আগেকার দিনে যুদ্ধ করার সময়ে রাজা-মহারাজারা শরীরের উপর লোহার বর্ম পরতেন। যাতে উল্টো দিক থেকে ছুটে আসা গোলাগুলি কিংবা তরবারির আঘাত সহজে গায়ে না লাগে। ‘ওয়েটেড ভেস্ট’ বা ওজন দেওয়া পোশাক দেখতে অনেকটা তেমনই। তবে এ যুগের ‘বর্ম’টির কাজ আলাদা। স্বাস্থ্য সচেতনদের মধ্যে তো বটেই, সমাজমাধ্যম জুড়ে এখন এই পোশাকটির রমরমা। শরীরচর্চা করার সময় গায়ে একবার এই বর্ম চাপিয়ে নিলে নাকি দেহের বাড়তি ওজনের উপর তার বিশেষ প্রভাব পড়তে পারে।
প্রশিক্ষকেরাও এ বিষয়ে সহমত। সাধারণ ভাবে হাঁটাহাটি করা বা দৌড়নোর চেয়ে যদি দু’হাতে ভার নিয়ে ওই একই কাজ করা যায়, তা হলে তার প্রভাব শরীরে অবশ্যই বেশি পড়বে। সেই কাজটিই করবে ওজন দেওয়া এই পোশাক। তবে ওজন হাতে বইতে হবে না, চাপানো থাকবে দেহে। ফলে একই ভাবে কসরত করতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া শরীরও নতুন এক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে।
আরও পড়ুন:
ওজন দেওয়া পোশাক পরে হাঁটলে কী সুবিধা হয়?
১) হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে:
অনেক মহিলাই বয়সকালে হাড়ের সমস্যায় ভোগেন। রজোনিবৃত্তির পর থেকে একটু একটু করে হাড় ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। আবার, অস্টিয়োপোরোসিসের মতো রোগে আক্রান্ত হলেও এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হালকা ওজন বহন করার অভ্যাসে হাড়ের গঠন এবং ঘনত্ব— দু’টিরই ধীরে ধীরে উন্নতি হয়। সে দিক থেকে দেখতে গেলে এই ধরনের ওজন দেওয়া ‘ভেস্ট’ ভালই।
২) শরীরের বল বা শক্তি বাড়িয়ে তোলে:
হাঁটাহাঁটি করা এমনিতে স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। তবে ওজন দেওয়া পোশাক পরে হাঁটলে তা শরীরে স্ট্রেন্থ বা শক্তি বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে। দেহের বিভিন্ন পেশির কার্যক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলে। মহিলাদের আলাদা করে ওজন বা ভার তোলা নিয়ে অনেক রকম বিভ্রান্তি রয়েছে। ভারী যন্ত্র তুলতে না চাইলে এই ওজন দেওয়া ভেস্ট কিন্তু তার বিকল্প হতে পারে।
৩) হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে:
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হালকা ওজন তোলার অভ্যাস হার্টের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক। ওজন দেওয়া ‘ভেস্ট’ বা পোশাক পরে শরীরচর্চা করলে হার্টরেট বা হৃৎস্পন্দনের গতি বাড়ে। ফলে শরীরে বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন এবং রক্ত সঠিক ভাবে পৌঁছতে পারে। রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি, শরীরের বাড়তি ক্যালোরি পোড়াতেও যা বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন:
সপ্তাহে কত দিন ওজন দেওয়া পোশাক পরা উচিত?
হাঁটাহাটি তো রোজই করেন। কিন্তু যখনই হাঁটবেন, তখনই গায়ে ওজন দেওয়া পোশাক চাপিয়ে নিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, দীর্ঘ ক্ষণ এই ধরনের পোশাক পরে থাকলে শরীরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, পেশির প্রদাহজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। আবার, ওজনের হেরফেরে শরীরে গঠনভঙ্গি নিয়েও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
একেবারে শুরুর দিকে দেহের ওজন অনুযায়ী সবচেয়ে কম ওজনের পোশাক পরার অভ্যাস করতে বলা হয়। সপ্তাহে অন্তত দু’-তিন দিন সেই পোশাক পরে হাঁটতে পারলে ভাল। অভ্যাস হয়ে গেলে, প্রশিক্ষকের পরামর্শ মতো ধীরে ধীরে দিনের সংখ্যা বাড়িয়ে নিতে হবে। আবার, ওজন না বাড়িয়ে হাঁটার গতি বা দূরত্ব বাড়িয়ে নিলেও একই রকম কাজ হবে।