ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।
ধাক্কা পাড়ের কাঞ্জিভরম শাড়ি। খোলা চুলের সিঁদুর, আর গোল টিপের মাদকতায় ‘চিন তা তা চিতা চিতা’র সুরে মৃদু ছন্দ মেলাচ্ছিলেন রেখা ভরদ্বাজ। মেতে উঠছিল পার্পল মুভি টাউনের জি বাংলা ‘সারেগামাপা’র ডান্স ফ্লোর।
বুলবুলে বিসমিল
‘হায়দার’এর সাফল্যে মন ভরে আছে তাঁর। ছবির ‘আও না’ গানটিতে শ্রদ্ধা কপূর নিজেকে তো উজাড় করে দিয়েছেন। শ্রদ্ধার কাশ্মীরি উচ্চারণ শুনে ইন্ডাস্ট্রি মুগ্ধ! তবুও ‘হায়দার’-এর সেরা গান ‘আজ কে নাম’ শ্রদ্ধার গাওয়া হল না। গাইলেন বিশাল ভরদ্বাজের স্ত্রী রেখা ভরদ্বাজ! বিশালের ছবি মানেই রেখার কণ্ঠে ছবির সেরা গান। এ কেমন ধারা? রেখা কিন্তু অন্য কথা বলছিলেন, “আমি তো ‘হায়দার’-এ কেবল একটাই গান গেয়েছি। আমার গানের কেরিয়ারে সবটাই যদি বিশাল করে দিত, তা হলে ওঁর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার এগারো বছর পরে আমার গানের অ্যালবাম বেরোত না! ”
ঝড়ের কাছেই ঠিকানা
জানলার কাচের দিকে তাকিয়ে ড্রেসিংরুমে বসে রেখা স্মৃতি ছুঁয়ে বললেন, “আমি প্রথম থেকেই জানতাম আমার গলা সাবেকি ধাঁচের। গজল, ঠুংরিই আমার গলায় ভাল চলে। আমার হাই পিচ ভয়েসও ছিল না। যদি কখনও সিনেমায় গাইতে চেয়েছি, তো লোকে প্রথমেই জানতে চেয়েছে আমার গলা কতটা চড়ে। শুনেই গুটিয়ে নিয়েছি নিজেকে। ভাবিনি কোনও দিন সিনেমায় গাইতে পারব। ভাবতাম আমার কণ্ঠের বিষাদ সিনেমার জাঁকজমকের সঙ্গে যায় না।”
কিন্তু এই মেলানকলি, রুক্ষ-পেলব কণ্ঠই ইন্ডাস্ট্রিতে এখন ব্র্যান্ড! ‘নমক ইশক কা’ গাওয়ার কথাও ছিল না রেখার। ফিল্মি দুনিয়ার বাইরে সুফির সুরে, মঞ্চ দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। “আসলে বিশাল ওর যে কোনও গানই আমাকে শোনায়, গাইতে বলে। সে রকমই ‘নমক ইশক কা’ গেয়েছিলাম আমি। শুনেই ও বলেছিল এটা আমিই এমন করে গাইতে পারব। বিশালের জন্যই আমি প্লে ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছি। পরে রহমানের জন্য ‘গেঁদা ফুল’ বা অমিতাভ ভট্টাচার্য-প্রসূনের সুরে ‘ঘাঘরা’ রেকর্ড করেও খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। বিশালই দিগন্তটা খুলে দিয়েছিল” মুচকি হাসেন রেখা।
গুলজারিয়ানা
রেখার কাজল টানা চোখে তখন তৃপ্তির রোশনাই। বললেন “আমি খুব ভাগ্যবতী যে গুলজার সাবের সঙ্গ পেয়েছি। ‘মাচিস্’ ছবির সিটিংয়ে বিশালের সঙ্গে আমি গুলজার সাবের বাড়ি যেতাম। ওখানেই উনি একদিন আমার জন্য গান লিখতে রাজি হয়ে গেলেন। ২০০৪-এ আমার অ্যালবাম বেরোল ‘ইশকা ইশকা’। খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। সুফি গানের গন্ধে, রুমির শব্দে দিন কাটে আমার। বিশালের সুরে আর গুলজার সাবের বাণীতে ‘ইশকা ইশকা’ আমার জীবনে সুফিয়ানার সুর ভরে দিয়েছিল।”
অন্তর থেকে কিছু করলে নিজেকে নদীর মতো মনে হয় রেখার। “বিশাল আর গুলজার সাব থাকলে আমি ফোক থেকে আইটেম সং—যে কোনও ধারায় অনায়াসে সুর নিয়ে যাতায়াত করতে পারি। ভাবুন তো ‘ওয়ে বয় চার্লি’-র মতো ছবিতে কী অসাধারণ শব্দ জুড়েছেন গুলজার সাব! ওঁর হাত যতক্ষণ আমার ওপর আছে, আমি জানি আমি আলোর রাস্তায় চলেছি” মুগ্ধতা রেখার কণ্ঠে।
একলা টেবিলে প্রেমের সন্ধে
এখনও নিজে হাতে বিশালের জন্য রান্না করেন রেখা। বললেন, “ইদানীং একটু ব্যস্ত হয়ে গিয়েছি। বিশাল তো সারাক্ষণ অভিযোগ করে আমি আগের মতো রোজ ওকে রান্না করে খাওয়াতে পারি না। সময় পেলেই সাবুদানার খিচুড়ি, আলুর পরোটা, বিশালের প্রিয় ক্ষীর বানিয়ে ওর সঙ্গে সময় কাটাতে চাই। খাবার টেবিলে ওর সঙ্গে একটা সন্ধে কাটালেই প্রাণ ভরে যায়”।
ক্ষত থেকে আলোর জন্ম
জি বাংলার ‘সারেগামাপা’-র অনুষ্ঠানে সেলিব্রিটি বিচারক হিসেবে, যে সমস্ত ছেলেমেয়ে গাইলেন, তাদের আত্মবিশ্বাস দেখে রেখা হতবাক! ফস্ করে বলে বসলেন, “আজও কি এই আত্মবিশ্বাস আমার আছে?”
আর কোনও প্রতিযোগী যদি পরাজিত হয়ে ফিরে যায়, তাকে রেখা কী বলতে চাইবেন?” ‘হারতে না জানলে জেতা যায় না’ রুমির শব্দেরা রেখাকে সেটাই বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে। দুঃখ থেকে যে গান আসে, তার সঙ্গে অন্য গানের কোনও তুলনাই চলে না। গান আসলে একটা প্যাশন। রেখা সতর্ক করে আগামী প্রজন্মকে। বলেছিলেন, “অ্যাওয়ার্ড, প্রাইজ ইন সব চিজো মে জিতনা জাদা দিমাগ লগাওগে, আপ আপনে প্যাশন সে উতনিহি দূর চলে যাওগে।”
বেগম আখতার আর মাধুরী
বেগম আখতারের জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর গান রেকর্ড করবেন বলে ভেবেছেন রেখা। নিজের কণ্ঠকে মাধুরী দীক্ষিতের লিপে দেখতে ভালবাসেন আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত এই সঙ্গীতশিল্পী। ‘সারেগামাপা’-র পরের এপিসোডের জন্য শাড়ি বাছতে বাছতে, গয়না ঠিক করতে করতে রেখা বলছিলেন, “আমার আর মাধুরীর কম্বিনেশনটা লোকে নেয়। ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’-র ‘ঘাঘরা’, আর ‘দেড় ইশকিয়া’ ছবিতে মাধুরীর লিপে আমার গান খুবই জনপ্রিয় হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy