মরসুম বদলের সময়ে পেটের অসুখ, ভাইরাল জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। দেশের নানা রাজ্যে সমীক্ষা চালিয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) জানিয়েছে, ভাইরাল জ্বর, ডায়েরিয়ার প্রকোপ ঘরে ঘরে। সেই সঙ্গেই দূষিত খাবার থেকে পেটে বিষক্রিয়াও হচ্ছে অনেকের। খাদ্যনালির সংক্রমণের ভুগছেন বহু জন। অপরিস্রুত জলও দায়ী এর জন্য।
আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময়ে বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়ার সক্রিয়তা বাড়ে। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, “ঋতুবদলের সময়ে জীবাণুদের বংশবৃদ্ধি হয়। একগুচ্ছ ভাইরাস দাপট দেখাতে থাকে। সর্দিকাশির অ্যাডেনোভাইরাস তো আছেই, শ্বাসনালির অসুখের জন্য দায়ী রাইনোভাইরাস বা রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সোয়াইন ফ্লু-র মতো সংক্রামক রোগের প্রকোপও বাড়ে।” ইদানীংকালে নোরোভাইরাসের উপদ্রবও বেড়েছে বলে জানালেন চিকিৎসক। সে কারণে পেটের গোলমাল মারাত্মক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। ‘স্টমাক ফ্লু’-তে আক্রান্ত হচ্ছে ছোটরা। ঘন ঘন জ্বর এবং পেটে ব্যথার লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।
অন্ত্রে সংক্রমণ হলে তাকে ‘ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস’ বলা হয়। সহজ কথায়, পেটের ভিতর ভাইরাসের সংক্রমণ। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস বলে অনেকে গুলিয়ে ফেলেন, আসলে তা নয়। খাদ্যনালিতে অনেক ভাল ব্যাক্টেরিয়াও থাকে, যারা খাবার পরিপাকে সাহায্য করে। কিন্তু বাইরে থেকে কোনও সংক্রামক ভাইরাস সেখানে ঢুকে পড়লে তীব্র প্রদাহ শুরু হয়। খাবার ঠিকমতো হজম হয় না, পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। পেটখারাপ, বমি এবং তা থেকেই জ্বর চলে আসে। সেই জন্য খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করতে হবে। রাস্তায় বিক্রি হওয়া জাঙ্ক ফুড, শরবত, লস্যি খেলেই বিপদ বাড়বে।
আরও পড়ুন:
মুখ থেকে শুরু করে খাদ্যনালি, পেট, অন্ত্র হয়ে মলদ্বার পর্যন্ত বিস্তৃত ‘গ্যাস্ট্রোইন্টেসটিনাল ট্র্যাক্ট’। এই পথ পরিষ্কার রাখলেই পেট ভাল থাকবে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, নিয়মিত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার অভ্যাস, শরীরচর্চার অভাবেই অন্ত্রের পথে যত গন্ডগোল হচ্ছে। ফলে পেটের সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে যাচ্ছে। এমনটাই জানালেন সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তিনি জানান, পেটের গোলমাল শুধু নয়, জ্বর, সর্দিকাশি, গলাব্যথা, নাক থেকে অনবরত জল পড়া, চোখ জ্বালা, চোখে সংক্রমণ এই সময়ে ভোগাতে পারে। তাই সাবধান থাকতে হবে। খুব বেশি ক্ষণ এসি-তে থাকলে, ফ্রিজ থেকে বার করেই ঠান্ডা জল খেয়ে ফেললে শরীর খারাপ হবে।
সুষম খাবার খেতে হবে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ভাত, রুটি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ— খাওয়া যেতে পারে সবই। তবে কম তেলে রান্না খাবার খেতে হবে। বেশি করে সবুজ শাকসব্জি ও ফল খেতে হবে। শরীরের দরকার পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন, আয়রন ও খনিজ। খাদ্যতালিকায় তাই রাখতে হবে সবুজ শাক, আনাজপাতি, টাটকা ফল। পালং শাক, ব্রকোলি, বাঁধাকপি খাওয়া ভাল। ফলের মধ্যে কলা, আঙুর কমলালেবু, নানা ধরনের বেরি জাতীয় ফল ইত্যাদি রাখতে পারেন। সেই সঙ্গেই পর্যাপ্ত জল খেতে হবে। ঘন ঘন চা-কফি খাওয়া বন্ধ করতে হবে।