Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Night Sweats

রাতে শুয়েও দরদর করে ঘাম হয়? এড়িয়ে যাবেন না, কোন কোন রোগের পূর্বলক্ষণ হতে পারে?

রাতে শরীর বিশ্রাম পায়। সেই সময় দরদর করে ঘাম হওয়া স্বাভাবিক নয়। যদি দিনের পর দিন এমন হতে থাকে, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে।

When to be concerned about night sweat

ঘুমোনোর সময়ে কি দরদর করে ঘাম হয়? তা হলে সাবধান! ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৪ ১২:২৫
Share: Save:

পাখার তলায় বসেও কি ঘাম হয় আপনার? অথবা, ধরুন মাঝরাতে আচমকা ঘুম ভেঙে উঠে দেখলেন দরদর করে ঘামছেন! ঘাম শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমরা যখন খুব জোরে হাঁটি বা দৌড়ই, শারীরিক কসরত করি, তখন ঘাম হয়। ভ্যাপসা গরমের দিনে বেশি ঘাম হওয়াটা অস্বাভাবিকও নয়। কিন্তু রাতে যখন শরীর বিশ্রাম পাচ্ছে, ঘরের আবহাওয়াও আরামদায়ক, তখন যদি ঘাম হতে শুরু করে, তখন তা চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

রাতে ঘুমোনোর সময়ে যদি শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যায়, তখন ঘাম হতে থাকে। শরীরের তাপমাত্রা আচমকা কেন বাড়ছে, তারও কিছু কারণ আছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এমন কিছু শারীরিক সমস্যা বা অসুখ আছে, তা যদি তলে তলে বাসা বাঁধে, তা হলে তার পূর্বলক্ষণ হতে পারে— অতিরিক্ত ক্লান্তি, দুর্বলতা, শারীরিক অস্বস্তি এবং রাতে শুয়েও দরদর করে ঘাম। কিন্তু অসুখগুলি কী কী হতে পারে?

১) অতিরিক্ত উদ্বেগে ভোগেন যাঁরা, তাঁদের এমন হতে পারে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলছেন, মানসিক চাপ যদি লাগামছাড়া হয়ে যায়, তা হলে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগের কারণে ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হয় অনেকের। রাতে ঘুমিয়েও তা হতে পারে। তখন হৃৎস্পন্দনের হার বেড়ে যায়, বুক ধড়ফড় করতে থাকে, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায় এবং ঘাম হতে শুরু করে। এই লক্ষণও ভাল নয়। দিনের পর দিন এমন হতে থাকলে, তা হৃদ্‌রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

২) হরমোনের ওঠানামাও কারণ হতে পারে। এই বিষয়ে চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর মত, থাইরয়েড হরমোন দু’প্রকার; টি-থ্রি ও টি-ফোর। আমাদের শরীরের রক্তে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় এই হরমোন থাকে। কোনও কারণে এই হরমোনগুলি বেড়ে গেলে বা কমে গেলে, তখন বলা হয় থাইরয়েড হয়েছে। রক্তে থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ যদি বেড়ে যায়, তখন তাকে বলে ‘হাইপারথাইরয়েডিজ়ম’ । সে ক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। রাতে শুয়েও ঘাম হতে পারে।

৩) ‘ইডিয়োপ্যাথিক হাইপারহাইড্রসিস’ এমন এক অসুখ, যেখানে স্বাভাবিকের চেয়ে শরীর বেশি ঘামে। এই রোগ যাঁদের হয়, তাঁরা প্রায় সবসময়েই ঘামতে থাকেন। বাতানুকূল ঘরে কিংবা পাখার নীচে বসে থাকলেও তাঁদের ঘাম হতে পারে। এই রোগ বংশগত কারণে হতে পারে, আবার উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবিটিস, হার্টের অসুখ থাকলে তার থেকেও হতে পারে।

৪) রক্তে শর্করার মাত্রা আচমকা কমে গেলে এমন হতে পারে। চিকিৎসক অকুল সেন এমনটাই জানাচ্ছেন। তিনি বলছেন, তখন পাখার তলায় বসেও দরদর করে ঘাম হবে। হঠাৎই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠবে। গায়ে-হাত পায়ে অসহ্য ব্যথা ভোগাবে। এই সবই ‘ব্লাড সুগার’ কমে যাওয়ার লক্ষণ। রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে গেলে তাকে চিকিৎসার ভাষায় বলা হয়, ‘হাইপারগ্লাইসেমিয়া’। এর থেকে আরও বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে শরীরে।

৫) ঋতুবন্ধের সময় এগিয়ে এলে মহিলাদের এমন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ওই সময়ে হরমোনের ওঠানামা শুরু হয়। শরীরের পাশাপাশি মনেও এর প্রভাব পড়ে। অতিরিক্ত উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় ভুগতে থাকেন মহিলারা। মাসিক ঋতুচক্রও অনিয়মিত হতে শুরু করে। ওই সময়েই রাতে শুয়ে ঘাম, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়।

৬) কিছু ক্ষেত্রে রক্তের ক্যানসারের পূর্ব লক্ষণ হতে পারে রাতে দরদর করে ঘাম। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, রক্তের ক্যানসার বা লিউকেমিয়া রোগে আক্রান্ত হলে রক্তের মধ্যে থাকা শ্বেত রক্তকণিকাগুলির অনিয়ন্ত্রিত গঠন ও বিস্তার হতে থাকে। সেই সময়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয় শরীরের ভিতরে। লসিকাগ্রন্থি অস্বাভাবিক রকম ফুলে যায়। যকৃৎ ও প্লীহার আকার বাড়তে থাকে। ফলে বিভিন্ন লক্ষণ ফুটে ওঠে শরীরে। রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে, ওজন আচমকা কমে যেতে পারে, রাতে শুয়ে ঘাম হতে পারে।

মনে রাখতে হবে, রাতে দরদর করে ঘাম হওয়া স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় লক্ষণ নয়। তেমন হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE