গরম পোশাক, স্কার্ফ সঙ্গে রাখা দরকার। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে চাদর জড়িয়ে কাজ করলে ভাল হয়।
৬) অল্প সর্ষের তেল হাতের তালুতে নিয়ে বুকে, পায়ের পাতার নীচে নিয়মিত মাসাজ করতে পারেন। এতেও আরাম পাওয়া যায়।
৭) হাঁপানি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে, তার জন্য কিছু ওষুধ আছে, যা চিকিৎসকের পরামর্শ মতো খেতে হয়। তা ছাড়া ‘ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টি’ (বিটি) একটি ব্রঙ্কোস্কোপিক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ‘সিভিয়ার অ্যাজ়মা’ নিরাময় করা যায়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সঙ্কীর্ণ বায়ুপথ প্রসারিত হয়ে শ্বাসের গতি স্বাভাবিক করা সম্ভব। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে একটি ‘ক্যাথেটার’ ব্যবহার করা হয়। সেটি ‘উইন্ডপাইপ’-এর মাধ্যমে ঢুকিয়ে তাপ দেওয়া হয়। এই তাপে ফুসফুসের পেশিগুলি সঙ্কুচিত হয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে। হাঁপানি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যেতে পারে না।
৮) হাঁপানি যে কোনও বয়সেই হানা দিতে পারে। তাই প্রত্যেকেরই উচিত বাধ্যতামূলক ভাবে নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও চিকেন পক্সের টিকা নেওয়া। কেননা, হাঁপানির সঙ্গে সঙ্গে নিউমোনিয়া বা চিকেন পক্স হলে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy