Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

দুই বাংলার নাটকে মাতল রামপুরহাট

মঞ্চের মিত আলো নিভে, জ্বলে উঠেছে হলের বাতি। বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে মঞ্চে এলেন ওপার বাংলার নাট্যকর্মী রওশন জান্নাত রুশনী। দর্শক তখনও শাহবাগ চত্বরের উত্তাল সময় আর, এক বীরাঙ্গনার গল্পে মশগুল। নাটক শেষ, তবুও এভাবেই বুঁদ রইল রামপুরহাট রক্তকরবী মঞ্চের দর্শক! ‘প্রবাহ নাট্যম’-এর উদ্যোগে, রবিবার ছিল তিন দিনের রামপুরহাট নাট্যমেলার শেষ দিন। সেই শেষ বেলায় বাংলাদেশের ঢাকার নাট্য দল ‘শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র’-র ১৯তম প্রযোজনা ‘বীরাঙ্গনার বয়ান’ দেখে এভাবেই এক হল দুই বাংলা।

অভিনয়ের পরে মঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে দাঁড়ালেন রওশন। ছবি: অনির্বাণ সেন

অভিনয়ের পরে মঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে দাঁড়ালেন রওশন। ছবি: অনির্বাণ সেন

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

মঞ্চের মিত আলো নিভে, জ্বলে উঠেছে হলের বাতি। বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে মঞ্চে এলেন ওপার বাংলার নাট্যকর্মী রওশন জান্নাত রুশনী। দর্শক তখনও শাহবাগ চত্বরের উত্তাল সময় আর, এক বীরাঙ্গনার গল্পে মশগুল। নাটক শেষ, তবুও এভাবেই বুঁদ রইল রামপুরহাট রক্তকরবী মঞ্চের দর্শক!

‘প্রবাহ নাট্যম’-এর উদ্যোগে, রবিবার ছিল তিন দিনের রামপুরহাট নাট্যমেলার শেষ দিন। সেই শেষ বেলায় বাংলাদেশের ঢাকার নাট্য দল ‘শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র’-র ১৯তম প্রযোজনা ‘বীরাঙ্গনার বয়ান’ দেখে এভাবেই এক হল দুই বাংলা।

২৬ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ডিসেম্বর এবারের নাট্যমেলায় এখনও পর্যন্ত সব থেকে বেশি চর্চিতও এই নাটকটি। রওশন জান্নাত রুশনীর একক অভিনয়, নাটকের বিষয় বা সংলাপের জন্য শহরের নানা মহলের কাছে প্রশংসিতও। এবং এই প্রথম শহরে কোনও আর্ন্তজাতিক স্তরের নাট্যদলের প্রযোজনা দেখল রামপুরহাট। নাটকে এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যুদ্ধপরাধী কাদের মোল্লার কথাও। কাহিনি উপস্থাপন করেছেন প্রধান ও একটিমাত্র চরিত্র ‘হালিমা’। এই চরিত্রটিই এককভাবে বলেছে গল্প।

বাংলাদেশের ৪০০টির বেশি গ্রুপ থিয়েটারের দলকে নিয়ে সম্মিলিত গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের অফিস সেক্রেটারি তথা ‘শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র’-র অধিকর্তা খোরসেদুল আলম বলেন, “শান্তিনিকেতন আর তারাপীঠ এই দুটি জায়গার নামের পাশাপাশি পূর্ণচন্দ্র দাস বাউলের নামেই বীরভূমকে জানতাম। এ বার নাট্য মেলায় এসে বুঝলাম, এখানে থিয়েটারের জন্যও আসা যায়। সেই তাগিদেই বীরভূমে আসা সার্থক।”

খোরসেদুল আলম নিজেই এ বার তাঁর দলের সঙ্গে নদীয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, উত্তর চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো বিভিন্ন জেলাতে নাট্য প্রযোজনা নিয়ে ঘুরবেন। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ থিয়েটার সংস্কৃতি নিয়ে তিনি তথ্যচিত্রও করছেন। এ বার কোথাও ‘বীরাঙ্গনার বয়ান’ উপস্থাপিত হবে, কোথাও বা ‘যামিনীর শেষ সংলাপ’। তাঁর কথায়, বীরভূমে একসময় ৪৪টি নাটকের দলের সন্ধান পাই। তার মধ্যে নাট্য চর্চা নিয়ে যারা এখনও এগিয়ে রয়েছেন, তাদের মধ্যে রামপুরহাটের ‘প্রবাহ নাট্যম’ অন্যতম। তিনি বলেন, “যখন জানতে পারি ‘প্রবাহ নাট্যম’ রামপুরহাট নাট্য মেলা করছেন, দল পরিচালক প্রিয়ব্রত প্রামাণিকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়।” জানা গেল, রামপুরহাটে তাঁদের ‘রাইফেল’ নাটকটি উপস্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু ওই নাটকের সঙ্গে যুক্ত চারজন কলাকুশলী নির্দিষ্ট সময়ে ভিসা পাননি।”

প্রিয়ব্রত প্রামাণিক বলেন, “৩৭ বছরে এবারে রামপুরহাট নাট্যমেলার ৪র্থ বর্ষ। এই ক’বছরে অনেক থিয়েটার অনুরাগী বেড়েছে শহরে। এটাই আমাদের সফলতা।” এ বারের নাট্যমেলায় সংস্থার নিজস্ব প্রযোজনা ছিল শিশুদের নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা অবলম্বনে ‘জুতো আবিস্কারের খেলা’। এছাড়া ছিল হাওড়ার ‘আলোমুখ’ সংস্থার নাটক ‘আন্তিগোনে এবং তারপর’, কাঁচরাপাড়ার ‘ফিনিক’ নাট্যসংস্থার নাটক ‘৮ই ডিসেম্বর’, কলকাতার ‘অর্ন্তমুখ’ সংস্থার নাটক ‘দেনা পাওনা’, এবং ব্যারাকপুরের নীহারিকা সংস্থার নাটক ‘বিষয়ের বিষ’। প্রতিটি প্রযোজনাই দর্শকদের কাছে প্রশংসা পেয়েছে।

শেষ দিনে উদ্যোক্তাদের তরফ থেকে একটি প্রশ্ন রাখা হয়। সঠিক উত্তর দাতাদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে একজনকে শ্রেষ্ঠ দর্শকের শিরোপা দেওয়া হয়। প্রতিটি নাটক শেষে দর্শকদের সঙ্গে কলাকুশলীদের মুখোমুখি পর্ব এ বারও নাট্যমেলার আলাদা মাত্রা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের নাট্য প্রযোজনা দেখে রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসনিক কার্যালয়ের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত রায় বলেন, “এমন নাট্য প্রযোজনা নিয়ে এক কথায় বলা সহজ নয়।” চিকিৎসক অভিজিৎ রায় বলেন, “আমি অভিভূত! আমরা যে ওপার বাংলা আর এপার বাংলা বলি, সেটা কিছু নয়।”

অন্য বিষয়গুলি:

apurba chattopadhyay rampurhat drama theatre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE