কাজের চাপে অফিসের ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের পর্দা থেকে মাথা ঘোরানোরও সময় মেলে না কখনও-সখনও। উঠে হাঁটাচলা করা তো দূর অস্ত্। ফলে অনেক সময়েই দেখা যায়, অফিসের কাজের ৮-৯ ঘণ্টা (বা ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়েও বেশি) সময় হয়তো চেয়ারে বসেই কেটে গেল। বা হয়তো সারা দিনে শুধু উঠতে পারলেন টয়লেট ব্রেক নেওয়ার সময়টুকুই।
ইদানীং অবশ্য স্বাস্থ্য সচেতনতা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। মানুষ এখন জানেন, একটানা একই জায়গায় বসে থাকলে, তা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। তাতে যেমন হজমের সমস্যা হয়, তেমনই পেশির ব্যথা, হাড়ের ব্যথা, বাতের মতো স্নায়বিক সমস্যাও হতে পারে। এমনকি, ওজন বেড়ে যাওয়া, ডায়াবিটিস, হৃদ্রোগ, প্রেশার বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও তৈরি হতে পারে বলে সাবধান করেন চিকিৎসকেরা। সমাধান হিসাবে একটানা একই জায়গায় বসে কাজ করার বদলে অন্তত ৩০ মিনিট অন্তর এক বার করে উঠে হেঁটে আসতে বলেন তাঁরা। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা অবশ্য বলছে, টানা বসে থাকার ক্ষতি কমাতে হাঁটার থেকেও বেশি উপযোগী স্কোয়াট।

ছবি: আইস্টক।
স্কোয়াট কী?
খুব সহজ ভাবে বোঝালে শূন্যে বসা। সোজা দাঁড়িয়ে চেয়ারে বসার ভঙ্গিতে বসতে হবে। কিন্তু চেয়ার থাকবে না। পায়ের পাতা দু’টির মধ্যে সামান্য দূরত্ব থাকবে। দূরত্ব থাকবে হাঁটু দু’টির মধ্যেও। হাত দু’টি পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে থাকবে। এ ভাবে বসার চেষ্টা করলে পেটের পেশির পাশাপাশি থাই মাশল এবং হাঁটুর নীচের অংশের পেশির উপরেও চাপ পড়বে। এ ভাবে যত বেশি ক্ষণ থাকতে পারবেন, ততই জোর বাড়বে পেশির। স্ক্যান্ডেনেভিয়ান জার্নাল অফ মেডিসিন অ্যান্ড সায়েন্স ইন স্পোর্টসে প্রকাশিত ২০২৪ সালের গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, টানা বসে থাকার ফাঁকে ৪৫ মিনিট অন্তর কিছু ক্ষণের জন্য যদি স্কোয়াট করেন, তবে শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি আরও কমবে।

ছবি: সংগৃহীত।
হাঁটার থেকেও ভাল স্কোয়াট?
স্নায়ুরোগের চিকিৎসক সুধীর কুমার ওই গবেষণার সঙ্গে একমত। তিনি বলছেন, ‘‘শরীরের গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে হাঁটার থেকে বেশি কার্যকরী স্কোয়াট।’’ ওজন কমানোর জন্য এবং সার্বিক শারীরিক সুস্থতার জন্যও গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে নজর রাখতে বলা হয়। সে ক্ষেত্রেও স্কোয়াট বেশি কার্যকরী বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক সুধীর।

ছবি: ফ্রিপিক।
টানা কাজের কী কী ক্ষতি দূর করবে স্কোয়াট?
এক জায়গায় বসে টানা কাজ করে যাওয়ার জন্য নানা রকম সমস্যা হতে পারে শরীরে। মুশকিল হল, যত ক্ষণ না পর্যন্ত সেই সমস্যাগুলির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তত ক্ষণ পর্যন্ত অভ্যাস বদলানোর প্রয়োজন মনে করেন না কেউ। অস্থির চিকিৎসক অনুপ খতরি বলছেন, ‘‘টানা বসে কাজের অভ্যাস থেকে বাত, পেশির সমস্যা, হাঁটুর ব্যথা, টাইপ টু ডায়াবিটিস হতে পারে। কার্পাল টানেল সিনড্রোমের মতো সমস্যাও হতে পারে যার ফলে হাতের আঙুলে সরসরানি ভাব, অসাড় ভাব, ব্যথা বা দৌর্বল্য আসতে পারে। যা হাতের প্রথম তিনটি আঙুলকে আক্রান্ত করতে তো পারেই একই অনুভূতি হতে পারে কব্জি থেকে কনুই পর্যন্তও।’’ এর ফলে হাত থেকে জিনিস পড়ে যাওয়ার মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক। তিনি বলছেন ওই সব সমস্যা দূরে রাখতে হলে কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝেই উঠে হাঁটাচলা করা দরকার। ৪৫ মিনিট অন্তর স্কোয়াট করলে হাঁটার থেকেও বেশি উপকার হবে বলে জানাচ্ছেন অনুপ।
অফিসে স্কোয়াট কী করে?
বহু অফিসেই কর্মচারীদের জন্য বিশ্রাম কক্ষ থাকে। সেখানে প্রয়োজন হলে শারীরিক কসরত করা যায়। তবে একান্তই অসুবিধা হলে হাঁটাই ভাল বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক খতরি। তিনি বলছেন, ৮-৯ ঘণ্টা কাজের সময় হলে তার মধ্যে অন্তত ৮টি ছোট ছোট ব্রেক নেওয়া উচিত। সেই সময়টুকু উঠে ৫-১০ মিনিটের জন্যও হাঁটাহাঁটি করলে সার্বিক স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।