Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

আজ ‘কালবেলা’

বড় পর্দায় পাঁচ বছর আগে মুক্তি পাওয়া গৌতম ঘোষের সেই ছবিই এ বার দশ-পর্বের ধারাবাহিক। দূরদর্শনের ছোট পর্দায়। লিখছেন কৃশানু ভট্টাচার্য।মেসি-রোনাল্ডো-নেই মারদের পায়ের জাদুর মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন রাতজাগা বাঙালি দর্শকের অনলস চর্চায় এ বার হয়তো জায়গা করে নেবে দূরদর্শনের একটি চমক! বিশ্বকাপের তরতাজা বাজারের হাওয়া নিজেদের পালে টেনে আনতে যখন তত্‌পর সব চ্যানেল, তখন কলকাতা দূরদর্শনের এই মোক্ষম চালে মাত হয়ে যেতে পারেন দর্শকেরা।

‘কালবেলা’য় অনিমেষ আর মাধবীলতা

‘কালবেলা’য় অনিমেষ আর মাধবীলতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

মেসি-রোনাল্ডো-নেই মারদের পায়ের জাদুর মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন রাতজাগা বাঙালি দর্শকের অনলস চর্চায় এ বার হয়তো জায়গা করে নেবে দূরদর্শনের একটি চমক!

বিশ্বকাপের তরতাজা বাজারের হাওয়া নিজেদের পালে টেনে আনতে যখন তত্‌পর সব চ্যানেল, তখন কলকাতা দূরদর্শনের এই মোক্ষম চালে মাত হয়ে যেতে পারেন দর্শকেরা।

প্রায় পাঁচ বছর আগে বড় পর্দায় মুক্তি পাওয়া ‘কালবেলা’র পুনরাবির্ভাব ঘটতে চলেছে ডিডি বাংলায়। ধারাবাহিকের রঙিন মোড়কে। রাত ৮টার স্লটে আজ থেকে ওই চ্যানেলে শুরু হবে দশ পর্বের ধারাবাহিক।

“এমন মজার ঘটনা আগে ঘটেনি দূরদর্শনের ইতিহাসে,” মন্তব্য করলেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। দশ পর্বে সাহিত্য-নির্ভর ধারাবাহিক বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় প্রযোজনার জন্য একদা এগিয়ে এসেছিল প্রসার ভারতী। সমরেশ মজুমদারের ‘কালবেলা’ উপন্যাস অবলম্বনে কলকাতা দূরদর্শনের জন্য দশ-পর্বের ধারাবাহিকটি তৈরি করেছিলেন গৌতম। “কিন্তু কী থেকে যে কী হয়ে গেল! ধারাবাহিক বদলে গেল ছায়াছবিতে।” দূরভাষে শোনা গেল তাঁর অমলিন হাসি।

ওই ধারাবাহিকের গুণমান বিচারের জন্য একটি কমিটি গড়েছিল দূরদর্শন। ম্যাক্স মুলার ভবনে মাধবী মুখোপাধ্যায়-শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়-হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়-মৃণাল সেন-শানু লাহিড়ী সমৃদ্ধ সেই কমিটি গোটা ধারাবাহিকটি দেখার পরে সিনেমা হিসেবে ‘কালবেলা’কে বাজারে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। “সাধুবাদ দিই কলকাতা দূরদর্শনের তখনকার ডিরেক্টর তপন দাশকে। কমিটির প্রস্তাব তিনি মেনে নেওয়ায় সিনেমাহলে জমিয়ে চলেছিল ‘কালবেলা’। প্রচুর জনপ্রিয়ও হয়েছিল,” কী করে গৌতম ভোলেন এমন অদ্ভুত ব্যাপার?

“কথা ছিল টিভি-তে প্রথম দেখানোর পরে কাটছাঁট করে সিনেমা হলে রিলিজ করবে ‘কালবেলা’। কিন্তু উল্টো হওয়ায় আমার অস্বস্তি হচ্ছিল,” জানালেন ‘কালবেলা’র লেখক সমরেশ মজুমদার। কারণ তাঁর মতে সিনেমা আর ধারাবাহিক দু’টো আলাদা মিডিয়া। তাঁর সন্দেহ ছিল, ধারাবাহিকের জন্য লেখা চিত্রনাট্য সিনেমায় কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে। “তবে সিনেমাহলে ‘কালবেলা’ দেখার সময় আমার কোনও অসুবিধা হয়নি”, জানালেন লেখক।

কিন্তু ছবি তো আড়াই ঘণ্টার। দশ পর্বে সিরিয়াল মানেই বাড়তি প্রায় দেড় ঘণ্টা। এই পর্ব কী ভাবে পরিচালক দেখাবেন, তা দেখতেই মুখিয়ে আছেন তিনি।

‘কালবেলা’য় ত্রিদিবের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রুদ্রনীল ঘোষ। দূরদর্শনে গোটা ধারাবাহিকটি দেখার জন্য উন্মুখ তিনিও। “গ্রাম-গঞ্জের যে-সব দর্শক সিনেমাহলে যেতে পারেন না, তাঁরাও এই বেলা দেখে নিতে পারবেন পশ্চিমবঙ্গে নকশাল আন্দোলনের পটভূমিকায় আর্থ-সামাজিক ইতিহাসের এই প্রামাণ্য দলিল,” মন্তব্য করলেন রুদ্র।

আসলে ‘কালবেলা’ মূলত প্রেমের গল্প। উপন্যাসের নায়ক অনিমেষের যৌবনের স্মৃতিচারণে ফিরে আসে ফেলে আসা দিন। “এই ছবির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমার যৌবনকাল,” স্মৃতিচারণে অক্লান্ত গৌতমও।

ষাটের শেষ, সত্তর দশকের শুরু। পরিচালক গৌতম ঘোষের কলেজ জীবন। ছবি হিসেবে ‘কালবেলা’ জনপ্রিয় হওয়ার পিছনে এটিও একটি কারণ। “সেই কফি হাউস, কলেজ স্ট্রিট, আমার কলেজ জীবন। রোম্যান্টিক সময়। চিঠি লেখার যুগ। এক দিকে নকশাল আন্দোলন, খুনখারাপির এক রাজনীতি। যাতে জড়িয়ে পড়ে স্কুল-কলেজের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরাও। ও-দিকে বাংলাদেশ যুদ্ধ, ফ্রান্সে ছাত্র ধর্মঘট। উত্তাল সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে জমে ওঠে ‘কালবেলা’র নায়ক-নায়িকা অনিমেষ-মাধবীলতার প্রেম।

ষাট-সত্তর দশকের সেই সব ভয়ঙ্কর দিন দেখেননি পাওলি-রুদ্র-পরমব্রতের মতো ‘কালবেলা’র নতুন শিল্পীরা। “কথায়-কথায় ওদের শোনাতাম আমাদের কলেজ জীবনের গল্প।” গৌতমের কথায়, সেই সব দিনের প্রেমে প্রাধান্য রোম্যান্টিকতা, মূল্যবোধ আর ‘কমিটমেন্ট’-এর মতো শব্দ। পরিচালকের গল্প শুনে শুনে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন পরম-পাওলিরা। জীবন আর সিনেমা মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল।

তাঁর জীবনের প্রথম ছবি এ বার ধারাবাহিক হিসেবে ফের দূরদর্শনের পর্দায় শুনেই হইহই করে উঠলেন ‘মাধবীলতা’র ভূমিকায় দর্শকদের মুগ্ধ করা পাওলি দাম।

“ছবি রিলিজ করার পরে যাঁরা দেখতে পাননি, এখন তাঁরাও পাবেন, আমি খুব খুশি,” ‘নাটকের মতো’ ছবির শু্যটিংয়ের অবসরে তাঁর মন্তব্য। বড় পর্দায় জীবনের প্রথম ছবির সাফল্য যেন এখনও ছুঁয়ে আছে পাওলিকে।

“আমি তখন একেবারেই আনকোরা। মাধবীলতার মতো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করার ডাক পেয়ে আমি তো প্রচণ্ড নার্ভাস।” গৌতম ঘোষের বাড়ির বারান্দা দিয়ে হাঁটার সময়ে পাওলির মনে হচ্ছিল যেন শেষই হচ্ছে না। “কারণ আমি বিশ্বাস করিনি যে গৌতমদার মতো এত বড় মাপের পরিচালকের ছবিতে আমি কাজ করব।”

ছোট পর্দায় এখন বিশ্বকাপের প্রচার এবং প্রভাব তুঙ্গে। এই অবস্থায় ক’জন দর্শক ‘কালবেলা’ দেখবেন, সন্দেহ প্রকাশ করেন সমরেশ। তবে সুড়ঙ্গের শেষে আলোর ঝলকানিও দেখছেন তিনি। জানালেন, সেই ১৯৮৪ সালের পরে দূরদর্শনে ফের গৌতম ঘোষের পরিচালনায় আরও একটি ধারাবাহিক সম্প্রচারিত হবে, এটি যদি দূরদর্শন ঠিক ভাবে প্রচার করতে পারে, তা হলে কালবেলা জমে উঠবে।

কী বলছেন গৌতম? বিশ্বকাপের বাজারেও ১৬-২৭ জুন রাত ৮টা বাজলেই চোখ রাখুন ডিডি বাংলায়?

“অবশ্যই। কারণ রোম্যান্টিকতা, প্রেম এ সবই চিরন্তন। আর সময় যেন স্মৃতিমালা। শিক্ষা নিতে পারি কেবল অতীত থেকে। ভাল লাগছে সময়ের প্রেক্ষাপটে চিরন্তন প্রেমের সেই দলিল আবারও দেখানো হবে”, নিরাশার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিলেন ‘অন্তর্জলি যাত্রা’র যশস্বী পরিচালক।

আনাচে কানাচে

‘চার’য়ের হাসির বাঁধ ভেঙেছে: কোয়েল-শাশ্বত। ছবি: কৌশিক সরকার।

মস্ৎ মস্ৎ দো নয়ন : টোপিওয়ালি সোনাক্ষী সিংহ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE