অ্যালার্জি চিরকালই ছিল। কিন্তু এখন মানুষ অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন খাওয়াদাওয়া এবং স্বাস্থ্য নিয়ে। ছবি: ভিস্যুয়ালস্টক
সঞ্চারীর বয়স মোটে সাত। কিন্তু এখনই তার মাকে টিফিন দেওয়ার সময়ে অনেক চিন্তাভাবনা করতে হয়। সঞ্চারী যে রুটি, বিস্কুট, কেক-জাতীয় কোনও খাবারই খেতে পারে না। নুডল্স খেলেও মুশকিল। তার আসলে গ্লুটেনে অ্যালার্জি। খেলেই পেটের গোলমাল তৈরি হয়। তাই সাধারণ রুটির বদলে সঞ্চারীর মা জোয়ার বা রাগির রুটি করে দেন, বাজারের বিস্কুট না দিয়ে ওট্সের আটা দিয়ে বাড়িতেই বিস্কুট তৈরি করে দেন। এবং বাইরে রেস্তরাঁয় খেতে গেলেও মেয়ের জন্য বেছে বেছে বিশেষ ভাবে অর্ডার করেন।
সঞ্চারী একা নয়। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, চারপাশে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁরা প্রতি দিনের খাবার থেকে অনেক কিছুই বাদ দিয়েছেন। কেউ দুধের জিনিস খান না, কেউ চিংড়ি মাছ খান না, কেউ আবার কোনও ধরনের বাদাম খান না। কারণ এঁদের সকলেরই নানা ধরনের খাবারে অ্যালার্জি রয়েছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, যে খাবার যুগ যুগ ধরে বাঙালি খেয়ে হজম করে ফেলল, এখন হঠাৎ সে সব খাবারে ঘরে ঘরে অ্যালার্জি তৈরি হচ্ছে কেন? নাকি এ সব আগেও ছিল, কেউ টের পেতেন না?
খাবারের অ্যালার্জি কেন হয়?
যখন শরীর এমন কিছু সাধারণ জিনিসকেও ঝুঁকি মনে করে সক্রিয় হয়ে তাকে প্রতিরোধ করে, তখন তাকে অ্যালার্জি বলা হয়। ফোলা ভাব বা লালচে র্যাশের মতো ত্বকের সমস্যা দিয়ে অ্যালার্জি শুরু হতে পারে। কিন্তু বাড়াবাড়ি হলে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা, বমি, পেটের গোলমাল, ডায়েরিয়া, জ্বরও হতে পারে। যে খাবারগুলিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা যায়—
১। ডিম
২। বাদাম
৩। দুধ
৪। তিল
৫। সামুদ্রিক মাছ
খাবারে অ্যালার্জি কি বেড়ে গিয়েছে?
ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ এবং যাপন-সহায়ক অনন্যা ভৌমিক বললেন, ‘‘অ্যালার্জি চিরকালই ছিল। কিন্তু এখন মানুষ অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন খাওয়াদাওয়া এবং স্বাস্থ্য নিয়ে। একই সঙ্গে বিভিন্ন অ্যালার্জি ধরাও সহজ হয়ে গিয়েছে এখন। কিন্তু তা ছা়ড়াও কেমন পরিবেশে থাকছেন, তার উপরও নির্ভর করে কী কী অ্যালার্জি থাকতে পারে। শুধু খাবার তো নয়, ধুলো, দূষণ, পরাগরেণু— অনেক কিছু থেকেই অ্যালার্জি হয়ে থাকে।’’
পরিবেশ যে এই ধরনের অ্যালার্জির পিছনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে, তার প্রমাণও মিলেছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির তুলনায় প্রথম বিশ্বের শিশুদের মধ্যে খাবারের অ্যালার্জি বেশি দেখা যায়। এমনকি, গ্রামীণ এলাকার তুলনায় শহরে এই ধরনের সমস্যার হার বেশি, তা-ও দেখা গিয়েছে সমীক্ষায়।
যে কোনও অ্যালার্জিই কি চিরস্থায়ী?
অনন্যা জানাচ্ছেন, কোনও অ্যালার্জিই সারা জীবন এক ধরনের থাকে না। নানা রকম শারীরিক পরীক্ষায় জানা যায়, শরীর অ্যালার্জি কতাটা প্রভাব ফেলছে। মানে, কারও যদি দুগ্ধজাত খাবারে সমস্যা হয়ে থাকে, তা হলে কি শুধু দুধেই হচ্ছে, নাকি দই-ছানা-চিজ— সবেই হচ্ছে, তা দেখা প্রয়োজন। এক বার সেটা জানা গেলে, সেই অনুযায়ী পুষ্টিবিদ ডায়েট তৈরি করতে পারবেন। কত দিন কোন কোন খাবার খাওয়া যাবে না, সেই চার্ট করে দেওয়া হয়। সাধারণত সাত থেকে আট মাস সেই খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার পর ফের পরীক্ষা করে দেখা হয় শরীরে অ্যালার্জির সমস্যায় কোনও হেরফের হয়েছে কি না। তার পর ধীরে ধীরে কিন্তু নিষিদ্ধ খাবারগুলিও খাওয়া শুরু করা যাবে। তবে চলতে হবে পুষ্টিবিদের নির্দেশ মেনে।
অ্যালার্জি সারাতে গিয়ে অপুষ্টি?
খাবারের পাতে যদি নানা রকম খাবার রাখাই না যায়, তা হলে কি অপুষ্টির সমস্যা তৈরি হতে পারে? অনন্যা বললেন, ‘‘বিষয়টি এতটা জটিল নয়। অল্প সময়ের জন্য যদি কেউ দুগ্ধজাত খাবার না খান, তা হলে তার বদলে একই পুষ্টিগুণে ভরপুর অন্য খাবার ডায়েটে রাখতে হবে। তা হলেই কোনও রকম অপুষ্টি হবে না। মনে রাখা প্রয়োজন, কোনও অ্যালার্জিই দীর্ঘস্থায়ী নয়। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে পর সব খাবারই ফের খাওয়া যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy